টাংঙ্গুয়ার হাওরে এবারের শীত মৌসুমে পর্যটকদের উপস্থিতি নেই

0
150

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভুমি পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থানম টাংঙ্গুয়ার হাওরে এবারের শীত মৌসুমে পর্যটকদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। দেশের চলমান রাজৈনতিক অস্থিরতা ও টানা অবরোধের কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে পারেছেন না। প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই তাহিরপুরের টাংঙ্গুয়া হাওরে অতিথি পাখির কলকাকলি, ডানা ঝাপটিয়ে অবাধ বিচরণ ও তাদের মিলনমেলা দেখার জন্য পাখি প্রেমীরা দেশের রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট সহ দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের লোকজন প্রতিদিনই এ মৌসুমে আগমন করত টাংঙ্গুয়ার হাওরে। আগত অতিথি পাখির কখনো জলকেলি, কখনো খুনসুটিতে কিংবা কখনো খাদ্যের সন্ধানে এক বিল থেকে অন্য বিলে, এক হাওর থেকে আর এক হাওরে গলার স্বর তুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে উড়ার বিষয়টি ছিল পর্যটকদের জন্য এক মনভোলানো অপরূপ দৃশ্য। এ বছর এ দৃশ্য যেন দৃশ্য হয়েই রইল। কেউ তা অবলোকন করতে আসছে না।
জানা যায়, প্রচুর ঠান্ডা ও শৈত প্রবাহের কবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে দুই তিন মাসের জন্য অষ্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়া, কানাডা, নেপাল, ভুটান সহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীত মৌসুমের শুরুতেই অতিথি পাখি একটু উষ্ণতা ও খাদ্যের সন্ধানে চলে আসে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংঙ্গুয়া হাওর সহ আসপাশের শনি, মাটিয়ান, কানামিয়া হাওরে ও বিভিন্ন জলাভুমিতে। এ মৌসুমে হাওর পাড়ের শত-শত গ্রামের লোকজনের ঘুম ভাঙ্গে অতিথি পাখির কলকাকলি ও র্পটকদের আগমনী বার্তায়। অপরদিকে অতিথি পাখির সাথে আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাখি বক, পানকৌড়ি, গাংচিল, মাচরাঙা, সারস যোগ হওয়ায় হাওরাঞ্চলের দৃষ্টি নন্দন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তা দেখে যে কোন বয়সী পর্যটকের মন আকৃষ্ট হবে। স্থানীয় পরিসংখ্যানে পরিচিত ছয় কুড়ি কান্দা ও নয় কুড়ি বিলের এ বিশাল জলরাশি ও স্থলভূমি টাক্সগুয়ার হাওর। জেলার উত্তর পশ্চিমকোনে সীমান্ত ঘেষা অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে টাক্সগুয়ার হাওরের অবস্থান। দূর থেকে মনে হয় ভারতের মেঘালয়ের সবুজঘেরা উচু-নিচু পাহাড় যেন এক অলৌকিক দৃশ্যে ছায়া দিয়ে ঢেকে রেখেছে টাক্সগুয়ার হাওরকে। তাই প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত পর্যটক কষ্ট করে দূর্গম টাংঙ্গুয়ার হাওরে এসে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে তাদের সব কষ্ট ভুলে যেত। কিন্তু এ বছর সকল কিছুর পরও রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকদের আগমন ঘটছে না বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা। টাংঙ্গুয়া হাওরপারের গ্রাম জয়পুর। সে গ্রামের শিক্ষক উজ্জল মিয়া তিনি বলেন, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে পাখি দেখতে টাংঙ্গুয়া হাওরে অনেক পর্যটক আসেন। কিন্তু এ বছর পর্যটকদের আগমন চোখে পড়ছে না। টাংঙ্গুয়ার হাওর রক্ষনাবেক্ষনে কাজ করে উন্নয়ন সংস্থা আইইউসিএন এর টিম লিডার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এ বছর শীতের শুরু থেকেই নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি টাংঙ্গুয়ার হাওরে ব্যাপক হারে আসছে এ বছর হাওরগুলোতে অতিথি পাখির আগমন অতীতের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। স¤প্রতি দু’চারদিন ধরে শীত ঝেঁকে বসেছে এ থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখির আগমন আরো অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। শনির হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ স¤পাদক নুরুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, রাতের বেলায় টাংঙ্গুয়া হাওরে এক শ্রেনীর অসাধু মৎস্য শিকারী হেজাক লাইট ব্যবহার করে মৎস্য আহরণ করে, দূর থেকে এর দৃশ্য দেখে মনে হয় এটা কোন হাওর নয় এটা যেন বহি:বিশ্বের ম্যাগাসিটি। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, টাংঙ্গুয়ার হাওরে অতীতে পর্যটকরা শীত মৌসুমে আসত এবং আবাসিকের জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হতো। কিন্তু এ বছর তা নেই।
অন্যদিকে অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারনে উপজেলার অফিস আদালত,ব্যাংক-বীমা ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনস্রাতে নেই বললেই চলে। যার ফলে ব্যাবসায়ী ও ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানের মুখ দেখছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্মকর্তারা।