নাস্তিক্যবাদী সরকারকে জনগন প্রত্যাখান করেছে

0
122

হাটহাজারী সংবাদদাতা,নিউজচিটাগাং২৪.কম ।
হাটহাজারী ওলামা পরিষদ আয়োজিত সম্বর্ধনা সভায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, babo nogore 8.7.13 হেফাজতে ইসলাম কখনো ক্ষমতার অংশ হতে চায় না। আমরা কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে ও নামাতেও চাই না। হক্কানী উলামায়ে কেরামকে আল্লাহ যে সম্মান দিয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর গদির চেয়েও কোটি গুণ বেশী মর্যাদার। হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্তিমিত হয়ে যায়নি, বরং আরো জোরদার হয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সরাসরি কখনো কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলবে না। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ ও ঈমান-আক্বিদা বিরোধী অপতৎপরতা বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম কখনো আপোষ করবে না। এতে যদি কারো মনে জ্বালা ধরে যায়, তার জন্য আমরা দায়ী নই। বরং যারাই নাস্তিক্যবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের পক্ষাবলম্বন করবে, তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবে, তারাই হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতায় জড়িত না থাকলে কোন দলেরই হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয় নেই।
গতকাল (৮ জুলাই) সোমবার হাটহাজারী ওলামা পরিষদের উদ্যোগে ডাক বাংলো ময়দানে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে জামিন লাভ ও চিকিৎসা শেষে ফিরে আসায় এক গণসম্বর্ধনা দেওয়া হয়। হাটহাজারী পার্বতী স্কুল মাঠে সম্বর্ধনা সভা আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মাঠ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে ডাক বাংলো ময়দানে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল ২টায় সম্বর্ধনার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। বাদ যোহর ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তৌহিদী জনতা ব্যানার পেস্টুন ও মিছিল নিয়ে দলে দলে সভাস্থলে জমায়েত হতে থাকে। ২টার আগেই ডাক বাংলো ময়দান ও সম্মুখস্থ চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক কানায় কানায় ভরপুর হয়ে যায়। এ সময় অনেককে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মার্কেটসহ বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান করতেও দেখা গেছে। এ সময় সড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।
হাটহাজারী ওলামা পরিষদের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী পৌরসভার সভাপতি মাওলানা মীর ইদরীস ও মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির,মাওলানা মাহমুদুল হাসান এর পরিচালনায় বেলা ২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সম্বর্ধনা সভা শুরু হয়। সংবর্ধনা সভায় হেফাজতের মহাসচিব বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠান চত্ত্বরে উপস্থিত হন।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সভাপতি এবং দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা হাফেজ শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্বর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা কাতেব সুলায়মান আরমান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতী জসীম উদ্দীন, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস, মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা ইয়াহ্ইয়া, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা ফোরকার আহমদ, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ, মুফতী হারুন ইজহার, মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, নেজাম ইসলাম নেতা আব্দুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ নদভী, মাওলানা জাফর আহমদ, মাস্টার মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা জালাল উদ্দীন, এসএম ফারুক, মাওলানা মাহমুদ হাসান, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা সফি উল্লাহ, মাস্টার মুহাম্মদ শফিউল আলম, মাওলানা জোনায়েদ, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা কামরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম ও রাশেদ প্রমুখ।
সভায় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, আমার মুক্তি ও সুস্থতার জন্য আপনাদের সকলের দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সকলের জন্য বিশেষ দোয়া করছি। আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত না থাকলে, যেভাবে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আমাকে অন্যায়ভাবে আসামী করে গ্রেফতার করার পর লাগাতার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছিল, তাতে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আমার ফিরে আসার সৌভাগ্য হয়তো জীবনে হতো না। তবে এত কিছুর মধ্যেও আমি মহান আল্লাহর উপর আস্থা-ভরসা ও মনোবল হারাইনি। ইসলামের জন্য নবী-রাসূল ও আমাদের পূর্বসুরী উলামায়ে কেরাম যে সীমাহীন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার কাছে আমার এই ত্যাগ কিছুই না। আল্লাহ-রাসূল, ঈমান-আক্বীদা ও ইসলামের ইজ্জত রক্ষার জন্য আমাদেরকে আরো বেশী ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের চলমান নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের বহুমুখী অর্জন রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি শক্তির কাছে আমরা জোরালো ভাবে এই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে, এদেশে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের অবমাননা, পবিত্র কুরআনের অবমাননা, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অপতৎপরতা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তাছাড়া জনগণের সামনে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, শত উস্কানী, হামলা-মামলা-গ্রেফতার ও হয়রানী করলেও ওলামায়ে কেরাম ও ক্বওমী মাদ্রাসাসমূহ প্রতিহিংসা পরয়ণতা ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন না। তাছাড়া নাস্তিক্যবাদের পক্ষাবলম্বনকারীরাও স্পষ্ট বুঝতে পারছেন যে, জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ৫ ও ৬ মে’র চরম জুলুম-অত্যাচারের পরও এদেশের উলামায়ে কেরাম কোনরূপ প্রতিশোধ ও সহিংসতায় না জড়িয়ে চরম ধৈর্য্যধারণ করে এর বিচারের জন্য মহান আল্লাহর দরবারেই ফরিয়াদ জানিয়েছে। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানও আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী জোরালো হয়েছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের চলমান ঈমান, দেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার এই আন্দোলনে যুবক ভাইদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। এবং এ কাজে সচেতন নারীদেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মদীনার সনদে দেশ চলবে। আমি বলি, হেফাজতের ১৩ দফা মদীনার সনদের বাইরে নয়। সুতরাং মদীনার সনদে দেশ চালাতে হলে ১৩ দফা মানতেই হবে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী তার বক্তব্যে ৫ ও ৬ মে মৃত্যুবরণকারী সকল শহীদ এবং হাটহাজারীতে যে ৬ জন শহীদ হয়েছেন, তাদের মাগফিরাত কামনা করেন। আর যারা আহত হয়েছে, তাদের সুস্থতা কামনা করছি। তিনি হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য মিডিয়াকর্মীদেরকেও ধন্যবাদ জানান।
সম্বধনা সভায় জুনায়েদ বাবুনগরী নাস্তিক ধর্মদ্রোহী রাসূল (সা.)কে কটূক্তিকারি ব্লগারদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান, ধর্ম অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে আইন পাস, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থার নীতি ফিরিয়ে আনাসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। হেফাজতের নেতা-কর্মী ও আলেম উলামাদের ওপর হয়রানি বন্ধ, দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত আলেম উলামাদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানান। একই সাথে নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্ম অবমানকারিদের পক্ষ নেয়া ও সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বিরত থেকে এদেশের গণমানুষের অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সরকারের প্রতি আবরো অনুরোধ জানান।
সম্বর্ধনা সভায় হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আগে রাসূল (সা.)এর প্রতি কটূক্তিসহ ধর্ম অবমানার কারণে চিহ্নিত নাস্তিকব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার আগে ১লা এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছিল মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ ও সুব্রত অধিকারি নামে আরো তিনজনকে। সরকার ইতিমধ্যেই এদের সবাইকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছে। গত ২৭ জুন আসিফ মহিউদ্দিনকে জামিন দেয়া হয়। অথচ একইদিন একই আদালতে প্রধানমন্ত্রীকে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের শিক্ষক হাফিজুর রহমান রানাকে ৭ বছর কারাদন্ড প্রদান করে। গত ১২ মে অন্য তিন ব্লগারকে জামিন দেয়া হয়। একই আদালতে একই দিন এই ঘটনায় আমরা হতবাক। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে এই সরকারের আসল চরিত্র আবারো জাতির কাছে ফুটে উঠছে বলে আমরা মনে করছি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের ৭ বছরের কারাদ- হলেও মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় রাসূল অবমাননাকারীদেরকে জামিনে মুক্তি দিয়ে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এদেশের ঈমানদার ধর্মপ্রাণ মানুষের দাবি ও অনুভূতির বিপরীতে নাস্তিক ও রাসূল (সা.)কে কটুক্তিকারিদের পক্ষে সরকারের পরিস্কার অবস্থান আমরা এখনো লক্ষ্য করছি।
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম বলেন, আমরা আগেও বলেছি, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে তাদের ঈমান আকীদার বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে এবং নাস্তিক ব্লগারসহ ধর্মদ্রোহীদের পক্ষে এভাবে অবস্থান নিয়ে কেউ ক্ষমতায় যেমন টিকে থাকতে পারবে না, তেমনি কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারবে না। এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা, আলেম উলামা এখন দল-মত ও ছোটখাট এখতেলাফ (মতভেদ) ভুলে গিয়ে ১৩ দফা ঈমানী দাবিতে ঐকবদ্ধ। দিনের পর দিন এই ঐক্য সিসাঢালা প্রাচীরের মতো রুপ নিবে ইনশাল্লাহ। মুসলমানদের ঈমানী দৌলত ও হিম্মতের কাছে কোন শক্তিই টিকে থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি আবারো পরিস্কারভাবে বলতে চাই, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি এদেশের অধিকাংশ মানুষের দাবি। এ দাবি গণদাবি। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করার পরিণাম শুভ হবে না। যারা নাস্তিক ব্লগার, রাসূল (সা.)কে কটূক্তিকারি ধর্মদ্রোহীদের পক্ষ নিচ্ছেন, তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি।