তথ্য গোপন করে হাইকোর্ট থেকে জামিন !

0
72

ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আসামির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আসামী সাব্বির চৌধুরী নগরীর চকবাজার থানায় দায়ের হওয়া এক নারী নির্যাতন মামলায় এতথ্য গোপন করে জামিন নেন বলে অভিযোড় উঠেছে।

গত ১৮ মে মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহেনূর এর আদালতের নজরে আনলে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে আসামির আইনজীবী অপেশাধারী কাজ করেছেন বলে পর্যকেক্ষণে উল্লেখ করেছেন।

মামলর নথিতে দেখা গেছে, ওই মামলায় ১ মে নগরের চান্দগাঁও খাজারোডের এনএমসি বাড়ির নুরুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাব্বির চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন তাঁকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর হাকিম আদালতের জামিন নাকচ আদেশে অসন্তুষ্ট হয়ে ৫ মে মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি মিস মামলা ১৩৯৮/১৫ মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় পৃথক এক দরখাস্তে আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেনদ করা হয়। কিন্তু মহানগর দায়রা জজ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলেও মিস মামলাটি এডমিট (আমল) করেন।

অন্তর্বর্তকালীন জামিন আদেশ নামঞ্জুর করা বিষয়ে দায়রা আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, মামলার মূলনথি নিম্ন আদালতে। আসামিপক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নাকচের সার্টিফাইড কপি ছাড়া অন্য কোন সার্টিফাইড কপি দাখিল করেননি। মূলনথি ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শ্রবণ সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। মিস মামলা আমলে নেয়া হলো। নিম্ন আদালতের মূলনথি তলব দেয়া হোক। মামলার শুনানির তারিখ ১৮ মে ধার্য করা হলো।
মহানগর দায়রা জজ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার আদেশে অসন্তুষ্ট হয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা দায়ের করার বিষয় গোপন রেখে এরপর আসামি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। ১১ মে ফৌজদারি মিস ১৫৫৫১/২০১৫ মূলে উচ্চ আদালত থেকে ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন লাভ করেন। উচ্চ আদালত সিএমএম আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে বেইল বন্ড নির্ধারণ করার নির্দেশ দেন।

এদিকে, ১৭ মে আসামি উচ্চ আদালতের আদেশমূলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত ৫ হাজার টাকার বন্ডে আসামির জামিন দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দীন চৌধুরী জানান, সিএমএম আদালতে আসা হাইকোর্টের জামিন আদেশের কপিতে মহানগর দায়রা আদালতের ফৌজদারি মিস মামলার নম্বর বা কথা উল্লেখ নেই । এতেও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় দায়রা আদালতের ফৌজদারি মিস মামলার কথা গোপন রেখে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধেই আসামি উচ্চ আদালতে গেছেন। একই আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা আদালতে মামলা পেন্ডিং থাকাবস্থায় আবার একই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন আসামির আইনজীবী।

মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি মিস মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় ওই মামলার কথা উচ্চ আদালতে গোপন করার অভিযোগে মহানগর দায়রা আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেন বাদিপক্ষ। বাদিপক্ষের দরখাস্তে তথ্যগোপন করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতকে অবহিত করার আবেদন জানানো হয়।

তথ্য গোপন করার বিষয়টি উচ্চ আদালতকে অবহিত করতে মহানগর দায়রা জজকে শুনানিতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, ।

অপরদিকে, মহানগর দায়রা জজ আদালতে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মিস ১৩৯৮/২০১৫ মামলার শুনানির দিন আদালতে মামলাটি আসামিপক্ষে নট প্রেস (শুনানি না করা) করার আবেদন জানান।

রাষ্ট্রপক্ষ এসময় বলেন, ‘ফৌজদারি মিস মামলাটি রেগুলার শুনানির জন্য দিন ধার্য হওয়া সত্ত্বেও আসামিরা তথ্যগোপন করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেছেন। যা আইনজীবীর পেশাগত খারাপ নজির।’

মহানগর দায়রা জজ আদালত আদেশের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘অত্র আদালতে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মিস মামলায় অন্তর্বর্তকালীন জামিন নামঞ্জুর আদেশটি মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশ ছিল না আবার এ বিষয়ে শুনানিও হয়নি। তাই পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আজ (১৮) মে দিন ধার্য করা হয়। মামলাটি চলমান থাকাবস্থায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মাননীয় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। যা নিশ্চয়ই একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর অপেশাপেশাদারিত্বমূলক দৃষ্টান্ত। কিন্তু যেহেতু আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেছেন এ আদেশ আমাদের মানতে হবে।’

এদিকে, বাদিপক্ষের আইনজীবী এ তথ্যগোপন করার বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করার মৌখিক আবেদন জানালে, দায়রা আদালত বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে আপনারা (বাদিপক্ষের আইনজীবী) মাননীয় উচ্চ আদালতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মামলায় বলতে পারেন। ’

বাদিপক্ষে নিযুক্ত এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘মহানগর দায়রা জজ আদালতের মিস মামলার তথ্য গোপন করে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এ ঘটনা আমার পেশাগত জীবনের ৩০ বছরেও দেখিনি। এ ব্যাপারে আমরা উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে দরখাস্ত দাখিল করবো।’

তথ্য গোপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসামির আইনজীবী শিপন কুমার দে বলেন, ‘তারা নিম্ন ও উচ্চ আদালতে কোনো তথ্য গোপন করেননি। একটি পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মহানগর দায়রা জজের আদেশের পর্যবেক্ষণের কয়েকটি অংশের সঙ্গে একমত নয়। তবে আদালতের আদেশকে সম্মান জানান তারা।’
]