তাহলে কি মনজুর আলম?

0
195

সাবেক মেয়র মনজুর আলম হঠাৎ আলোচনায়। প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে পুনরায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছেন এ বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামে এখন চলছে সরগরম আলোচনা। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাইছে সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এ আসনটি আওয়ামী লীগেরই থাকবে। যদিও মনজুর আলম কাগজে কলমে বিএনপির লোক হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। বিগত একটি নির্বাচনে বিএনপির সাপোর্ট নিয়ে তিনি ৯৫ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে মেয়র হয়েছিলেন। তারপরও মহিউদ্দিন পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্ষুন্ন হয়নি। এমনকি বিএনপির সাইনবোর্ড থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে তাকে নামাতে পারেনি বিএনপি। তাই বিএনপি এখন তার উপর ক্ষুব্ধ।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে আলাপকালে সাবেক মেয়র মনজুর আলম বলেন, আমি সবসময় আওয়ামী লীগের ছিলাম এবং আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে আমি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে দীর্ঘ ২২ বছর সম্পৃক্ত ছিলাম। ১৭ বছর কাউন্সিলর ছিলাম আওয়ামী লীগার হিসেবে। আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে যতদিন ছিলাম সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আবার আমাকে মেয়র নির্বাচনের সুযোগ দেন তাহলে আমি আবারও প্রার্থী হব। আমি যতদিন মেয়র ছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাই তিনি আবার সুযোগ দিলে আমি মেয়র নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।

সাবেক মেয়র মনজুর আলমের একটি সততার ইমেজ আছে। বিগত ২০১০ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রামের দাপুটে নেতা হ্যাটট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রয় ৯৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি। এ সময় বিষয়টি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারানো ছিল কঠিন ব্যাপার। মনজুর আলমকে সিটি করপোরেশনে পুরোটা সেল্টার দিয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাই তাদের গুরু-শিষ্য বলে অভিহিত করতেন সবাই। সেই মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে তাক লাগানো এম মনজুর আলম আবারও ২০২০ সালে প্রার্থী হচ্ছেন এমন কথা এখন আলোচনার বিষয়বস্তু।

ব্যবধান প্রায় এক দশকের হলেও মনজুর আলম এরই মধ্যে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান মহিউদ্দিন চৌধুরীর এ শীষ মনজুর। তার পেছনে মহিউদ্দিন পরিবারের সমর্থন রয়েছে বলে বাজারে গুঞ্জন আছে। কারণ মহিউদ্দিন চৌধুরীকে তিনি হারালেও মেয়র পদ চালিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শেই।

এম মনজুর আলমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন না, আর বিএনপিও এখন তাকে নেবেন না। তার বিএনপিতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি এখন আওয়ামী লীগের ডাকের অপেক্ষায় আছেন। আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন। অন্যথায় নয়।

উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে হেরেছিলেন সেই সময়কার মনজুর আলম। সেবার ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটবর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। বিএনপির সমর্থন নিলেও ভোটের দিন দুপুরে বিএনপি ভোট থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ায় মনঃক্ষুণœ তিন। তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি যাই হোক মাটি কামড়ে ভোটের মাঠে পড়ে থাকতে। সেই ক্ষোভ থেকে বিএনপি এবং রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

মেয়র নির্বাচনে হারার পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে সিটি নির্বাচনে মনজুর মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তার কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন মনজুর চট্টগ্রামে অন্যতম সফল মেয়র। তার একটি ইতিবাচক ইমেজ রয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল এড়াতে এবার তাকেই বেছে নেবে বলে অনেকের বিশ্বাস।

আগামী চসিক নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী হতে মনজুর আলমসহ ১৩ জন ঢাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এদের মধ্যে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও প্রার্থী হতে চান। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড কাকে বেছে নেন এটাই এখন দেখার বিষয়।