দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপাকে

0
68

ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীদের ৩টি সংগঠনের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে প্রতিযোগিতার জন্য কোরবানির পশুর চামড়া বেশি দামে কিনতে হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় আছে ব্যবসায়ীরা। মওসুমি ব্যবসায়ী ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে কাঁচা চামড়ার ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। সীমান্তের ওপারে দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় ভারতে বিপুল পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া পাচাররোধে বিজিবি’র পক্ষ থেকে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছেন। গত ৩রা অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ৩টি সংগঠন কোরবানিতে জবাই হওয়া পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেন। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৬০-৭০ টাকা।
এছাড়া খাসি ৩০-৪০ টাকা, বকরি ২০-৩০ টাকা এবং মহিষ ৪০-৪৫ টাকা। ট্যানারি মালিকদের দু’টি সংগঠন বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়াপণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএলএলএফইএ) ও বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এ মূল্য নির্ধারণ করেন। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারতীয় চামড়ার কারবারিরা প্রতিবারের মতো সময়-সুযোগ বুঝে এ দেশীয় অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়ার অধিক মূল্য দিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া মওসুমি ব্যবসায়ী ও দালালচক্রের কারণে টার্গেট অনুযায়ী চামড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে কোরবানি পশুর চামড়া কিনতে হয়েছে। খুলনা জেলা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ঢালী জানান, প্রতি বছর খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা মাদরাসাগুলো থেকে ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। তবে এ বছর ব্যবসায়ীরা চামড়া তুলনামূলকভাবে কম পেয়েছেন। ভারতে দাম বেশী থাকায় চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চামড়ার মূল্য কম থাকায় ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি না করা হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদের পর গত মঙ্গলবার ছিল প্রথম হাট।
কিন্তু এদিন খুব অল্প সংখ্যক চামড়া হাটে ওঠে। মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, চামড়ার আমদানি একেবারেই কম। চামড়ার ক্রেতা আছে, কিন্তু বিক্রেতা নেই। রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, এ বছর ট্যানারি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় পর্যায়ে চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা অন্যায্য। এই দামে চামড়া বিক্রি করলে ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ক্রেতাদের পুঁজি বাঁচবে না।
এ কারণে অনেকেই ভারতে চামড়া পাচারে উৎসাহী হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়াপণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএলএলএফইএ) ভাইস-চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য অনুযায়ী চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি পেলে দেশেও চামড়ার মূল্য বাড়ানো হবে। যশোরে বিজিবি’র ২৬ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভারতে চামড়া পাচাররোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। যতদিন চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকবে, ততদিন এই সতর্কতা জারি থাকবে। খুলনায় বিজিবি’র ২৩ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রহিম বলেন, ‘চামড়া পাচারের জন্য সবচেয়ে অনুকূল সীমান্ত যশোরের পুটখালী পুরোপুরি সিল করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইছামতী নদী পারাপারে যেসব নৌকা রয়েছে তা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পানিতে নামবে না।’