দারুচিনি

0
132

বাংলা নামঃ দারুচিনি
ইংরেজী নামঃ Cinnamon
বৈজ্ঞানিক নামঃ Cinnamomum zeylanicum BL
পরিবারঃ Lauraceae
দারুচিনি
দারুচিনি একটি প্রধাণ ও গুরুত্বপূর্ণ মসলা। এর প্রতিটি অঙ্গ, বাকল, পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল ও শেকড় কোন না কোন কাজে লাগে। এর বাকল উত্তেজক, ক্ষুধাবর্ধক এবং বমি নিবারক। মিষ্টি ও মদ সুগন্ধি করতে, ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাঁতের মাজন তৈরিতে, চকলেট কারখানাতে এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাতার তেল, সুগন্ধি তৈরি করতে এবং কৃত্রিম ভ্যানিলা তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
@ জাত @
জাত
স্থানীয় জাত ছাড়া তেমন কোন উন্নত জাত নেই।
দারুচিনি সাধারণতঃ দু’ধরনের হয়ে থাকেঃ
সিলোন বা মিষ্টিকাঠ দারুচিনি এবং চাইনিজ বা ঝুটা দারচিনি। সিলোন বা মিষ্টিকাঠ দারুচিনি সুগন্ধি, মিষ্টিযুক্ত, কম তীব্র গন্ধ, ছাল কালচে খয়েরী রঙের, পাতলা এবং মসৃণ। অন্যদিকে চাইনিজ বা ঝুটা দারুচিনি কম সুগন্ধি, মিষ্টিযুক্ত বেশী তীব্র গন্ধ, ছাল লালচে বাদামী রঙের, পুরু এবং খসখসে।
@ জলবায়ু ও মাটি @
জলবায়ু ও মাটি
দারুচিনি বিভিন্ন ধরনের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু সহ্য করতে পারে। তবে উত্তম নিকাশযুক্ত বেলে দোঁআশ মাটি দারুচিনি চাষের জন্যে ভাল। দারুচিনি গাছ একটানা খরা স
@ চারা তৈরি @
চারা তৈরি
দারুচিনির চারা সাধারণতঃ বীজ থেকে হয়ে থাকে,তবে কাটিং বা গুটিকলম করেও চারা করা যায়। দারুচিনি গাছে জানুয়ারী মাসে ফুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকতে শুরু করে।
@ পরিচর্যা @
পরিচর্যা
মধ্যম আকারের ফল গাছের ন্যায় চারা রোপন ও পরবর্তী পরিচর্যা গ্রহন করা যেতে পারে।
@ রোগ বালাই @
রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাঃ
দারুচিনির কয়েকটি মূখ্য রোগ ও পোকামাকড়ের নাম এখানে দেয়া হলো।

ছত্রাক জনিত রোগ
(১) গোলাপী রোগ ( Pink disease-Corticum javanicum):- আক্রান্ত অংশে গোলাপী সাদা আস্তরণ দেখা যায় এবং ছাল নষ্ট হয়ে যায় ।
(২) চারা ধ্বসা (Diplodia Sp.)
(৩) মরচে ধরা রোগ (Uroecium nothoprgiae)
(৪) পাতায় দাগ (Gloesporium sp.)
(৫) ধূসর ধ্বসা (Pestalotiopsis palmorum):- ধূসর বাদামী রঙের অনিয়মিত দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে বড় হয়ে পাতার ক্ষতি করে।
@ পোকা-মাকড় @
পোকা-মাকড়
(১) পাতার ত্বক ভেদকারী পোকা(Phyllocnistis chrysophthalma)
(২) প্রজাপতি(Chilasa clytia & Papalio clytia)
(৩) পাতা খেকো লেদা পোকা(Dasychira mendosa)
(৪) লাল পিঁপড়া(Occuphylla sp.)
@ ফসল তোলা ও ফলন @
ফসল তোলা ও ফলন
দারুচিনি গাছ ১০-১৫ মিটার লম্বা হতে পারে,তবে ডাল ছাটাই করে এটার আকার নিয়ন্ত্রেণে রাখা যায়। পাঁচ বছর বয়সী গাছ হতে নিয়মিত ছাল ছাড়াবার ডাল( Peeling branch) পাওয়া সম্ভব। একাধিকবার ডাল কাটা যায়, তবে সবচে ভাল একবার ডাল কাটা এবং সেটা কাটতে হয় এপ্রিল মে মাসে। সাধারনতঃ ১-৩ সেমি ব্যাসের এবং এক হতে দেড় মিটার লম্বা ডাল কাটা ভাল। এ ধরনের ডাল হতে ভালমানের ছাল পাওয়া সম্ভব। পরিণত গাছ হতে বছরে প্রতি হেক্টর জমির গাছ হতে ২০০-৩০০ কেজি শুকনা ছাল পাওয়া সম্ভব। শুকনা পাতা ও ছাল হতে তেল নিষ্কাশন করা যায়,যে তেল বাণ্যিজ্যিকভাবে সুগন্ধি এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ছাল প্রক্রিয়াকরণ এবং শ্রেণীবিন্যাসঃ
কেটে নিয়ে আসা ডালগুলোর পাতা ও ডগা ছেঁটে ফেলার পরে গোছা বেধে রাখা হয়। এরপরের কাজ হলো ছাল উঠানো। বিশেষ ধরনের ছুরি দিয়ে অমসৃণ অংশ চেঁছে দেয়া এবং বাকল উঠানো হয়। ঐ ছুরির ধারালো ফলার সামনের দিকটা গোল ও অল্প বাঁকানো এবং সামান্য খাঁজযুক্ত। উক্ত ছুরি দিয়ে ডাল থেকে গোল করে কেটে বাকল তুলে আনার সুবিধা হয়। প্রথমে বাইরের অমসৃণ ছাল ঘসে বা ছাড়িয়ে তুলে দেয়া হয়,তারপর পিতলের দণ্ড দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করা হয়। এরপর ডালটির একপ্রান্ত হতে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে চিরে দেয়া হয়। এরপর ঐ বিশেষ ধরনের ছুরির সাহায্যে কাষ্ঠল অংশ থেকে বাকল আলাদা করা হয়। ডাল যেদিন কাটতে হবে বাকল সেদিনই উঠাতে হবে। উঠানো বাকলগুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় সারারাত গাদা দিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলোকে একদিন ছায়ায় শুকানোর পরে ৪/৫ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকানোর সময় বাকলগুলো সংকুচিত হয়ে নলের মত হয়ে যায়। ছোট নলগুলো বড় নলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে যৌথ নল বানোনো হয় তাতে করে ওগুলো ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে। এই নলগুলোকে( শুকনো বাকল) শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। “০০০০” থেকে “০” মানপর্যন্ত শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। “০০০০” গ্রেডের দারুচিনি হলো সবচে ভালমানের দারুচিনি আর “০”গ্রেডের দারচিনি হলো সবচে নিম্নমানের দারুচিনি । মোটা ডাল থেকে অনেক সময় ডাল চেছে নিয়ে দারচিনি বানানো হয়,যাকে বলে “চাঁছা” দারুচিনি। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণীর দারুচিনি গুঁড়ো করে যে দারুচিনি বানানো হয় তাকে বলে “গুঁড়ো দারচিনি”।