দেখে আসতে পারেন রহস্যের কুদুম গুহা

0
96

নিউজচিটাগাং:: রহস্যের কুদুম গুহা,  কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত  টেকনাফ উপজেলার একটি প্রাকৃতিক গুহা। এই উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এই গুহা অবস্থিত। এটি মূলত বালু-মাটির তৈরি একটি প্রাকৃতিক গুহা। হোয়াংক্যংয়ের পাহাড়ে কুদুম গুহার অবস্থান।হোয়াইক্যং স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে শামলাপুর যাওয়ার পথেই পড়বে এটি। সেখানে যেতে হলে সহযোগিতা নিতে পারেন হোয়াইক্যং বন বিভাগের বন প্রহরীদের। যেতে হবে হেঁটে। সময় লাগবে প্রায় এক ঘণ্টা।

%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a7%a9 %e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a7%a8 %e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a7%a7 %e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%ae-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a6%beএই গুহার প্রবেশমুখ প্রায় ১২ ফুট উঁচু। গুহার দেয়ালের গা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে অনবরত পানি ঝরে। এই কারণে সারা বছরই এর প্রবেশমুখ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত পানি থাকে। প্রবেশ পথে প্রায় হাঁটু পানি থাকে। এর ভিতরে প্রবেশ করলে পানির গভীরতা বাড়ে। শুকনো মৌশুমে এর ভিতরে কোমর পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় প্রায় গলা পানি হয়।

গুহার ভিতরে ছাদের অংশ বেশ প্রশস্ত, কিন্তু এর ভিতর ভাগ এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে, জোরালো আলো ছাড়া এর কিছুই দেখা যায় না। গুহার ভিতরে রয়েছে প্রচুর চামচিকা এবং নানা প্রজাতির বাদুর। এর ভিতরে রয়েছে বিরল প্রজাতির ছোটো আকারের  প্রভাতি বাদুর (Eonycteris spelaea)।

গুহার স্বচ্ছ মিষ্টি পানিতে রয়েছে শোল, বড় বড় টাকি জাতীয় মাছ, কৈ, কাকিলা, তিনচোখা, ডানকিনে, কালো রঙের চিংড়ি, নানা রকমের ব্যাঙ, গুগলি আর শামুক। গুহার শুকনো অংশে রয়েছে নানা ধরনে মাকড়শা, উড়চুঙ্গা, গুবরেপোকা আর প্রচুর পিঁপড়া। স্থানীয় লোকদের মতে এখানে কিছু ছোট অজগর আছে। এই বিচারে গুহাটিকে একটি বিরল প্রজাতির প্রাণীর ছোটোখাটো চিড়িয়াখানা বলা যেতে পারে। অবশ্য এর কোনোটিই মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফের হোয়াইকংয়ের উদ্দেশে যাত্রা। কক্সবাজার থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বাস জার্নি করে পৌঁছাই হোয়াইকং বাজারে। সেখান থেকে সিএনজি করে হাঁড়িখোলা। হাঁড়িখোলায় কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনী বাধা দিলেন, সিকিউরিটি ছাড়া কুদুম গুহায় যাওয়া যাবে না। কোনোভাবেই যখন তাদের কাছ থেকে অনুমতি মিলল না, তখন বিকল্প চিন্তা শুরু করি। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি—কীভাবে, কার কাছে গেলে অনুমতি মিলতে পারে। কারণ ভ্রমণে গিয়ে অভিযান অসমাপ্ত রেখে ফিরেছি এমন রেকর্ড আমার ঝুলিতে নেই। প্রায় এক যুগ আগে আর্মি ক্যাম্পে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য বাংলাদেশ সরকার দায়ী নয়’ এমন কঠিন মুচলেকা দিয়েও সাজেক যেতে রাজি হয়েছিলাম। সুতরাং সেই সাহসে এখনও আমি বলীয়ান। শুধু প্রয়োজন সঙ্গীদের অকুতোভয় সহযোগিতা। হাঁড়িখোলায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে যা দেখলাম, তা একেবারে শিউরে উঠার মতো। হাঁড়িখোলা থেকে শাপলাপুর বাজার যেতে জনগণ ও মালবাহী গাড়ির পুলিশ প্রহরা লাগে। অন্যথায় দিনে দুপুরেই দুর্ধর্ষ ডাকাতের পাল্লায় পড়া নিশ্চিত। কুদুম গুহা দেখার আকুল বাসনা দেখে পুলিশ সদস্যরা আমাদের হোয়াইকং পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। নবোদ্যমে ছুটলাম ফাঁড়ির পানে। ফাঁড়ির ইনচার্জের পক্ষ থেকে যেন কোনো বাধা না আসে সেজন্য আমার শ্রদ্ধেয় সচিবালয়ের সরকারী এক কর্মকর্তকে দ্রুত পুরো ব্যাপারটা জানাই। মুঠো ফোনে তিনি আমাকে নিরাশ না করে শুধু ফাঁড়ি পৌঁছতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা জেনে নিলেন। ফাঁড়িতে পৌঁছে ইনচার্জ জাহের সাহেবের শরণাপন্ন হই। চট্টগ্রাম থেকে এসেছি জেনেই তিনি সাথে সাথে ফোর্স রেডি করে আমাদের সাথে গুহা যাত্রায় পাঠিয়ে দিলেন। কৃতজ্ঞতা জানাই ইনচার্জ জাহের সাহেব ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি। আমাদের সাথে এখন চারজন অস্ত্রধারী পোশাক পরিহিত পুলিশসহ দুজন সিভিল পুলিশও রয়েছে। আমাদের ভাবসাবই এখন অন্যরকম!

বীরদর্পে চান্দের (স্থানীয় ভাষায়) গাড়িতে চড়ে পুনরায় বাংলাদেশের একমাত্র মাটির গুহা কুদুম অভিমুখে যাত্রা করি। হাঁড়িখোলা গাড়ি থামিয়ে এবার হাতের বামে প্রায় চার কিলোমিটার পাহাড়, গিরিপথ, বিশালাকৃতির সেগুন-চন্দনের শীতল ছায়া, কখনোবা ভয়ংকর জঙ্গলের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা। হঠাত্ হাতির পায়ের চিহ্ন দেখে থমকে দাঁড়াই। পুলিশ সদস্যরা অভয় দিলেন, বন্য হাতি সাধারণত কারো ক্ষতি করে না। ওরা মানুষের ভালো-মন্দ বুঝে। একজন জানালেন, ইউনিফর্ম পরা পুলিশদের ওরা শুঁড় উচিয়ে সালাম জানায় এবং মানুষ মন থেকে হাতিকে মামা বললে ওরা ক্ষতি করে না। ওদের এমন কথায় এখন বন্য হাতি দেখারও সাধ জাগে! কিন্তু এক উদ্দেশ্যে বের হয়ে অন্য আরেক উদ্দেশ্যে যুক্ত হলে দুটিই ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরবর্তী ভ্রমণে বন্য হাতি দেখার ইচ্ছা রাখি। পাহাড় থেকে পাহাড়ে কাঠের পাটাতনের কয়েকটি ব্রিজ পেরিয়ে হাজির হই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। গুহার মুখে এসে বিস্ময়ে আমাদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাঁটু জলে ভেঙে গুহার ভিতরে ঢুকি। পানির ভ্যাপসা গন্ধ জাপটে ধরে, তারপরও আনন্দ! গুহাবাসী পাখিদের উড়ে চলা, চামচিকার কিচিরমিচির, ঘুটঘুটে অন্ধকার—এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি! গুহার ভিতরের উপরে অংশে টর্চের আলো পড়তেই সবাই অবাক, ওহ্! আল্লাহ্ এত সুন্দর প্রাকৃতিক নিদর্শন! গুহার অন্ধকারে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে মনের আনন্দে বের হয়ে আসি। এবার কুদুম গুহার চারপাশটা ঘুরে দেখি সবখানে নয়নাভিরাম প্রকৃতি। সেখানেই দেখা হলো অজগরের মরা চামড়া। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল অজগরের অন্যতম প্রিয় খাবার চামচিকা। তাই গুহার ভিতর ঢোকার সময় সঙ্গে টর্চ ও শক্ত লাঠি রাখা জরুরি। বন্ধুরা, দে ছুটের মতো আপনারাও অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন হোয়াইকংয়ের কুদুম গুহা।

যাতায়াত :প্রথমেই যেতে হবে কক্সবাজার। এরপর মাইক্রো অথবা লিংক রোড থেকে টেকনাফের গেটলক বাসে করে যেতে হবে হোয়াইকং বাজার। চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফের বাসেও যাওয়া যায়। স্থানীয় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ প্রহরা নিয়ে যেতে হবে কুদুম গুহা। জনপ্রতি খরচ হবে ৫ হাজার টাকা। তবে খরচ থাকা-খাওয়ার উপর নির্ভর করে। খরচ যাই হোক কক্সবাজারে কাঁকড়া ভাজার স্বাদ নিতে কিন্তু ভুলবেন না। পরিশেষে বলতে হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি সুদৃষ্টি দেন তাহলে বিদেশের কৃত্রিম গুহাগুলোর চেয়ে আমাদের হোয়াইকংয়ের কুদুম গুহার নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্যের মূল্য কোনোভাবেই কম হবে না।