ডেঙ্গুর প্রকোপ

0
238

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আষাঢ়ের বৃষ্টিতে বেড়েছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গেল জুন মাসে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৫৩ জন। মারা গেছেন একজন। যা গত বছর এ সময়ের চেয়ে পাঁচগুণেরও বেশি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের আক্রান্তের মধ্যে মারাত্মক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ স্বাস্থ্য অধিদফতর; তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত বলে জানান তারা। এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে দাবি করে জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল সকালে মশা নিধনে মাসব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে শুরু হয় এই কার্যক্রম। ২৭৪টি ফগার মেশিন দিয়ে মাসব্যাপী এই কার্যক্রম চালাবেন ৩৪৪ জন মশককর্মী। এর পাশাপাশি সচেতনতা কার্যক্রম চলবে বলেও জানান সাঈদ খোকন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ২৫ জুন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১১২ জন, পরের দিন ৭৫ জন, ২৭ জুন ১১৫, ২৮ জুন ৫৪ জন, ২৯ জুন ১০৪ ও মাসের শেষ দিনে এই সংখ্যা ছিল ৫২ জন। গোটা জুন মাসজুড়ে এই সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৩ জন। অথচ গত বছর এই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২৯৫।

জানা গেছে, গত সোমবার (২৩ জুন) থেকে বৃহস্পতিবারের (২৭ জুন) মধ্যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৩০ জন রোগী ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১০৯ জন রোগী ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাবেয়া সরদার (৫০) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে গত ২২ জুন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন তার মৃত্যু হয়।

শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত জান্নাত আক্তার মিমের মা মিনারা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, মিম স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। গত ২১ তারিখে জ্বর হয় মিমের। পরীক্ষার মাধ্যমে গত ২৬ তারিখে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিন থেকেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি।

জুরাইন ঋষিপাড়া থেকে ২৭ তারিখে ভর্তি হন পলি দাস (২৭) নামের এক গৃহবধূ। গত সাত দিন থেকে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। তাদের মতো আরো ৫৪ জন রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক শাইখ আবদুল্লাহ বলেন, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন জ্বরের রোগী আসেন। এর মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করে আসেন আবার অনেকেই সাধারণ জ্বর নিয়ে আসেন। যাদের রক্তের প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা) কম থাকে তাদের ভর্তি করে থাকি। এ রকম প্রতিদিন গড়ে ১৪ থেকে ১৫ জন রোগী ভর্তি হন।

তিনি জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুন থেকে জুলাই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়।

ডা. শাইখ আবদুল্লাহ বলেন, এবার দেশের সামগ্রিক আবহাওয়া ডেঙ্গুর যথেষ্ট উপযোগী। এ রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। রোগের কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো বিরামহীন মাথাব্যথা, হাড়, হাড়ের জোড় ও পেশিতে ব্যথা, বমিভাব ও বমি হওয়া, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, সারা শরীরের ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করার (যেমন পানি, ডাবের পানি, স্যালাইনের পানি) পরামর্শও দেন এই চিকিৎসক।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দ্রুত রোগমুক্ত হওয়া যায়। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু সাধারণত সেরে যায়। তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পিডিএসও/তাজ