নতুন করে জীবন শুরু করতে চান

0
69

ইরাকের যুদ্ধ আর সহিংসতা থেকে বাচতে অনেকে ইউরোপে গিয়েছেন। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে তারা সেখানে গিয়েছেন, অনেকেই তার দেখা পাননি। অভিবাসন কর্মীরা বলছেন, এখন ইউরোপ থেকে উল্টো ইরাকে ফিরতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ইরাকেই তারা নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।

ইরাকের একটি ক্যাম্পে সাতবছরের ফ্রানসো বর্ণনা করছিল, কিভাবে সে মসুলে থাকার সময় প্রতিদিন ঘরে বসেই বাইরে বোমার আওয়াজ শুনতে পেতো। দুইবছর আগে মসুলের কাছে তাদের খৃষ্টান গ্রামে যখন তথাকথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা হামলা চালায়, তখন তার মা, এখলাস ছিলেন হাসপাতালে, কিছুক্ষণ আগেই যার সিজারিয়ান অপারেশন হয়।

এখলাস বলছেন, হাসপাতালের সিজারিয়ান সেকশনে আমার ছোট মেয়েটার জন্ম হয়। এই সময় আইএস হামলা চালালে সেই অবস্থায় আমাকে আর বাচ্চাদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে আসে। সে সময় আমার জ্ঞানও ছিল না।

এখনো সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। আইএসের হামলায় তাদের বাড়িঘর সব ধ্বংস যায়। অতএব তার স্বামী হানি অন্যদের মতো ইউরোপগামী অভিবাসন স্রোতে যোগ দেন। তার স্বপ্ন, সেখানে হয়তো তিনি পরিবারের জন্য নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।

উন্নত জীবনের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে অনেক ইরাকি নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেছেন

হানি বলছেন, তুরস্ক আর গ্রীসের মাঝে আমাদের নৌকাটি উল্টে যায়। তবে আমি বেঁচে যাই। সাতরে আমি তীরে উঠতে পারি। কিন্তু পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তারা আমাদের নানা স্থানে নিয়ে যায়। ছাড়া পেয়ে আমরা বেসমেন্টের কয়েকটি ঘরে থাকি, খাবার নেই, টাকা নেই, অনেক কষ্ট। পাঁচ মাস পরে আমি ইউরোপে যাবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে আবার এখানে চলে আসি।

আরবিলে বাস্তুচ্যুত ইরাকিদের একটি ক্যাম্পে এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যারা দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পটিতে বাস করছে। ইরাক জুড়ে এরকম প্রায় ত্রিশ লাখ ইরাকি রয়েছে, আইএসের হামলায় যারা বাড়িঘর ছেড়েছেন। এদের অনেকেই ইউরোপে যাবার চেষ্টা করছেন, আবার অনেকের মতে, বাড়ির মতো শান্তি কোথাও নেই।

সাদ কামাল নামে এই ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা বলছেন, বাধ্য হয়ে আমরা এই ক্যাম্পে থাকছি, কিন্তু একদিন আমাদের বাড়িতে ফিরে যাবো। আমাদের পরিবারের সদস্য আটজন। অনেকেই ইউরোপ বা তুরস্ক চলে গেছে কিন্তু একসময় তারাও বাড়ি আসবে, যখন এই যুদ্ধ থেমে যাবে।

মসুল থেকে পালিয়ে আসা আকরাম অবশ্য মনে করেন, ইরাকে তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। তিনিও সুযোগ পেলেই দেশের বাইরে চলে যাবেন।

তিনি বলছেন, আমরা চলে যেতে চাই, কারণ ইরাকে আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের যে বন্ধুরা ইউরোপে গেছে, তারা সেখানে বাড়ি পেয়েছে, ছেলেমেয়েরা শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের যাবার মতো টাকা নেই, তাই এখানে পড়ে রয়েছি।

২০১৫ সালে রেকর্ড অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করলেও, সাম্প্রতিক মাসে সেই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে

গত কয়েকমাসে গ্রীস বা ইটালি হয়ে ইউরোপে গমনেচ্ছু অভিবাসীদের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা সান রুব্লাক বলছেন, এর মানে এটাই যে, এখন অনেক মানুষ মানুষ ইউরোপ থেকে নিজেদের দেশে ফেরত আসছে।

তিনি বলছেন, গতবছরের প্রথম আটমাসে আমরা গড়ে ১০০জন করে ফেরত আসা অভিবাসীদের পেয়েছি। কিন্তু এরপর থেকেই এটা অনেক বেড়ে গেছে। গতমাসে একহাজারের বেশি ইরাকি ফেরত আসতে আইওএমের কাছে সাহায্য চেয়েছে।

ইরাকে ফেরত আসা একজন সাবেক গার্ড সাফিন ইসমাইল। তিনমাস জার্মানিতে কাটিয়ে সেখানে কোন ভবিষ্যৎ দেখতে না পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

মি. ইসমাইল বলছেন, জার্মানিতে অভিবাসীরা উপচে পড়ছে। তাই সেখানে কাজ নেই, থাকার জায়গা নেই। আমার কাছে কেউ যদি পরামর্শ চায়, আমি তাদের বলবো, তোমরা দেশেই থাকো, জার্মানি বা ইউরোপে যেও না।