নিঝুমদ্বীপ-মনপুরায় এ্যাডভাঞ্চার

0
75

আজিম উল্যাহ হানিফ
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে অন্যতম প্রতিষ্ঠানের নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। এই কলেজে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক-সেচ্ছাসেবীও রক্তদাতাসহ সর্বমোট ১৩টির উপর রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো যুব রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। এটি ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৮ সালে। আর ভিক্টোরিয়া কলেজে এর পদচারণা শুরু হয় প্রায় ১০ বছর আগে। অন্য সংগঠনের থেকে একটু খানি ব্যতিক্রমী ধারার এডভাঞ্চার ট্রেনিং প্রতিবারের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হলো ভোলা জেলার মনপুরা ও নোয়াখালী জেলার হাতিয়ায় অবস্থিত নিঝুমদ্বীপে। সংগঠনের নেতাদের পূর্বে বারবার বলে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারী ভোর বেলায় ফজরের পর পরই সবাই কলেজের কলাভবনের সামনে একত্রিত হতে থাকি। একে একে সবাই আসতে থাকে বাসের কাছে। সংগঠনের সহকারী প্রফেসর ইনচার্জ হেদায়েত উল্লাহ স্যারসহ দলনেতা ও সহকারী দলনেতারা সবার রেজি:ফিসহ সব খবরাখবর নিয়ে লটারীর মাধ্যমে নিজ নিজ সিটে বসানোর ব্যবস্থা করলেন। ৮টা বাজার কিছুক্ষন আগে বাস ছাড়লো। বাস ছাড়ার সাথে সাথেই নাচে গানে গরম হতে লাগলো পুরো বাস। ধীরে ধীরে আমরা নগরীর টমছমব্রীজ হয়ে জাঙ্গালিয়া-পদুয়ার বাজার বিশ^রোড-লাকসাম- খিলা- নাথেরপেটুয়া-নোয়াখালী পেরিয়ে হাতিয়ায় পৌছলাম বেলা পৌনে ১২টায়। অত:পর হাতিয়ার মেঘনা নদীর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ট্রলারে উঠে সবাই নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলাম। যা ছিল আমাদের অদেখা ও অজানা এক জগত। ট্টলারেই দুপুরের খাবার খাই আমরা তবে তা সন্ধ্যার একটু আগে। সন্ধ্যায় নিঝুমদ্বীপ গিয়ে পৌছি। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর সবকটি রুমেই আমাদের সদস্যদের জায়গা হয়েছে ভালভাবেই। রুম ও সিট বুঝে নিয়ে সবাই সারাদিনের ট্রলার জার্নিংয়ের ক্লান্তি ও প্রাকৃতিক কাজ সারাসহ ফ্রেস হলাম। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে আমরা বীচ এলাকায় যাই। রাত ৮ টা থেকে প্রায় সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ধুমধারাক্কাসহ নানান ধরণের গান বাজনা ও নৃত্য। নৃত্যের সাথে প্রফেসর ইনচার্জ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: শাহজাহান স্যার, সহকারী প্রফেসর ইনচার্জ ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লেখক মো: হেদায়েত উল্লাহ, সারাবেলা ট্যুরিজমের স্বত্তাধিকারী আমিনুল হক মাওলাসহ সবাই আনন্দ ও মজার ভাগ নিলাম। নাচ গানের ফাঁকে ফাঁকে অবশ্য আমরা একজন একজন করে রাতের খাবার দাড়িয়ে বা বসে খেয়ে নিই। রাতের শেষ অংশ ঘুমিয়ে নিয়ে ২৯ জানুয়ারী সোমবার সকাল নাস্তা করি। এই ফাঁকে হরিণ নিজেই বাসার সামনে আসায় তার সাথে আমরা সবাই ছবি তুলি। নাস্তা শেষে নিঝুমদ্বীপ থেকে মনপুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই আমরা। মনপুরা পৌছে পানি আর বনের সাথে আকাশটাকে উপভোগ করি সবাই। সেখানে আমরা গ্রুপ ছবি ছাড়া ও কেউ কেউ একক ও খন্ডিত ছবি তুলি। সেখান থেকে ফিরে জোয়ার ভাটার টেনশনে নিঝুমদ্¦ীপে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। বাসায় এসে সবাই রেডি হই,বেলা ৪টার সময় সবাই করিমন নচিমনে করে ডাকবাংলোর সামনে থেকে যাই বন্দরটিলায়। যেখানে বিকালের সময়টা দারুন কাটবে আমাদের। সেখানে গিয়ে নিঝুমদ্বীপের বাড়ি ঘর, খেজুর গাছ, দোকানপাট, একটি মাত্র প্রাইমারী স্কুল, একটি মাত্র হাইস্কুল, একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নতুন পুলিশ ফাড়ি, মসজিদ, পুকুর, ধানের জমি, বনও মানুষের লাগানো গাছ, নৌকা দেখে ভালো লাগলো। সেখান থেকে সন্ধ্যায় ফিরে আসি ডাকবাংলোর বাসায়। হঠাৎ রুমে এসে একজন বলে গেলো রাত ৮টায় বনে হরিণ ও পূর্ণিমা রাতের আগের রাত চাঁদনী রাতের আলো উপভোগ করবে। যদিও রাতটি আমাদের প্রায় অর্ধশতাধিকের মধ্যে ৫ জন মিস করেছে হাতে ধরে। তারা করিমনের ড্রাইভারের বাড়িতে গিয়ে খেজুরের রস খেতে গিয়েছে। আমরা ৪টি নৌকায় ভাগ হয়ে নিরিবিলি হয়ে বনের দিকে যাই। সেখানে হরিণ দেখার নেশায় আমরা চুপচাপ যাই। বনের কাছে গিয়ে ৪টি নৌকাই একসাত করে দাড়াই কিছুক্ষণ সময়। চাঁদনী রাতের আলোতে আমিনুল হক মাওলা, হেদায়েত স্যার, উপদল-৯ এর ভারপ্রাপ্ত উপদলনেতা বৃষ্টির কন্ঠে শুনি বেশ কয়েকটি গান। যা আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি। নিরবতায় আরো ভালো হয়ে উঠে ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে সবার মন ও দেহ। এবারও ডাকবাংলোয় ফেরার পালা। বহুদূর নৌকায় পাড়ি দিয়ে অবশেষে ফিরলাম বাসায়। ফিরতে ফিরতে রাত তখন সাড়ে ১১ টার মত। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিড়ে পড়ি সবাই নিজ নিজ সিটে। ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল নাস্তা শেষে বিনামূল্যে রক্ত নির্নয় ক্যাম্পেইন উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনপূর্বে আমরা বীচে গিয়ে ফুটবল খেলি। এতে দু’টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলি আমরা। একদলের নেতৃত্বে ছিল সহকারী প্রফেসর ইনচার্জ মো: হেদায়েত উল্লাহ স্যার অন্যপক্ষে ছিল সহকারী দলনেতা রেদোয়ান শাকিল, সাইফ উদ্দিনের টিম। আমি স্যারের বিপক্ষে খেলি এবং ৩-১ গোলে বিজয়ী হই। এরপর লটারী ড্র অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। যেখানে প্রায় ১০জনকে পুরষ্কৃত করা হয়। যদিও আমি ১৩টি কুপন কিনেও ১০জনের একজনও হতে পারিনি! পুরষ্কার বিতরণ শেষে সবাই রেডিও সাজগোজ করে বেলা ১২টায় রওয়ানা হই কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। যদিও পৌছি আমরা গভীর রাতে। তবে বলে রাখা উচিত যে, হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের অতিনিকটে এসে ট্রলার পানি কম থাকায় আটকা পড়ে। এতে দীর্ঘ ৩ঘন্টার উপরে আমরা নদীতে ট্রলারে ছিলাম। যদিও খারাপ লাগে নি একটুও। অবশেষে জোয়ার আসলে ট্রলার আসে চেয়ারম্যান ঘাটে। এই সময়ে নানান কথা বার্তা,গান, আর এডভাঞ্চার ট্রেনিংয়ের অনুভূতি প্রকাশে সময় কেটে যায় আমাদের। অবশ্য ট্টলার আটকা মূহূর্তে আমাদের কয়েকজন সদস্যসহ মাওলা ভাই নিকটে বাজারে গিয়ে ডিম, টিস্যু,তেলসহ কিছু জিনিসপত্র কিনে আনেন। অনুভূতি প্রকাশের মূহূর্তে উপস্থাপনা করেন সহকারী প্রফেসর ইনচার্জ মো: হেদায়েত উল্লাহ স্যার। এতে জোয়ার এসে ট্রলার চলা শুরু হওয়া পর্যন্ত ৩মিনিট করে বক্তব্য রাখেন সাবেক দলনেতা হেলাল উদ্দিন, সাবেক সহকারী দলনেতা খাজিনা আক্তার খাজি, দলনেতা মাহিন তালুকদার, সহকারী দলনেতা রেদোয়ান শাকিল, সহকারী দলনেতা সাইফ উদ্দিন, উপদলনেতা আবু ইউসুফ, খাদিজা আক্তার রিমা, শাহাদাত হোসেন, আজিম উল্যাহ হানিফ, সদস্যদের মধ্যে কাজী উম্মে হানি সায়মা, জিহাদ। নিয়ন্ত্রিত খাবার ভাগ করে খাওয়া রোদে বাস্তবতাকে ডিঙ্গিয়ে সহানুভূতিশীল ধৈর্য্য ও সাহসের মধ্য দিয়ে ৬৯ ঘন্টা তথা ৩দিনের এডভাঞ্চার ট্রেনিং চির মধুর ও সুন্দর হয়ে চির জাগ্রত থাকুক আমাদের মাঝে।
লেখক: আজিম উল্যাহ হানিফ: ্উপদলনেতা- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ যুব রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি।