নিম্নমানের হাইব্রিড ধান বীজে প্রতারিত হচ্ছে কৃষক

0
451

খুলনা মহানগরীসহ জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বীজ, কীটনাশক ও সার ডিলারের দোকানে হরেক রকম হাইব্রিড জাতের বোরো ধান বীজ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা খরাসহিষ্ণু ধানের বাম্পার ফলনএসব হাইব্রিড ধান বীজের বেশিরভাগই নিম্নমানের। গত বছর এসব বীজ ব্যবহার করে খুলনা অঞ্চলে হাজার হাজার কৃষক প্রতারিত হয়েছেন। এখন কোন বীজ কিনবেন তা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষক। অনেকেই এসব বীজ রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে বীজ, সার ও কীটনাশক ডিলারের দোকানে বিভিন্ন নামে হাইব্রিড ধান বীজ বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে নাফকো-১০৮, জনকরাজ, দুর্বার, নবীন, ইস্পাহানি-১, ইস্পাহানি-২, আগমনী, রূপসী বাংলা-১, মঙ্গল, পান্না-১, সচ্ছল, সিনজেনটা এস-১২০১, তেজ, শক্তি-২, তিনপাতা সুপার, মেঘনা, ব্যাবিলন-২, হিরা-২, হিরা-৪, হিরা-৫, আফতাব এলপি-১০৬, আফতাব এলপি-০৫, বিজয় এলপি-৭০, পাইওনিয়ার, সম্পদ, রূপালি, আলোড়ন, জাগরণ, সাথি, এসিআই-১, টিয়া, ময়না, দোয়েল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, প্রতি বছরই বাজারে নতুন নতুন হাইব্রিড ধান বীজ যোগ হচ্ছে। সুদৃশ্য প্যাকেটে মোড়কজাত এসব হাইব্রিড ধান বীজ দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বাজারজাত করছে। এসব হাইব্রিড ধান বীজের গুণাগুণ, চাষাবাদ পদ্ধতি ও ফলন সম্পর্কে কৃষকদের তেমন কোনো জ্ঞান নেই। যদিও প্যাকেটের গায়ে এসব ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা আছে। কিন্তু তা কৃষকের পক্ষে বোধগম্য নয়। হাইব্রিড ধান বীজের সমারোহ দেখে কৃষক রীতিমতো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে বাজারে আসা ধানের মূল্য নির্ধারিত হলেও হাইব্রিড বোরো ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। এক কেজি ওজনের এক প্যাকেট হাইব্রিড বোরো ধানের বীজ সর্বনিম্ন ২৩০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা রাখা হচ্ছে। চটকদার বিজ্ঞাপন আর বিক্রেতাদের কথার ফুলঝুরিতে প্রলুব্ধ হয়ে অধিক ফলনের আশায় উচ্চমূল্য দিয়ে এসব বীজ ক্রয় করেন সাধারণ কৃষক। এবছরও হাইব্রিড বোরো ধান চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন কিনা তা নিয়ে তারা চিন্তিত।

রূপসা উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কৃষক গোপাল চন্দ্র ম-ল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, গত বোরো মৌসুমে তিনি চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড নাফকো-১০৮ জাতের বীজ রোপণ করেন। কিন্তু ফলন কম এবং ধান চিটা হয়েছে। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পিঠাভোগ গ্রামের কৃষক আজমল শেখ, ইদ্রিস গোলদার ও প্রকাশ চন্দ্রসহ বেশ কয়েকজন কৃষক একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, বিগত কয়েক বছর বোরো মৌসুমে মাত্র ৩-৪টি হাইব্রিড ধানের মোটামুটি ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ হাইব্রিড ধান থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি এ ধান চাষে একদিকে যেমন (অধিক রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও পানি সেচের কারণে) উৎপাদন খরচ বেশি হয়, তেমনি ধানে রোগ ও পোকার (বিশেষ করে কারেন্ট পোকার) আক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া আমদানি করা এসব হাইব্রিড বীজ এদেশের মাটি ও জলবায়ুতে চাষের উপযোগিতা নিরূপণ না করেই বাজারে ছাড়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। এ অবস্থা উত্তরণের লক্ষ্যে হাইব্রিড বোরো ধান বীজ বিক্রি কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি করার পাশাপাশি হাইব্রিড ধান চাষের উপযোগিতা নিরূপণের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও বীজ প্রত্যয়ন সংস্থার দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপপরিচালক কাজী আনিসুজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শুধু বীজ দেখে ভালো-মন্দ বোঝার উপায় থাকে না। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের বীজ দিয়ে প্রতারণা করতে পারে। তবে সরকার স্বল্প জমিতে অধিক ফলনের জন্য হাইব্রিড বীজ চাষকে গুরুত্ব দেয়ায় এ ব্যাপারে কিছুই করণীয় নেই। এক্ষেত্রে বীজ কেনার ক্যাশ মেমো এবং প্যাকেট সংরক্ষণে রাখলে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যেনতেন কোম্পানির বীজ না কিনে তিনি কৃষকদের ব্র্যান্ডধারী ভালো প্রতিষ্ঠানের বীজ কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।