নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৪০ কিমি মানববন্ধন শনিবার

0
62

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে আশঙ্কাজনকভাবে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে সীতাকুণ্ডবাসী।

শনিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সিটি গেট থেকে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এ মানববন্ধন হবে। এতে স্থানীয় দুই শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, সেবামূলক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১টি পৌরসভার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

এ উপলক্ষে শুক্রবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মানববন্ধন বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোরশেদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা পরিচালিত ‘সেইফ লাইন’ পরিবহনের গাড়িগুলো এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীসাধারণের আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গত তিন মাসে এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৩ জন, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এক বছরে নিহত হয়েছেন ১৪২ জন।

যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে পথচারীদের হতাহতের ঘটনা এখানকার নিত্যদিনের। পঙ্গুত্ববরণ করে অনেকের জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে দুর্ঘটনার জের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অকালে কোনো মা সন্তানহারা, স্ত্রী স্বামীহারা কিংবা সন্তান পিতৃহারা হোক-তা আমরা চাই না।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হলেও ট্রাফিক ও সড়ক ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। মহাসড়কের পাশেই কয়েকটি কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে ওঠায় পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ গাড়িগুলো ওল্টোপথে টার্মিনাল ইয়ার্ডে ঢোকা ও বের হওয়ার পাশাপাশি মহাসড়কের ওপর এলোপাতাড়ি যত্রতত্র দাঁড়িয়ে এক নৈরাজ্য তৈরি করে, যাত্রীবাহী গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না, সৃষ্টি হয় যানজট। তবে এ এলাকার জনসাধারণের সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ রুটে চলাচলকারী পরিবহন ‘সেইফ লাইন’। এ লাইনে ১০০টির মতো ‘সেইফ লাইন’ স্থানীয়

কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিলেও দুই শতাধিক অবৈধভাবে চলছে। লাইসেন্সবিহীন অনভিজ্ঞ চালকদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ যাত্রীরা। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয়।
অন্যদিকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে ভাসমান দোকান গড়ে তোলা, রাস্তার পাশে ইট-বালু রেখে সেখান থেকে গাড়িতে লোড-আনলোড করার ফলে যানবাহন চলাচলে দারুণ অন্তরায় সৃষ্টি হলেও এসব দেখার কেউ নেই। সীতাকুণ্ড সদরে সেইফ লাইনগুলোর নির্দিষ্ট কোনো স্টপেজ নেই। রাস্তার পাশে ইচ্ছেমতো এসব গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে লোকজনের চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি হয়। সবকিছু মিলিয়ে এখানকার পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহনগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগ, অনির্ধারিত জায়গায় পার্কিং, পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, মহাসড়কের দুইপাশে স্থাপিত অবৈধ দোকান ও বাজার উচ্ছেদ করা, অতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ব্যস্ততম মোড়ে পথচারী পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস ও ইউটার্ন নির্মাণ, গাড়ির লাইসেন্স ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে জালিয়াতি বন্ধ, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদাবাজি পরিহার করে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন, সড়ক-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কের পাশে স্থানীয় মানুষের আলাদা সড়ক বা লেন নির্মাণের সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মো. ফসিউল আলম, শিল্পপতি মাস্টার আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর একেএম তফজল হক,

কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল চৌধুরী, সীতাকুণ্ড সাংস্কৃতিক পরিষদ সভানেত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুরাইয়া বাকের, সীতাকুণ্ড সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন, ব্যবসায়ী নূরুল আবছার চৌধুরী প্রমুখ।