নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান’র পিতা মাস্টার মোস্তাফিজ আর নেই

0
100

মাস্টার মুস্তাফিজ
সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
পর্যটন শহর কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান শিল্প উদ্যোক্তা, নিরিবিলি গ্রুপের চেয়ারম্যান ,বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব লুৎফুর রহমান কাজলের শ্রদ্ধেয় পিতা আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহিৃৃৃৃৃ রাজেউন) বুধবার সকাল ১০ টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাটে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা ও জোহরের নামাজের পর মরহুমের গ্রামের বাড়ি পোকখালী গোমাতলীতে দ্বিতীয় সালাতুল-জানাযা সম্পাদনের পর নিকটস্থ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। তিনি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে তিনি দূরাযোগ্য ক্যান্সার রোগে ভোগছিলেন। যিনি সর্বমহলে মোস্তাফিজ মাষ্টার নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁকে মনে করা হতো ব্যবসায় জগতের সোনার কাঠি, যাতেই তিনি হাত দিতেন তাতেই যেন সোনা ফলতো! তিনিই ছিলেন দেশের প্রথম লবণ মিল ও প্রথম চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারি চিংড়ি হ্যাচারির প্রতিষ্টাতা। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত প্রথম লবণ মিল ‘কক্সবাজার সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ’ ও প্রথম হ্যাচারি ‘নিরিবিলি বাগদা চিংড়ি হ্যাচারী’ প্রতিষ্টার পর কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুরে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ লবণ শিল্প এলাকা। আর কক্সবাজার শহরের কাছে কলাতলীতে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র চিংড়ি হ্যাচারী জোন। মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই প্রতিষ্টিত ছিলেন না, তাঁর স্ত্রী ছালেহা খানমও ছিলেন সংসদ সদস্য। তিনি বিএনপির প্রতিষ্টাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমযকালে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সেই স্কুল শিক্ষক থেকে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিষ্টিত শিল্প গ্রুপ।
মোস্তাফিজুর রহমান যিনি বাংলাদেশে শিল্প উদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগামী ভূমিকার জন্য দেশব্যাপী সর্বাধিক পরিচিত। তিনি ১৯৩৮ সালের ১২ এপ্রিল কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম আছদ আলী ও মা মরহুমা ছখিনা বেগমের ৩ ছেলের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন সবার বড়। মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৫৪ সালে কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম আশুতোষ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি কোর্সে দ্বিতীয় বর্ষ শেষ না করার আগেই নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রাম এবং দেশের উন্নয়নে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম পর্যায়ে তিনি গ্রামে কৃষি খামার ও লবণের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৬১ সালের গোড়ার দিকে তাঁর সাথে পরিচয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত কোম্পানী আজাদ ভান্ডারের মালিকের সাথে। তখন থেকেই ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিতি হন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে কক্সবাজার সল্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে বাংলাদেশের প্রথম লবণ মিল স্থাপন করেন। তাঁর দেখানো পথ ধরে সেখানে পরবর্তী সময়ে অর্ধশতাধিক লবণ মিল প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইসলামপুর এখন দেশের বৃহৎ লবণ শিল্প এলাকা ও অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার উৎপাদিত লবণ দেশব্যাপী চাহিদা পূরণ করে।

আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান যিনি বাংলাদেশে শিল্প উদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগামী ভূমিকার জন্য দেশব্যাপী সর্বাধিক পরিচিত ও সমাদৃত। ১৯৮৫ সালে কক্সবাজার কলাতলীতে “নিরিবিলি বাগদা চিংড়ী হ্যাচারী” প্রতিষ্ঠা করে তিনি দেশে বাগদা চিংড়ী হ্যাচারীর গোড়া পত্তন করেন, এই হ্যাচারী দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারী। যা বর্তমানে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ১৯৯৩ সালে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিরিবিলি হ্যাচারাী পরিদর্শন পূর্বক কলাতলী, সোনার পাড়া ও টেকনাফ অর্ধশতাধিক হ্যাচারী নিয়ে হ্যাচারী জোন ঘোষনা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত সরকারসহ প্রায় শতাধিক দেশের রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদস্থ মন্ত্রী.এমপি উক্ত হ্যাচারী পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং এই অবধানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২ বার স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করে।

এছাড়া তিনি ফিস ফিড মিলস, পোল্ট্রি হ্যাচারী, তেলাপিয়া হ্যাচারী, পর্যটনের উন্নয়ন ও রাবার প্লান্টেশনসহ অনেক শিল্প বাণিজ্যের উদ্যোক্তা কক্সবাজারের বরেণ্য এই সন্তান। এছাড়া তিনি পোকখালী মাদ্রাসার দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, কলাতলী মসজিদ, পূর্ব গোমাতলী মসজিদ, ঈদগড় কৃষি খামার মসজিদ, ফকির পাড়া জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য মাদ্রাসা, স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান ও নিজে সম্পৃক্তের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তাহার একমাত্র স্ত্রী, সালেহা খানম, ৪ ছেলে, ১ কন্যার মধ্যে বড় ছেলে লুৎফুর রহমান কাজল ২০০৮ সালে কক্সবাজার সদর-রামু আসনে বিপুল ভোটে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। অপর ৩ পুত্র যথাক্রমে, মশিউর রহমান রাজন, মাহবুবুর রহমান শাহিন ও মোর্শেদুর রহমান তুহিন সবাই ব্যাবসায়িকভাবে প্রতিষ্টিত।