ঈদুল আজহার উত্সব শেষে ভাঙছে গ্রামের মিলনমেলা। চট্টগ্রাম শহর কয়েকদিনের নির্জনতা ভেঙে সরব হয়ে উঠছে মানুষের কোলাহলে। রেলস্টেশন, বহদ্দারহাট বাসস্টেশন, অক্সিজেন, সিটি গেট, ১৫ নম্বর ঘাট, সদরঘাট, শাহ আমানত সেতু মোড়সহ নগরীর প্রতিটি প্রবেশমুখই এখন সরগরম। স্রোতের মতো ঢুকছে মানুষ। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে জনজট আর যানজট।
ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে নগরী যেমন হারিয়েছিল জৌলুস, তেমনি ঈদের কয়েক দিনের মধ্যেই আবার হয়ে উঠেছে চিরচেনা। শেষ বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত যে নির্জনতা গ্রাস করেছিল সড়ক আর গলি-উপগলি তা এখন হয়ে উঠেছে জমজমাট। দোকানপাট খুলছে। বাড়ছে হকার আর ফেরিওয়ালার হাঁকডাক। বাড়ছে গাড়ির সংখ্যাও। ব্যস্ত হয়ে উঠছে বাণিজ্য নগরী।
বিকেল সোয়া পাঁচটা। স্টেশন রোডের রেলস্টেশনে বাড়িফেরত মানুষের ভিড়। নানা বয়সী মানুষের স্রোত। রকমারি ব্যাগ কাঁধে আর পিঠে। যে যার গন্তব্যে পা বাড়াচ্ছেন দ্রুতলয়ে।
ঢাকা থেকেই মহানগর প্রভাতীতে সপরিবারে ফিরেছেন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল কালাম। বললেন, কাল সকাল থেকে অফিস শুরু। ঈদের ছুটি আর ঐচ্ছিক ছুটি মিলে পাঁচ দিন বাড়িতে ছিলাম। দেখতে দেখতেই চলে গেল ছুটির দিনগুলো। এখন আবার সেই কর্মব্যস্ততা, নানামুখী টেনশনের মধ্যে থাকার দিন শুরু।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র তওফিক আজাদ। বললেন, বাড়ির মায়া ছেড়ে আসতেই মন চাইছিল না। কিন্তু টিউশনির ছাত্রছাত্রীদের বার্ষিক পরীক্ষা সামনে। তাগিদ ছিল সেটি। উপার্জনের মাধ্যমের চেয়ে দায়িত্বটা যে বড়। তাই শুক্রবারেই চলে এলাম।
কারও চাকরি, কারও ব্যবসা। কারও সন্তানের পরীক্ষা, কারও ক্লাস। আবার কোনো কোনো মা স্বপ্ন পূরণের লড়াইতে জিততেই ফিরেছেন নগরীতে। তাদেরই একজন রওশন আরা।
বিকেল তিনটার দিকে শাহ আমানত সেতুর মোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে। বাস থেকে নেমে আগ্রাবাদ যাওয়ার জন্যে দরদাম করছিলেন সিএনজি অটোরিকশাচালকের সঙ্গে।
ফাঁকে বললেন, আমার কোনো কাজ নেই শহরে। সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাই। কোচিংয়ে নিয়ে যাই। গানের টিচারের বাসায় নিয়ে যাই। তাদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন পূরণ করতেই গাঁয়ের মাটির বন্ধন ছিঁড়ে চলে এসেছি। স্বজনদের ছেড়ে আসা কষ্টের। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের লড়াইটা আনন্দের। তাই একদিনও দেরি করিনি।
নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া মানুষগুলো নয়। নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন বান্দরবান, রাঙামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়িসহ দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে যাওয়া তরুণ পর্যটকরাও। যারা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পাহাড়ের কোলে গড়ে নৈসর্গিক ঝরনা, হ্রদ, গহিন অরণ্য কিংবা সমুদ্রসৈকত। ফিরছেন দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুরাও।