নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আহাজারী: আমাদেরকে বাঁচান

0
91

শামসু উদ্দিন, টেকনাফ:
বর্ণবাদ এবং রোহিঙ্গা মুসলিম হবার একমাত্র অপরাধ। প্রায় ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার আরাকানের আয়তন। ৮০% শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস। বাকি ২০% শতাংশ রাখাইনসহ অন্যান্য সম্প্রদায়। প্রায় ১৩শত বছরের আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতা মøান করে দিচ্ছে রাখাইন নামক উগ্রপন্থি সম্প্রদায়। এ জন্য মিয়ানমার সরকার রাখাইন শত শত বছরের প্রচলিত আরাকানের নাম পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলে “রাখাইন রাজ্য” নাম করণ করে রোহিঙ্গাদের উপর দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন ও বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে, সে দেশের সামরিক জান্তা, উগ্রপন্থি রাখাইন ও সীমান্ত রক্ষী বিজিপিসহ অন্যান্যরা। অনুপ্রবেশকারী রোহিংগাদের মতে মিয়ানমারে অতীতে যত সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তার মধ্যে অংসান সুচী সরকার হচ্ছে, নিকৃষ্ঠ ও ঘৃনিত সরকার। যার বিরোদ্ধে সম্প্রতি পৃথিবী ব্যাপী সমালোচনা, প্রতিবাদ ও নিন্দার জড় উঠেছে। গোটা আরাকানে প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস। ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকে শুরু করে নাগরিক স্বাধীনতা পর্যন্ত তাদের খর্ব করেছে । যেন তারা পরবাসী। এ কথাগুলো বলেছেন, সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারী আরাকানের মংডু থানার উদং আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার দাউরা হাদীসের শিক্ষক মাওঃ আবুল হাশিম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জাতী মিয়ানমারে একটি বিশ ফোড়ায় পরিনত হয়েছে। যাহা রাখাইন জাতীরা সহ্ন্য করছেনা। আরাকান থেকে রোহিঙ্গা নিধন করে সেখানে রাখাইন রাজ্য স্থাপনে মিয়ানমার সরকার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এখন রোহিঙ্গা নির্ধনজজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আরাকানে সংখ্যাগষ্ঠি মুসলমান ব্যাতীত রাখাইন, হিন্দুসহ চার প্রকার জাতি বসবাস করছে নিরাপদে। শুধুমাত্র রোহিঙ্গারা দমন নিপীড়ন ও নিযাতনের শিকার হচ্ছে। শিক্ষক মাওঃ আবুল হাশিম বলেন, এ পৃথিবীতে কি রোহিঙ্গাদের স্থান নেই। রোহিঙ্গা কি? আসমীন থেকে এসেছে না বিদেশ থেকে এসেছে। আজ এসব প্রশ্ন আমাদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরাকান রাজ্য হচ্ছে, আমার এবং রোহিঙ্গাদের প্রিয় জন্মভূমি। এ জন্মভূমিতে বসবাস করেও অন্যান্য দেশের ন্যায় নাগরিক অধিকার থেকে আমরা চীরতরে বঞ্চিত। প্রতিনিয়তই আমরা অর্থাৎ রোহিঙ্গারা রাখাইনদের হাতে নিপীড়ন ও মাত্র সহ্ন্য করতে না পেরে পাশ্ববর্তী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছি। আরাকানের পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে প্রানভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আরাকানে ফিরে যাবে। প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও গোটা আরাকানে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও উগ্রপন্থি রাখাইনদের হত্যা, দমন, নিপীড়ন ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আগুনে জ্বলছে এখনো তাদের ঘরবাড়ী। এভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আহাজারিতে আরাকানের আকাশ বাতাসভারী হয়ে উঠেছে। মংডু কল্যাভাঙ্গা এলাকা থেকে আসা মৃত মোঃ শফির পুত্র ব্যবসায়ী মোঃ ছিদ্দিক (৭০) এবং একই এলাকার মোঃ ইউনুছের স্ত্রী রেখেনা বিবি (২৫) ২ সন্তান নিয়ে প্রাণভয়ে নাফ নদী পেরিয়ে শাহপরীরদ্বীপ থেকে টেকনাফ ষ্টেশন ছিদ্দিক মার্কেটে অবস্থান নেয়। এসময় স্বামী হারা রেহানা বিবি অজর নয়নে কেঁধে বলেন, আমার স্বামী মোঃ ইউনুছকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। এখন আমি যাব কোথায়? এমন আর্তি আমার। অপর দিকে অসুস্থ প্রতিবন্ধি মোঃ ছিদ্দিক বলেন, আমি একজন কল্যাভাঙ্গা এলাকার একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী হই। আমার সহায় সম্বল সবকিছু সামরিক জান্তারা কেড়ে নিয়েছে। এমন কি আমার ঘর বাড়ি পর্যন্ত জালিয়ে দিয়েছে। এমতবস্থায় পড়ন্ত বেলায় আমি যাব কোথায়? এমন হতাশা ও নিরাশার মধ্যে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। রাখাইন নির্যাতনে শিকার সম্প্রতি মিয়ানমার সামরিক জান্তার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোঃ আবুল হাশিম আরও জানায়, আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতনের পাশাপাশি হত্যাসহ নানা অপমানকর নির্যাতনের মূখে আমি স্ব-পরিবারে প্রাণভয়ে মুসলিম দেশ বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীরদ্বীপে পৌছার পর টেকনাফের ষ্টেশনে চলে আসি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভবিষ্যৎ জীবন আমার কিভাবে যাবে তা আল্লাহ’তালাই জানে। ওদের নির্যাতন না দেখলে কেউ এটি বিশ্বাস করবেনা। আমার জানা মতে মংডু থানায় চারটি পাড়া যথাক্রমে, শীলখালী, ধুমচি, চেরাংকাটা ও সোয়াব্রাং পাড়ার প্রায় ১২শত রোহিঙ্গা নরনারী ওদের হাতে নির্মম ভাবে খুন ও ঘুম হয়েছে।