নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেন মাশরাফি

0
87

সেই অমোঘ ঘোষণা এলো শেষতক। অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার শেষ হচ্ছে আজই। মানে, অধিনায়ক হিসেবে শেষবার মাঠে নামবেন তিনি সিলেটে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে।

তবে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও খেলোয়াড় হিসেবে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। ওয়ানডে সিরিজের আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ঘোষণা দিয়েছিলেন- অধিনায়ক মাশরাফির এটাই শেষ সিরিজ। এরপর নতুন অধিনায়ক বেছে নেয়া হবে। তারই জেরে মাশরাফির নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত।

২০১৪ সালের নভেম্বরে সাদা বলের অধিনায়ক হওয়ার পর মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ।

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’খ্যাত মাশরাফি মুর্তজা ৮৭ ওডিআই (৪৯টি জয় ও ৩৬টি হার) এবং ২৮টি ২০-তে (১০টি জয়) নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশকে। একমাত্র টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ২০০৯-এ কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ী হয়।

মাশরাফি মুর্তজার জাদুর ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট হারাতে চলেছে অভিভাবকতুল্য অধিনায়ককে। তার অতল মহিমা স্পর্শ করার সাধ্য নেই পরিসংখ্যানের চৌকস ডুবুরিরও। বিদায়ের বিউগল তিনি নিজে বাজাননি। এ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। শেষতক সেই অমোঘ ঘোষণা দিয়েই দিলেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আর থাকছেন না এই পোড় খাওয়া যোদ্ধা।

তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাবেন যথারীতি। ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি ভালো জানার কথা নয় কারও। মাশরাফি খোঁজ দিতে পারবেন ক্রিকেটমগ্ন বাংলাদেশের হৃদয়।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ নিয়ে আলোচনা চলে গেছে পেছনে। বড় হয়ে উঠেছে মাশরাফির অধিনায়ত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা।

শেষ ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের বিশ্রামে থাকা নিয়েও কথা চালাচালি হচ্ছে ঢের। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি নিশ্চয়ই ৫০তম জয় দিয়ে শেষটা রাঙিয়ে রাখতে চাইবেন।

সতীর্থরাও অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে নিজেদের নিংড়ে দেবেন। সেই সঙ্গে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে চেষ্টা করবেন তামিম, মাহমুদউল্লাহরা। সিলেটে অধিনায়ক মাশরাফির সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে উদগ্রীব গোটা বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি জানালেন, তিনি আর ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করবেন না। বলেন, ‘একটা মানুষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অন্তত কিছুটা সময় দেয়া উচিত।

১৫ বছর ধরে ক্রিকেট আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। আমার যত অর্জন, জীবনে যা কিছু করেছি, সব এ খেলাকে ঘিরে। তাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমার এটুকু সময় দরকার।’ বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। তার নেতৃত্বে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছে দল। ২০১৪ সালে তৃতীয়বার অধিনায়ক হওয়ার পর একটানা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। প্রথম নেতৃত্ব পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে। মাশরাফি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ায় পাকিস্তান সফর থেকে নতুন নেতৃত্বে খেলবে বাংলাদেশ। এই সিরিজে পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে একশ’ উইকেট নিয়ে দারুণ একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন আগেই জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফরের কথা মাথায় রেখে শেষ ওয়ানডেতে মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রাম দেয়া হবে। এজন্য দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সৌম্য সরকারকে। বিয়ের ছুটি কাটিয়ে তিনি কাল দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। মুশফিকের তাই আজ না খেলার সম্ভাবনা বেশি। কাল পুরো দল সিলেটে হোটেলে থাকলেও মুশফিক ঠিকই মাঠে একা একা অনুশীলন করেছেন। তার জায়গায় আজ অভিষেক হতে পারে নাঈম শেখ অথবা আফিফ হোসেনের।

এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতলেও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে পরিপূর্ণ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২২ রান করেও হারের শঙ্কায় ছিল দল। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ চার রানে জেতে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে দুশ্চিন্তা তাই বোলিং নিয়ে।

বোলিং আক্রমণে তাই পরিবর্তন আসছে। বিশেষ করে পেস বোলিং আক্রমণ নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে একাদশে ফেরাতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।

শেষ ম্যাচ হারলে বাংলাদেশ এক রেটিং পয়েন্ট হারাবে। সেক্ষেত্রে র‌্যাংকিংয়ে আটে থাকা শ্রীলংকার বিপক্ষে ব্যবধান কমে হবে দুই। সফরকারীরদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে বাংলাদেশের এক রেটিং বেড়ে হবে ৮৭।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে প্রথমদিকে ব্যাটসম্যানদের জন্য খেলা কিছুটা কঠিন থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে ভুগতে হয় বোলারদের। টস জিতলে দু’দলের অধিনায়কেরই বোলিং নেয়ার পরিকল্পনা। শিশিরও সমস্যা করতে পারে।

জিম্বাবুয়েকে শেষ ম্যাচে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন শেষদিকের ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড তিরিপানো। একশ’তম ম্যাচে মাঠে নামবেন সিকান্দার রাজা। সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারেন ক্রেগ আরভিন। জিম্বাবুয়ে যাই করুক না কেন, বাংলাদেশ মাঠে নামবে আজ মাশরাফির জন্যই।