পশুর কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে

0
176
ফাইল ফোট

এবার জবাই করা পশুর কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, গত বছরের অবিক্রীত চামড়া এখনও মজুত রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ পিস। আবার ব্যবসায়ীরা ঈদে ১ কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ পিস। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় অন্তত ২৫ লাখ পিস চামড়া কম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন তারা। এ বছর যুক্ত হবে আরো ১ কোটি ১৮ লাখ পিস চামড়া। সব মিলে কোরবানির মৌসুমে সারা দেশে চামড়ার মজুত দাঁড়াবে ১ কোটি ৭৮ লাখ পিস। যা একসঙ্গে এত চামড়া সংরক্ষণের সক্ষমতা নেই দেশের ট্যানারি শিল্পের।

ফলে এবার চামড়া নিয়ে অস্বস্থিকর পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের সম্ভাবনাও রয়েছে। এদিকে চামড়া রপ্তানিও কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ফলে চামড়ার দাম নিয়ে এখনই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও বরাবরের মতোই সরকার এ বছরও কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ গত বছরের বেশি কোরবানি হবে বলেও ধারণা করছে সংস্থাটি।

কোরবানির পশুর সংখ্যা বাড়লেও চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেন কমানো হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ। সংস্থাটির তথ্য মতে, দেশে এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে অন্তত ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অন্যদিকে, গত বছর ঈদে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৫ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রায় ৬০ লাখ পিস চামড়া এখনও অবিক্রীত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এবারের প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ পিস চামড়া। এ বাড়তি চামড়ার সংরক্ষণ নিয়েই এবার দুশ্চিন্তায় আছেন ট্যানারি মালিকরা। সংগঠনটির মতে, বছরে গড়ে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।
বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, গতবারের চামড়া মজুত বেশি থাকায় আমরা এবার কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি। সামনেই চামড়ার সবচেয়ে বড় জোগান আসবে। তখন বাড়তি চামড়া সংরক্ষণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হবে। এ কারণেই এবার চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার দাম কমেছে। আমরা চামড়ার দাম কমাতে বলেছিলাম। গত বছরের মতো দাম অপরিবর্তিত রাখার প্রভাব বাজারে পড়বেই।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আমরা ১ কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম। এর প্রধান কারণ গত বছরের চামড়া মজুত আছে। তা ছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছরের ৩৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে আড়তদারদের। এ অবস্থার মধ্যে বেশি চামড়া কিনে ঝুঁকি নিতে চাইবেন না আড়তদাররা।

অবশ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও সাভারের ট্যানারি মালিক, রাজধানীর পোস্তাগোলার প্রায় ৩০০টি কাঁচা চামড়ার আড়তসহ সারা দেশের আড়তদারদের প্রস্তুতি থেমে নেই। ট্যানারি মালিকরা নতুন চামড়া কারখানায় ওঠানোর জন্য জায়গা বের করছেন। পোস্তগোলার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার ভরা গরমে হচ্ছে কোরবানির ঈদ। তাই অতিরিক্ত গরমের কারণেও অনেক সময় সংগৃহীত চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। অস্বাভাবিক গরমে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবারও। গত বছর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয় বলে জানান তারা।
এদিকে চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্প পরিচালক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত সব ট্যানারি এখনও চালু হয়নি। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে প্লটের সংখ্যা ২০৫টি, শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৫৫টি। চালু ট্যানারির সংখ্যা ১২৩টি। পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৭৮টি ট্যানারিকে। সব ট্যানারি এখনও চালু না হওয়ায় চামড়া সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় শিল্পনগরীতে ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া আগামী সপ্তাহে আসতে শুরু করবে।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস, ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, চামড়ার দূষণ বন্ধ না হওয়ায় রপ্তানির বাজার হারাতে হচ্ছে। এ কারণে এখন ৬০ শতাংশ চামড়া মজুদ রয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতি হলে শুধু বর্জ্য দুরবস্থা নয়, পুরো চামড়া খাতে বিপর্যয় আসবে।
চামড়া রপ্তানি কমেছে: অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম দু’মাসে (জুলাই-আগস্ট) চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। চামড়া জাতীয় পণ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ফলে চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ২৬.২৬ শতাংশ। আর গত দু’মাসে চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৫৩ শতাংশ কম।