একজন জি কে শামীম

0
187

গোলাম কিবরিয়া শামীম। সবাই চেনে জি কে শামীম হিসেবে। কারও কারও কাছে পরিচিত টেন্ডার মুঘল শামীম হিসেবে। শুক্রবার প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার এফডিআর নথি, নগদ কোটি টাকা আর সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে শামীমের অপরাধ জগতের নানা চমকপ্রদ তথ্য। স্কুল শিক্ষক বাবার টানাপড়েনের সংসারে বেড়ে উঠা শামীম কিভাবে টাকার কুমির হয়েছেন তার ব্লু প্রিন্ট এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তার উত্থান কাহিনী এখন মানুষের মুখে মুখে। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে শামীম কোন সংগঠনেরই কেউ নন। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেকের সঙ্গে শামীমের ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনকি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে রয়েছে শামীমের ঘনিষ্ট ছবি। তার বিলাসী জীবন, ‘ভিআইপি প্রটোকলে’ চলাফেরার বিষয় এতোদিন প্রকাশ্যেই ছিল। কিন্তু কেউ কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের থেকে নির্দেশের পর তাকে পাকড়াও করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর একে একে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।

শামীমের বাবা আফসার উদ্দিন ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি সোনারগাঁও হাইস্কুল থেকে ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করেন। একই এলাকার একটি কলেজ থেকে ১৯৮৯ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। যুবদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে সান্নিধ্য পান বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার। এরপর থেকেই চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে হাতেখড়ি। শুরুতে শিক্ষাভবন কেন্দ্রিক টেন্ডারবাজি করতেন। একসময় শিক্ষা ভবন কেন্দ্রীক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। টেন্ডার পাওয়ার জন্য পেশি শক্তির ব্যবহার শুরু করেন। ওই সময় টেন্ডার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ-গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। যার নেপথ্য ছিলেন এই শামীম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগের রাজনীতিতে নাম লেখান শামীম। এরপর আর তার পেছনে তাকাতে হয়নি। যুবলীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠেন টেন্ডারবাজিতে। বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের ম্যানেজড করে বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন। এখন ঢাকার টেন্ডারমোঘল হিসাবেই তিনি পরিচিত। টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে শতশত কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ঠিকাদার। এই মন্ত্রণালয়ে যত বড় বড় টেন্ডার হত তার পুরো নিয়ন্ত্রণই ছিল তার কাছে। ছোটখাটো টেন্ডারের দিকে তার কোনো নজর ছিল না। অন্তত একশো কোটির ওপরের টেন্ডারে তার নজর থাকত। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সব ঠিকদারের নেতা ছিলেন তিনি। তবে প্রতিটি টেন্ডারে তার নিজের প্রতিষ্ঠান বা পছন্দের প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ছিল। পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াই শামীমের প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার জন্য তৈরি করা হত। মাঝেমধ্যে ২/১টি কাজ যদি অন্য প্রতিষ্ঠান পেত সেখান থেকেও নিজের ভাগ নিয়ে আসতেন। সূত্র বলছে, শুধুমাত্র গণপূর্ত মন্ত্রলালয় থেকে এক যুগে শামীম অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। আর এসব কাজ পাওয়ার জন্য তিনি সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব, প্রকৌশলী, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে। তাদেরকে লাভের একটি ভাগ দিতেন। কারণ অনেক সময় তারা টেন্ডারের মূল্যও বাড়িয়ে দিতেন।

রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশে গ্রিনসিটি আবাসিক এলাকা নির্মাণের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি আবাসিক ভবন নির্মাণের ওয়ার্কঅর্ডার পাওয়ার পর টেন্ডার মূল্যের ৫ শতাংশ বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুষ দিতে হয়েছে। এরমধ্যে সাবেক এক মন্ত্রী, সচিব, সাবেক প্রকৌশলীসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। কিন্তু বালিশ কাণ্ডের পর শামীমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জি কে বিপিএল কালো তালিকাভূক্ত হয়। কারণ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রূপপুরের ওই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শামীমের প্রতিষ্ঠানই। একাধিক সূত্রে জানাগেছে, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে শামীমের সখ্যতা ছিল। এ বিষয়টি সবাই খুব ভাল করে জানতো। মূলত এই প্রতিমন্ত্রীর কারণেই শামীম একের পর এক টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিত। আর কামিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, বর্তমানে ১৬টি বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেকেবি এন্ড কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের কব্জায়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার কাজ করছে জেকেবি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর আশকোনায় র?্যাবের সদর দপ্তর, গাজীপুরের পোড়াবাড়িতে র?্যাব ট্রেনিং সেন্টার, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবন, পঙ্গু হাসপাতালের ভবন, এনজিও ভবন, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন, বিজ্ঞান জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ভবন, সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ক্যাবিনেট ভবন, বাসাবো বৌদ্ধমন্দির, পার্বত্য ভবন, মিরপুর-৬ নম্বরের স্টাফ কোয়ার্টার, সেবা মহাবিদ্যালয় এবং মহাখালী ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ প্রতিষ্ঠানটি করছে। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০০ কোটি টাকার কাজ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ৪০০ কোটি টাকার কাজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ, রিসার্চ এন্ড হসপিটালে (মহাখালী ডাইজেস্টিভ) ২০০ কোটি টাকার কাজ, এজমা সেন্টারে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ। এছাড়া জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ, বাংলাদেশ সেবা মহাবিদ্যালয়ে ২০-২৫ কোটি টাকার কাজ, গাজীপুর র‌্যাব ট্রেনিং স্কুলের ৫৫০ কোটি টাকার কাজ, বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ৩০০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজ, সচিবালয়ের ক্যাবিনেট ভবণ নির্মাণে ১৫০ কোটি টাকার কাজ, এনবিআরের ৪০০ কোটি টাকার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের ১০০ কোটি টাকার কাজ, পিএসসিতে ১২ কোটি টাকার কাজ ও এনজিও ফাউন্ডেশনে ৬৫ কোটি টাকার কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শামীম সরকার দলীয়, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, দেশ পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। যে মন্ত্রণালয়ের যে কাজ আসত ওই মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার নিতেন। তবে শামীমকে সব কাজেই শেল্টার দিতেন যুবলীগ দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতা। তাদেরকে নিয়েই মূলত টেন্ডারবাজি করতেন। এছাড়া বিদেশ থেকে সহযোগিতা করতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। প্রতিটা টেন্ডার নিতে পেশি শক্তি প্রদর্শনে জিসানের ভুমিকা থাকত। এজন্য টাকার ভাগও বিদেশে জিসানের কাছে পাঠিয়ে দিতে হত। জিসান ছাড়াও পলাতক আরও কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শামীম তার অবস্থান তুলে ধরতে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখতেন। শুক্রবার তার অফিসে অভিযান চলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সূত্র বলছে, শামীমের মালিকাধীন জি কে বিপিএল প্রতিষ্ঠানের কাজই ছিল টেন্ডারবাজি করা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, শিক্ষাভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ণ বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, স্বাস্থ্য প্রকৌশলে টেন্ডার তার কব্জায় ছিল। এসব দপ্তরের কোনো টেন্ডার হলে শামীমের প্রতিষ্ঠানই অংশগ্রহণ করত। স্বচ্ছতা বুঝানোর জন্য তার নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করাত। তার সঙ্গে পরামর্শ না করে অন্য কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারত না। এসব কাজ তার অস্ত্রধারী সহযোগীরাই করত। এজন্য ভয়ে কেউ কথা বলত না। এমনকি ই-টেন্ডারেও শামীমের নিয়ন্ত্রণ ছিল। সূত্র বলছে, শামীমের একটি টর্চারসেলও আছে। টেন্ডার নিয়ে কোনো ঠিকাদার তার মতের বাইরে গেলে টর্চারসেলে এনে সেই ঠিকাদারের সঙ্গে বুঝাপড়া করেন। নিজে টেন্ডার ভাগিয়ে এনে যদি কাউকে দিতেন তবে সেখান থেকে টাকার ভাগ নিতেন।

সূত্র জানিয়েছে, শামীম পেশি শক্তি প্রদর্শন করেই টেন্ডারবাজি করতেন। এজন্য তিনি বিশাল সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী পুষতেন। তিনি যখন কাজের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে প্রবেশ করতেন তখন তার প্রটোকল দেখেই সবাই তাকে সমীহ করত। দপ্তরের বড় বড় কর্মকর্তা, মন্ত্রীদের কক্ষে তার অবাধ যাতায়াত ছিল। কোথাও গিয়ে তাকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি।
শামীমের ভাই গোলাম হাসিব নাসিম জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন ঢাকার বাসাবো ও বনশ্রী এলাকায়। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে বাসাবোর কদমতলা, ডেমরা, দক্ষিণগাঁও এলাকায় বাড়ি করেছেন। গুলশান, নিকেতন ও বনানী পুরনো ডিওএইচএস এলাকায় তার ডজন খানেক ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া সোনারগাঁও, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। গুলশান, নিকেতন ও বনানী পুরনো ডিওএইচএস এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নিকেতন ও বাসাবো এলাকায় অন্তত ১০টি বহুতল ভবন আছে। বাসাবোতে ১টি বড় বানিজ্যিক প্লট, বান্দরবানে তিন তারকা মানের একটি হোটেল রয়েছে। অভিযানের সময় তার অফিস থেকে নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। তবে তার কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আরও কয়েক শত কোটি টাকা পাওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সিঙ্গাপুরে তার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ডে বিপুল অর্থের খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে তার বড় ধরনের বিনিয়োগ আছে। কয়েকটি দেশে তার বাড়ি ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি রয়েছে।

শামীম ১০ দিনের রিমান্ডে: অবৈধ অস্ত্র ও মাদক মামলায় আলোচিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় ৫ দিন ও মাদক মামলায় ৫ দিন। এছাড়া সাত দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম তাদের ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় শামীমের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পালাতে চেয়েছিল জি কে শামীম

বিপুল অর্থ, এফডিআর, নথি ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার জি কে শামীম দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। ক্যাসিনো ডন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গ্রেপ্তারের পর দিনই ঘনিষ্টজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশ ছাড়ার সহযোগিতা চান শামীম। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ পাড়ি দিতে শামীম বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আগে থেকেই তথ্য থাকায় তার ওপর নজরদারি ছিল র‌্যাবের। তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন তা নজরে রাখছিল র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম। র‌্যাব সূত্র জানায় বিদেশ যাওয়ার সুযোগ খুজতে শুক্রবারও তার কার্যালয় খোলা রেখেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে ওই দিনই অভিযান চালানো হয়। র‌্যাব সূত্র জানায় শামীম যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ বার্তা দেয়া ছিল। শামীম ছাড়াও তালিকায় থাকা আরও বেশ কয়েকজন নেতার নামও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেয়া হয়েছে। তাদের দেশত্যাগের বিষয়েও নজরদারি রয়েছে।

এর আগে গ্রেপ্তার ক্যাসিনো ডন খালেদ মাহমুদও সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তিনি দেশ ছাড়তে পারেননি। শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার কার্যালয় থেকে বিপুল অর্থ, এফডিআর নথি, মাদক এবং অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ঢাকায় সরকারি কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শামীম। গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য বের হয়ে আসছে। এর আগে বুধবার মতিঝিলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব। এর নিয়ন্ত্রণকারী যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ক্লাব থেকে বিপুল ক্যাসিনো সামগ্রি, নগদ অর্থ ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এটিসহ অন্তত ১৭ টি ক্যাসিনো ক্লাবের সঙ্গে খালেদ জড়িত। এসব ক্লাব থেকে মাসে কোটি টাকা আয় করতেন তিনি। এছাড়া চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ রয়েছে খালেদের বিরুদ্ধে। খালেদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর থেকে মূলত আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছে।