পাহাড় কাটার মহোৎসব

0
121

:: ইমরান এমি, আনোয়ারা প্রতিনিধি ::

kepzএই যেন পাহাড় কাটার মহোৎসব। প্রশাসন আর পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে কেইপিজেড। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেয়া নীতিমালা অবজ্ঞা করেই চলছে কেইপিজেড’র পাহাড় কাটা। দেয়াং পরগনার ইতিহাস খ্যাত আনোয়ারা ও পটিয়া সীমানায় অবস্থিত দেয়াং পাহাড় ধীরে ধীরে সমতল ভূমিতে পরিণত হতে চলছে । এরই মধ্যে কেইপিজেড’র অধিভূক্ত লাল পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলেছে কর্তৃপ। লাল পাহাড়ের মাঠি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে সিইউএফএল সংলগ্ন বন্দর মৌজা ও গুয়াপঞ্চক এলাকার পানির টাংকি এরয়িা সংলগ্ন সমতল ভূমি।

নির্বিচারে পাহাড় কাটতে যাতে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে না হয় এই জন্য পুরো কেইপিজেড’র চারপাশে নিয়োজিত করা হয়েছে বিশেষ বাহিনী এমএসটি(মোবাইল সিকিউরিটি টিম)। কর্র্তৃপরে নির্দেশে পাহাড় কাটার সময় এই সিকিউরিটি টিম কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনকালে কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করতে চাইলেও তাঁেদরকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না।

দেয়াং পরগণার ইতিহাস গ্রন্থের লেখক সাংবাদিক জামাল উদ্দিন জানান, দেয়াং পাহাড় চট্টগ্রামের ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক নির্দশন। এর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। কিন্তু সবকিছু যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি জানান, দেয়াং পাহাড় মাটিতে মিশে যাওয়ার অর্থ হলো এর ইতিহাস চিরতরে হারিয়ে যাওয়া। তিনি অবিলম্বে পাহাড়কাটা বন্ধ করে দেয়াং এর ইতিহাসকে রা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কেইপিজেডে সম্প্রতি চালু হওয়া কর্ণফুলী সুজ ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তর পাশে অবস্থিত বহুল পরিচিত লাল পাহাড়। এর দেিণ গড়ে উঠেছে একই ইন্ডাস্ট্রিজের কয়েকটি ইউনিট শাখা। এই শাখাগুলো নির্মাণ করার পরপরই লোক চুর আড়ালে পড়ে যায় পাহাড়ের দৃশ্য। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেটে সাবাড় করা হয়েছে লাল পাহাড়। লাল পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে বন্দর মৌজার বিশাল সমতল ভূমি। একই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কেইপিজেডে অবস্থিত শত বছরের পুরনো কবরস্থান,শ্বশান ও ইদগাহ’র জায়গা।

এদিকে পাহাড় কাটার মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে কেইপিজেড সংলগ্ন উত্তর গুয়াপঞ্চক এলাকার দুইশত বছরের একটি পুরনো শ্বশান। এর প্রতিবাদে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে শ্বশান রার দাবিতে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। শ্শাান রার দাবিতে বিতরণ করা হয়েছে পোস্টার ও লিপলেট।

নির্বিচারে পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জাফর আলম জানিয়েছেন, আমরা কেইপিজেড কর্র্তৃপকে পাহাড় কাটা বিষয়ে একটি লেভেল প্লানিং দিয়েছি, তারা যদি আমাদের দেয়া নীতিমালা না মানেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, আমাদেরকে না জানিয়ে তাঁরা কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবেনা। এব্যাপারে মন্ত্রানালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে।

তবে, পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন নীতিমালা যে কেইপিজেড কর্র্তৃপ তোয়াক্কা করছেনা , তা লাল পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখলেই বুঝা যায়। এদিকে, কেইপিজেড’র বর্তমান এমডি ব্রিগেডিয়ার (অব:) হাসান নাসিরের নির্দেশ ও কথামতো পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে বলে জানান, আনোয়ারা উপজেলার ১নং বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওয়াব আলী। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা ছোটকাল থেকে লাল পাহাড় দেখে আসছি। কিন্তু এখন সে পাহাড় আর নেই। তিনি আরও জানান, হাসান নাসিরের কালো থাবায় ত বিত হচ্ছে দেয়াং পাহাড়। তিনি পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে পাহাড় কাটা নিয়ে জানতে কেইপিজেড’র জিএম হাসান নাসিরের সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।