পাহাড় ধসের ঝুকিতে বান্দরবানে এখনো লক্ষাধিক মানুষ

0
75

নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের মাইকিং
পাহাড় ধসের ঝুকিতে বান্দরবানে এখনো লক্ষাধিক মানুষ ১
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥
পাহাড় ধসে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানে প্রতিবছর প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। জীবনের ঝুকি নিয়ে এখনো পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্নভাবে বসবাস করছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ঝুকিপূর্ন বসতিগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসন, পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। দূর্গমাঞ্চল গুলোতে মসজিদ, ক্যায়াং এবং মন্দিরের মাইক ব্যবহার করে লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে বলা হচ্ছে। চলতি মাসেও জেলা সদরের ইসলামপুর, লাঙ্গীপাড়া, লামা উপজেলার আজিজনগরসহ সাত উপজেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি বিধস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে আজও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখাগেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাত উপজেলায় জীবনের ঝুকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) এখনো বসবাস করছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। বেঁেচ থাকার তাগিদে সদর উপজেলার কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, কালাঘাটা, লাঙ্গিপাড়া, বালাঘাটা, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়া পাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিএন্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলছে হাজার হাজার পরিবার। বসবাসের প্রয়োজনে অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষ নিধণের কারণে ঘটছে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি দীর্ঘদিনেও। তবে পাহাড় ধসের ঝুকিতে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে পুর্নবাসনের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন প্রশাসন। জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, পার্বত্যাঞ্চলের অধিবাসী যারা সকলেই আমরা পাহাড়ে বসবাস করি। কিন্তু সবাই ঝুকিতে বসবাস করে না, কর্মসংস্থানের জন্য বাইরে থেকে আসা ভাসমান গরীব লোকজনরা ঝুকিপূর্নস্থানগুলোতে বসবাস করছে। ঝূকিপূর্ন বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাহাড়ের উপযোগী পাহাড়ী মডেলে প্রায় তিন লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছোট্টছোট্ট ঘর তৈরি করে আশ্রয়ন প্রকল্পে পূর্নবাসন করা হবে। অতিঝুকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনদের প্রাথমিকভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে পাহাড় ধসের ঝুকিতে কতজন লোকজন রয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তালিকা তৈরির জন্য ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সরকারী সূত্রমতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরের মারাগেছে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় মারাগেছে শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারাগেছে ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় মারাগেছে ২ জন এবং ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন মারাগেছে। এতকিছুর পরও বান্দরবানে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং পাহাড়ের ঢালুতে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন। প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এদিকে ইটভাটা স্থাপনকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন এবং নির্বিচারে বৃক্ষ ও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না বলে দাবী সচেতন মহলের। বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জানান, পাহাড় ধস তাৎক্ষনিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়ার একটি ফসল। ভূমি ক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হচ্ছে-নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করা। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি মাটির গঠনকে দূর্বল করে দেয়। পাহাড় ধস বন্ধে বৃক্ষ নিধণ এবং পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।