পুরোদমে চলছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র প্রস্তুতি

0
144

পুরোদমে চলছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কারণে এবারের মেলা ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে।

বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আটজন বাঙালির আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিবছর মাসব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করা হয়।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। সে সময় পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন সাহসী শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়।

এ বছর মেলায় আরো বেশি প্রকাশনা ও স্থান বড় করাসহ বইপ্রেমীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার প্রথম দিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধননী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও বিতরণ করা হবে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।

এদিকে বাংলা একাডেমি চত্বর এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার বর্ধিত অংশে স্টল প্রস্তুত ও অবকাঠামো নির্মাণে শ্রমিকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

যেসব প্রকাশনা সংস্থা বরাদ্দ পেয়েছে, তারা এরই মধ্যে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। অন্যদিকে, রাজধানীর বাংলাবাজার ও পল্টন এলাকার ছাপাখানায় এখন নতুন বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের শেষ মুহূর্তের কাজের ব্যস্ততা দেখা গেছে।

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত রয়েছি।’

‘মেলার সব আনুষ্ঠানিকতা আমরা সফলভাবে শেষ করেছি। এবার আগে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রকাশকরা তাঁদের স্টলগুলো সঠিকভাবে সময়মতো নির্মাণ করতে পারেন। স্টলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মেলার স্থানও বাড়ানো হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

জালাল আরো বলেন, ‘এবারের মেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য উৎসর্গ করা হবে এবং মেলায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্নভাবে তাঁর জীবন ও কর্মের প্রদর্শনী করা হবে।’

বাংলা একাডেমির পরিচালক জানান, ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮৩০টি স্টল ৫৫০ জন প্রকাশকের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ বছর মেলার জন্য নির্ধারিত স্থান আট লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে তিন লাখ বর্গফুট বেশি। এ বছর বাংলা একাডেমিসহ ৩৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৪টি।

বাংলা একাডেমি চত্বরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিসরীয় লেখক ও কবি মহসিন আল আরিশি সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

বইমেলা শুরু হওয়ার আগে লেখক এবং প্রকাশকরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বই প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এক মাসের জন্য মেলার একটি সুন্দর অনুষ্ঠান উপস্থাপনে প্রস্তুত রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী’ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা শুরু হয়েছিল। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করার জন্য ১৯৭৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। পরে এটির নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ এবং ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র সূচনা হয়।

রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বইমেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। >>ntv