পোড়ামনের শোক ভুলিয়ে দেয় মনপুরা!

0
72

সবুজ ধানের ক্ষেত, সেই ক্ষেত থেকে ভেসে আসা আরও সবুজ বাতাস, সেই বাতাসের ঢেউ বিস্তৃত জলের বুকে, আর জলের সাথে আকাশের নীলের ভীষণ মাখামাখি। এইসব আমাদের বাংলাদেশের রূপ। রূপের এই গভীরতম এক ঝকঝকে ছবি বুকে নিয়ে জেগে আছে দ্বীপ ভূমি মনপুরা।

মনপুরা ভোলা জেলার বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। মেঘনার কোলে চর্তুদিকে মেঘনা সবুজ শ্যামল ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। নদীনালা আর চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগনে সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতে ভরপুর এই দ্বীপটির অবস্থান একটু দুর্গম হলেও আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন রূপ দেখতে এবং তার স্বাদ নিতে চান তবে এই দ্বীপে বেড়াতে আসতে পারেন। এখানে সকাল বেলার সুর্য যেমন ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়।

সদরঘাট থেকে মনপুরা যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২ টা লঞ্চ বরাদ্দ রয়েছে – ৪ টা লঞ্চ রোটেশন পদ্ধতিতে প্রতিদিন ২ টা করে ছেড়ে যায়, প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ মিনিটও সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট। সাধারণত শীতের সময়েই সকলে যায়, কারণ বর্ষায় নদী উত্তাল থাকে। কিন্তু আপনি যদি নদীই ভ্রমণ করতে চান, সে তো বর্ষাকালেই যেতে হবে।

গিয়ে উঠবেন হোটেলে। খুব ভালো না হলেও মোটামুটি পছন্দের হবে এবং তা অবশ্য সাশ্রয়ের মধ্যেই পাবেন।

সামুদ্রিক মাছ, মাংস, মোটা চালের ভাত, রুটি সব ই পাবেন,তবে প্রি – অর্ডার করে রাখা ভালো। এখানে খাবারের রীতিমত আইটেম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার না খেলে না মহিষের কাচা দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা।

যা কিছু দেখবেন, ৪নং দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়ন ম্যানগ্রোভ বন : উপজেলা সদর থেকে ২০কি.মি. দক্ষিনে মেঘনা নদীর কোল ঘেষে চর পিয়াল আর চর পাতালিয়া নামে দুটি চর এর ভিতরের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর আশে পাশে বিকেল বেলায় ঘুরতে গেলে হরিনের পাল দেখা যায়। এক কথায় এটি হরিনের অভয় বিচরণ ভুমি। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে ৫ কিমি. দক্ষিনে পঁচা কোড়ালিয়া বাজার সংলগ্ন ওয়াপদা বেড়ীবাধের কাছে গেলেই দেখা যায়।

মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন : হাজিরহাট সদর থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ৫ মিনিটে ল্যান্ডিং স্টেশনে যাওয়া যায়। মনপুরার প্রধান শহরের প্রায় ৫ শত গজ পশ্চিমে মেঘনা নদীর কিনারায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয় ল্যান্ডিং স্টেশনটি। ২০০৫ সালের শেষের দিকে বরিশালস্থ মেসার্স রুপালী বিল্ডার্স ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ শুরু করে। যাত্রীবাহী সী-ট্রাক সহ অন্যান্য লঞ্চ-নোঙ্গরের পাশাপাশি যাত্রীদের উঠানামায় দারুন সুবিধা হবে ভেবে ল্যান্ডিং ষ্টেশনটি নির্মিত হয়। মেঘনার প্রচন্ড স্রোতের তীব্রতায় ল্যান্ডিং স্টেশনের সামনের ৪টি পিলার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। একপর্যায়ে পিলারগুলো নদী থেকে উঠিয়ে পুনরায় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। পরবর্তীতে কাজও সম্পন্ন করা হয়। সী-ট্রাকসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী লঞ্চ , ট্রলার পিলারের সাথে বেধে নঙ্গর করে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটি নির্মিত হলেও বর্তমানে সে ব্যাপারে কোন কাজে আসছেনা।

উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন ক্রসডেম এলাকা : উপজেলা সদর থেকে ৫ কিমি: দক্ষিনে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন। অত্র ইউনিয়নের শুরুতেই ক্রসডেম এলাকা । এখানেই হরিনের বিচরণ। এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।রিক্সা , মোটর সাইকেল,দিয়ে যাওয়া যায়। মনপুরা উপজেলার একটি পর্যটন এলাকা । ক্রসডেম এলাকা। এখানে প্রায় সময় হরিন দেখা যায়। এবং প্রতিদিন সূর্যাস্ত দেখা যায়। মনপুরাবাসী একদিকে নিরাশ হলেও অন্যদিকে বিকালের আড্ডায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন ল্যান্ডিং স্টেশনকে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী বিনোদন কেনদ্র হিসেবে এখানে ঘুড়তে আসে। পড়ন্ত বিকেলে এখানকার আড্ডায় পর্যটনের একটি উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন সূর্য অস্ত যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য। এখানকার হাজার হাজার মানুষের মনকে প্রফুল্ল করতে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই স্থাপনাটি ।

চৌধুরী প্রজেক্ট : মনপুরা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে রিক্স্রা কিংবা মোটরসাইকেল যোগে চৌধুরী প্রজেক্টে যাওয়া যায়। এছাড়া শীত মৌসুমে এর চিত্র পাল্টে যায়। সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলে যেন নতুন প্রাণ জেগে ওঠে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন সাগর কন্যা মনপুরা অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষের সমাহার দেখে প্রথমে একে ঠিক চর মনে হবে না। যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া।

ক্যাম্পিং করার জন্যও আদর্শ জায়গা মনপুরা। পুরো দ্বীপে যেখানে মন চায় সেখানেই তাঁবু টাঙ্গানো যাবে, জন্তু জানোয়ারের কোনো ভয় নাই, চোর ডাকাতের বালাই নেই। একটা ভালো জায়গা দেখে তাবু ফেলে নিন। তেমন কিছুই নেয়া লাগবে না, সবই পাওয়া যাবে, এরপরও যদি কিছু লাগে তাহলে বাজারে পাওয়া যাবে।