প্রকৃতির সঙ্গে অবকাশযাপন

0
175

বালুর ওপর ছোট্ট একটা চৌবাচ্চা। তাতে ফুটে আছে নীলপদ্ম। কাছেই লম্বা একটা কনটেইনারের গায়ে বড় বড় কাচের জানালা। চারদিক থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে ভেতরে। এটা রেস্তোরাঁর একাংশ। অন্যদিকে গাছপালা আর লতাগুল্মে ভরা ঝোপের ফাঁকে ছোট ছোট বাড়ি।
আধুনিক সুবিধাসহ সাজানো–গোছানো। সমুদ্রের ঢেউ গুণে একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় এখানে! মারমেইড বিচ রিসোর্টের এই অভিজ্ঞতা আজীবন মনে রাখার মতো।
কাজের ব্যস্ততা থেকে দুদিনের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন মারমেইড বিচ রিসোর্টে। তবে নিখোঁজ হয়ে নয়, কাজের বাইরে আয়েশ করে সময় কাটাতে, নিজেকে আরেকটু চাঙা করতে। কক্সবাজার শহরের কাছের সৈকতগুলোতে এই সময়ে পর্যটকের ভিড় থাকে বেশি। তাই কক্সবাজারে গিয়ে যাঁরা একটু নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র উপভোগ করতে চান, হারিয়ে যেতে চান বিশালতার মাঝে, তাঁদের জন্য আছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট। সমুদ্রের বিশালতা উপভোগের সুন্দর আয়োজন। প্রকৃতি যেখানে নিজের মতো করে বেড়ে উঠেছে। প্রকৃতিকে নষ্ট না করে ছুটির সময়টা নিরিবিলি কাটিয়ে দিতে পারেন শুয়ে-বসে আর খেয়ে। কক্সবাজার শহর থেকে দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ১৬ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই পেঁচার দ্বীপে এই রিসোর্ট।
থাকার ঘর, আপন পর
অনেকেই নিজের বিছানা ছেড়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। ঠিক আরাম পান না। তবে মারমেইড বিচ রিসোর্টে থেকে দেখতে পারেন। রিসোর্টের ঘরগুলো আপনার আপন মনে হবে। এখানে নানা আকারের ৩০টি ঘর আছে থাকার জন্য। পুরো পরিবার থাকার মতো আছে বিশাল ভিলা। সুইমিং পুলসহ কিছু বিলাসবহুল ঘর আছে। বাড়িগুলো তৈরিতে স্থানীয় লোকজনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চেয়েছে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। ভেতরে আরামদায়ক বিছানা, সোফা, টেবিল ও চেয়ারে আছে শৈল্পিক ভাবনা। এটি বোঝা যাবে ঘরের সামনে রাখা পা ধোয়ার বড় মাটির পাত্র থেকে খাবারের টেবিল সবখানে।
আপ্যায়নে আন্তরিকতা
রিসোর্টে প্রবেশের পর থেকেই কর্মীদের আন্তরিকতা মুগ্ধ করবে আপনাকে। নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে সামনে আসতেই তাজা ফুল আর লতায় বানানো মালা দিয়ে বরণ করে নেবে আপনাকে। অভ্যর্থনাকর্মীর কাছে গেলেই মিষ্টি হাসি দিয়ে আপনার ফরমালিটি শেষ করে দেবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এর ফাঁকে আপনার হাতে এসে যাবে স্বচ্ছ সাজানো গ্লাসে ডাবের পানি। এটাই আপনার ওয়েলকাম ড্রিংক।
১২ একর জায়গার ওপর এই রিসোর্টের ভেতরে সরু পাকা আঁকাবাঁকা রাস্তা আছে। তার পাশে পাশে আছে সাজানো মাটির পাত্রে পানির ওপর ভাসানো ফুল। ডানে–বামে যেকোনো কর্মীকে দেখলেই ডেকে নিতে পারেন আপনার সাহায্যের জন্য। হাসিমুখে আপনাকে সাহায্য করবেন তাঁরা।
খাবার টেবিলে গেলেও একই রকম সহায়তা পাবেন। রিসোর্টে দিন–রাত সারাক্ষণ সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন কর্মীরা। রিসোর্টে ঢোকার পরই একটা ছোট্ট স্যুভেনির শপ আছে। যেখান থেকে দেশীয় এবং কক্সবাজারের স্থানীয় স্মারক কিনতে পারবেন যে কেউ।
মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, মারমেইডে সাধারণত বিদেশি অতিথি বেশি আসেন। দেশি অনেক প্রতিষ্ঠানও নানা আয়োজন এখানে করে থাকে। তাই পরিবেশবান্ধব এই রিসোর্টে অতিথিদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
কখন কী খাবেন
সকালের নাশতা মিলবে বিনা মূল্যে, তাও আবার বুফে। কর্নফ্লেক্স থেকে শুরু করে খিচুড়ি, পরোটা, তাজা ফলের রস, ফলমূল, পিঠা বা বিদেশি পদ— কী নেই নাশতার তালিকায়! কুচি বরফের খোলা বাক্সের মধ্যে কাচের বোতলে সাজানো আছে ঠান্ডা দুধ, তরমুজ, শশা, পেঁপে বা গাজরের জুস। চা–কফিও ঢেলে নিতে পারবেন পছন্দমতো। দুপুর ও রাতের খাবার বেছে নিতে হবে তালিকা দেখে। তবে সমুদ্রের সামনে বসে মুরগির হাড্ডি চিবোনোর চেয়ে সামুদ্রিক খাবার বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
কক্সবাজারের তরতাজা সামুদ্রিক মাছের স্বাদ পাবেন এখানে। মিলবে নানা স্বাদের পিৎজা। নিরীক্ষাধর্মী খাবারে মন না থাকলে দেশি খাবার তো আছেই। সাদা ভাতের সঙ্গে নানা রকম ভর্তা, ভাজি, ডাল সবই মিলবে। এসব খাবার পরিবেশনেও আছে বৈচিত্র্য। অনেক দর্শনার্থী শুধু দুপুর বা রাতের খাবার খেতেও মারমেইডে আসেন।
খরচাপাতি
কক্সবাজারে নেমে সিএনজি বা টুকটুকে (স্থানীয় পরিবহন) ৩০০ টাকার মতো ভাড়া দিয়ে আসা যাবে মারমেইড বিচ রিসোর্টে। এখানে রুম আছে কয়েক ধরনের। সুবিধা অনুসারে ১ বেডরুমের বিচ বাংলোর ভাড়া পড়বে ১২ হাজারের কিছু বেশি, বিচ ভিলার ভাড়া ১৫ হাজার ৯৪০++, ২ বেডরুমের ফ্যামিলি বিচ ভিলার খরচ ২৫ হাজার++, ২৬ হাজার++ টাকায় পাওয়া যাবে মারমেইড পুল স্যুইট, এছাড়া ৩৬ হাজার++ টাকার ভিলাও আছে এখানে। খাবারের মেন্যু দেখে ঠিক করে নিতে পারেন কোন বেলায় কী খাবেন। খরচ হবে সেইমতো।
এ ছাড়া স্পা ও লন্ড্রি সুবিধা মিলবে নির্ধারিত দামে।