প্রকৌশল বিভাগের সাথে মেয়রের মতবিনিময়

0
53

মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন ৪ আগষ্ট ২০১৫খ্রি. মঙ্গলবার বিকেলে কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল (সিভিল, যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ) বিভাগের প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপ সহকারী প্রকৌশলী, সড়ক ও সড়কবাতি তদারককারীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় মেয়র প্রকৌশল সিভিল, উন্নয়ন পরিকল্পনা, যান্ত্রিক ও বিদ্যুৎ এর সবগুলো প্রতিষ্ঠান ও ডিভিশন ওয়ারি খুটি নাটি বিষয়গুলো খতিয়ে খতিয়ে তথ্য উপাত্য জানার চেষ্টা করেন। মেয়র সিভিল, যান্ত্রিক ও বিদ্যুতের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির তথ্য উপাত্যও জানতে চান। মতবিনিময়কালে মেয়র বলেন, সিভিলের উন্নয়ন কাজ সন্তোষজনক নয়। কাজের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, এ ছাড়াও বিগত অর্থবছরের বহু উন্নয়ন কাজ আরো সমাপ্ত হয়নি। এমনকি কাজ শেষ হওয়ার আগেই নির্মিত সড়কসমূহ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি উন্নয়ন কাজের গুনগতমান সঠিক রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মান নির্ণয় করার জন্য ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠা করা হবে, ব্যবহৃত বিটুমিন ইষ্টার্ণ রিফাইনারী থেকে সরাসরি ক্রয় করতে হবে। উন্নয়ন কাজের ইট, বালি, সিমেন্ট, রড ইত্যাদির মূল্য পুন: নির্ধারন করতে হবে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের চলমান সকল উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের ডেকে কাজ আদায় করে নিতে হবে। যারা ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হবে তাদের ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করতে হবে। ঠিকাদারদের নিবন্ধন ও নবায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম গরমিল দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দায়ী করা হবে। সিটি মেয়র বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া ই-টেন্ডারের আওতায় আনতে হবে, টেকসই রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। গুরুত্বের বিবেচনায় সিসি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। তিনি ৪১ টি ওয়ার্ড কার্যালয়, ঝঁকিপূর্ণ ভবন জরিপ করে রিপোর্ট প্রদানসহ ৪১টি ওয়ার্ডের কাঁচা রাস্তা, ব্রীক সলিং রাস্তা, কার্পেটিং রাস্তা, নালা-নর্দমা ইত্যাদি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমস্যা নিরুপন এবং সমাধানের কর্মপরিকল্পনা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এ সকল রিপোর্ট নির্ভুলভাবে তৈরী করে এক সপ্তাহের মধ্যে মেয়র বরাবরে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। মেয়র সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়ের করা যাবতীয় মামলা তুলে নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিধি বিধানের আওতায় সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসন চলবে। কোন ধরনের অনিয়ম চলবে না। যার যার প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পে-স্কেল যথানিয়মে কার্যকর হবে। অস্থায়ীদেরও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন, আন্তরিক ও সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হবে। সেবার মানসিকতা নিয়ে যার যার দায়িত্ব ও কর্তব্য শতভাগ সততার সাথে সম্পাদন করতে হবে। মেয়র বলেন, ৬০ লক্ষ নাগরিকের সেবার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সেবাক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে দায়ীদেরকে বিদায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ভালো কাজের জন্য পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ও শাস্তি অপেক্ষা করছে। কে কোনটি বেছে নেবেন তা সংশ্লিষ্টদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যান্ত্রিক শাখার এবং বিদ্যুৎ শাখার সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে মেয়র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নগরীকে শতভাগ আলোকিত করতে হবে। তিনি ৩০ আগষ্ট এর মধ্যে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বিদ্যমান বিদ্যুৎ খুটির প্রতিটিতে বিদ্যুৎ বাল্ব স্থাপন করে নগরীকে শতভাগ আলোকিত করার নির্দেশ দেন। মেয়র যান্ত্রিক শাখার অচল গাড়ী ও যন্ত্রাংশ সমূহকে নিলামে দেয়া এবং মেরামতের যোগ্য গাড়ীগুলোকে দ্রুত মেরামত করার নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন গ্যারেজে মাসের পর মাস পড়ে থাকা গাড়ীগুলো সর্ম্পকে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন। মতবিনিময়ে মেয়র বলেন, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫খ্রি. থেকে রাতের বেলায় আবর্জনা অপসারন করা হবে। যান্ত্রিক শাখার গাফিলতি বা ইকুইভমেন্ট সরবরাহে কোন ধরনের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আবর্জনা অপসারনে বিঘœ সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের উপর বর্তাবে বলে মেয়র সতর্ক করে দেন। মেয়র হাইপ্রেসার সোডিয়াম লাইট সংযোজন প্রকল্প, ট্রাফিক সিগন্যাল প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারদের ডেকে তাদের কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট সংগ্রহের নির্দেশ দেন। এছাড়া মেয়র যান্ত্রিক শাখার ১৬৯ কোটি টাকার গাড়ী ও অন্যান্য ইকুইভমেন্ট ক্রয় সংক্রান্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চান। মেয়র বলেন, কে কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারী, কে কোন ধর্মের অনুসারী বা অতীতে কে কি করেছে সেসব বিষয়গুলো তার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। তার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে কে কোন ধরনের পারফরমেন্স করেছে তাই তার নিকট বিবেচ্য বিষয়। অতীতের কর্মকান্ডের জন্য কাউকে দায়ী করা হবে না। এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, তার দায়িত্বকালিন সময়ের উপরেই পারফরমেন্স বিবেচনা করা হবে। মতবিনিময় সভায় সচিব রশিদ আহমদ, মেয়রের একান্ত সচিব মো. মঞ্জুরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এয়াকুব নবী, আনোয়ার হোছাইন, মো. রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুল হক, স্থপতি এ কে এম রেজাউল করিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছালেহ, কামরুল ইসলাম, মনিরুল হুদা সহ সংশ্লিষ্টরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।