ফ্লাইওভারে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে

0
114

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারো ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারো কাম্য নয়। গতকাল বিকালে নিজ জন্মভূমি হাওর উপজেলা মিঠামইনে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট হাওরে অতীত ও বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনারা আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমিও এ সময়ের মধ্যে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীতকরণসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি। এখনো এ অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নে অনেক কাজ চলছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, কখনো হাওরের শিকড়ের কথা আমি ভুলিনি। বরং জীবনভর এই হাওর ও এলাকার মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেছি। হাওরের প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়নের সাথে জেলা শহরের যোগাযোগ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি হাওরেই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হচ্ছে।

মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে বক্তৃতা করেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হক প্রমুখ।
এ সময় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে হাওরের কোনো কৃষি জমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অনেকে আইন না মেনে হাওরের কৃষি জমির যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না। আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তৃতায় মিঠামইনে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শিক্ষা জীবন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একসময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াশুনা করতো না। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাজা শেষে তাঁর লাশ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

এর আগে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর গ্রামের বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন। বিকালে প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মাঠে সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করেন। প্রেসিডেন্ট কামালপুরের নিজবাড়িতে রাত্রিযাপন শেষে শনিবার মিঠামইন উপজেলায় অবস্থান করবেন। আজ বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট সারাবছর চলাচল উপযোগী ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করবেন। পরে বিকাল ৩টায় তিনি মিঠামইনের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক (আলিম), মাধ্যমিক (দাখিল) এবং জুনিয়র (জেএসসি ও জেডিসি) পর্যায়ের প্রায় ৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা এবং শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করবেন। এছাড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রেসিডেন্ট কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে মিঠামইনের ১৫ জন ব্যক্তিকে সেলাই মেশিন প্রদান করবেন। এদিনও কামালপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি রাত্রিযাপন করবেন।

উল্লেখ্য, সফরের শেষদিন আগামী ১৫ই অক্টোবর অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন শেষে বেলা দুইটায় প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।