বইপ্রেমী নিভৃতচারী প্রচার বিমুখ আবুল হাসেম মাষ্টার

0
246

বিপ্লব দে।। আবুল হাসেম ।এলাকায় তিনি হাসেম মাষ্টার হিসাবে পরিচিত ।একাধারে তিনি শিক্ষক ,মনোযোগী আবুল ঞামেপাঠক,শিক্ষাব্রতী ,ভ্রমন প্রিয় ,শিক্ষা গবেষক ,সত্যানুসন্ধানী ,ইতিহাস সংরক্ষক ,স্পষ্টবাদী ,সৃজনশীল ,ধর্ম ভিরু ,প্রগতিমনা,রুচিশীল উন্নত উদারমনের ,দায়িত্বশীল ,কর্তব্যনিষ্ট ও বন্ধু পরায়ন ব্যক্তিত্ব হাসেম স্যার । ছোটবড় সকলকে একবার দেখামাত্র সহজে আপন করে নেওয়ার অসাধারন গুনের অধিকারী তিনি । একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্টার সময় নেশার ছলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে পরে পেশা হিসাবে শিক্ষকতা কে মনে প্রানে গ্রহন করেছেন । অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই হাসেম স্যার । তার স্মৃতিশক্তি অত্যান্ত প্রখর । বয়োবৃদ্ধিার সাথে সাথে সাধারনত বেশীর ভাগ মানুষের নিয়মানুসারে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে ।কিন’ তার বেলায় বিষয়টি ব্যতিক্রম । কোন বিষয় একবার পাঠকরলে সেবিষয়ের বেশির ভাগ তিনি স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারেন। তাছাড়া কোন মানুষের সাথে একবার পরিচয় হলে তার নাম ঠিকানা পরিচিতির তারিখ ,বার ও সময় বলে দিয়ে পুনরায় কোন স্থানে দেখা হলেই তার সাথে আলাপ চারিতায় রত হওয়া তার স্বাভাবজাত ধর্ম । হাসেম স্যারের চেয়ে বয়সে বড় ছোট যে কারো সাথে বিশেষ করে পরিচিত জনদের সাথে দেখা হলেই সালাম দিয়ে মুরম্নব্বী ,বদ্দা,স্যার সম্বোধন করেই তিনি কথা বলেন। সাধারন জীবন যাপন চলা ফেরায় জৌলসহীন এই ব্যক্তিত্ব সকলের কাছ শ্রদ্ধাভাজন। তাই সকলে তাকে হাসেম স্যার হিসাবে সম্বোধন করে থাকে । স্বাভাবিক ভাবে প্রায় সব মানুষ আত্মকেন্দ্রীক । আপন স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে কিন’ হাসেম মাষ্টার সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম এব্যপারে । সার্বজনিন স্বার্থ তার কাছে বড়। তিনি ব্যক্তি স্বার্থকে কোন দিন প্রাধান্য দেননি । সংসার জীবনে ও তিনি উদাসীন প্রায়। আত্মকেন্দ্রীকতার স’ান তার কাছে নেই । নিলোর্ভ হাসেম স্যারের অর্থ বিত্তের প্রতি কোন মোহ ছিলনা । দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর প্রধান শিক্ষকতা জীবনে কোন দিন প্রধান শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠানের কোন টাকা পয়সা তার কাছে রাখেনি এটা কিন’ বিরল ঘটনা ।
হাটহাজারীর ১১নং ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে । তখন হাটহাজারী নির্বচনী এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন ফতেপুর নিবাসী মরহুম এম.এ ওহাব।এলাকার সন্তানদের শিক্ষিত করতে এমপি ওহাবের নেতৃত্বে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্টার কার্যক্রম শুরম্ন হলে আবুল হাসেমকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এলাকার সনত্মান হিসাবে । উদ্দেশ্য ছিল দুইটা। শিক্ষক হিসেবে হাসেম স্যার দায়িত্ব পালন করবেন ,তেমনি ভাবে এলাকার সনত্মান হিসাবে স’ানীয়দের সনত্মানদের লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ও তিনি দায়িত্ব পালন করবেন । সবে স্নাতক পাশ করা আবুল হাসেম অত্যান্ত সৎ ,মেধাবী সুতিগ্ন স্মৃতি শক্তি সম্পন্ন টকবগে তরুন সামান্য সম্মানীতে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহনকরে লেখা পড়ার মান উন্নয়ন ও বিদ্যালয়টিকে একটি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি নিবেদিত ভাবে ত্যাগ ও শ্রম দিতে থাকেন। এ বিদ্যালয় থেকে বিএড প্রশিক্ষন নিতে গিয়ে অন্য এক শিক্ষকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সর্ম্পক হলে এয়াপোর্ট এলাকায় একটি স্কুলে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বিএফ শাহীন কলেজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পরবর্তীতে রাউজান উপজেলার উরকিরচর উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে একই উপজেলার শ্যামাচরন উচ্চ বিদ্যালয়ে সফলতার সাথে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে এ শিক্ষাব্রতী অবসর গমন করেন। এরপরও শিক্ষার প্রতি নেশাগ্রস্থ এ শিক্ষক ঘরে বসে থাকতে পারেনি। পুনরায় অন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহযোগীতা করতে তাকে আবারও ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব অর্পন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকতা করার সময় তিনি পেশাজীবি সংগঠন করতেন। এ সংগঠনে থাকাকালে শিক্ষকতা পেশার মান উন্নয়ন,পেশার উৎকর্ষতা সাধন এবং শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। সততা দায়িত্বনিষ্ঠতা,কর্তব্যের প্রতি মনোযোগীতা,ষ্পষ্টবাদিতা ছিল তার মূলপুঁজি। এ জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সব সময় তাকে সমীহ করতেন। এ কর্তব্য পরায়ন শিক্ষক পরিচালনা কমিটির কোন অন্যায় আবদার রক্ষা না করার নজিরতো তার জীবনে আছেই সর্বপরি প.প. কমিটির কোন সদস্য অযৌক্তিক কথা বললে তাকে সভা থেকে বের করে দেওয়ারও নজির রয়েছে। তা বর্তমানে কল্পনা করা যায় না। উচ্চ কোন অভিলাস তার জীবনে ছিল না। যেকোন অনুষ্ঠানে মাতৃভূমির ভাষা তথা চাটগাইয়া ভাষায় কথা বলতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন । শিক্ষার্থীদের কথার ছলে,কবিতার ছন্দে মনে রাখার সহজ পদ্ধতিতে পাঠ দানে তিনি অভ্যস্থ। শিক্ষা নিয়ে তিনি নিয়ত গবেষণা করেন। কিভাবে শিক্ষার্থীদের সহজে পাঠ দান করা যায় । আর কিভাবে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার বিষয় সহজে মনে রাখতে পারবে। সে ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সচেতন। কোন প্রভাবশালীকে তিনি পরোয়া করে না। কারো ভয়ভীতিতে তিনি ভয় পাই না। তার শিক্ষকতা জীবনের একটি স্মরনীয় ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি বলেন শ্যামাচরন উচ্চ বিদ্যালয়ে একবার একটি ক্লাস নেওয়ার সময় এলাকার এক প্রভাবশালীর সন্তানকে তিনি লেখাপড়ায় অমনোযোগীতার জন্য বেদরক পিটিয়েছেন। এমনকি পিটাতে গিয়ে এ শিক্ষার্থীর ১৪ পুরুষকে গালাগাল করে উদ্ধার করেছেন। প্রধান শিক্ষকের এ অবস’া দেখে অন্যান্য শিড়্গকেরা ছুটে এসে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করে তাকে (হাশেম স্যার) এটা কার ছেরে বললে তিনি তার সহকর্মী শিক্ষকদের প্রতি বিরক্ত হয়। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকেরা প্রধান শিড়্গকের এ ঘটনায় ভীত সনত্মাস’ হয়ে ছিল বৈ কি? তার অভিভাবক স্কুলে এসে কি অঘটন না ঘটায় এ কারনে। ঘটনার পরদিন এ শিক্ষার্থীর অভিভাবকে স্কুলে আসতে দেখে স্কুলের শিক্ষকেরা ভীত হয়ে পরেন এবং বিষয়টি তাকে (হাশেম স্যার) জানান। তিনি তার স্বভাব সূলভ দীপ্ততা নিয়ে বলেন ভয়ের কোন কারন নেই। আপনরা আমার সাথে থাকেন। যদি অভিভাবক ছেলেকে পিটুনীর ব্যাপারে কিছু বলতে চাই কিংবা শিক্ষকের সাথে দুর্ব্যবহার করে তবে তাকে (অভিভাবককে) সনত্মানের লেখা পড়ার প্রতি মনোযোগী না হওয়ার জন্য তাকেও শায়েস্থা করা হবে। প্রয়োজনে এ স্কুল থেকে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাব। সিদ্ধানেত্মর কথা তিনি অপরাপর শিক্ষকদের স্পষ্টভাবে জানিযে দেন। পরে দেখা গেল এ অভিভাবক প্রধান শিক্ষক তার সনত্মানকে শায়েস্থা করায় তিনি সন’ষ্ট হয়ে শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে স্কুলে এসেছেন বললেন এবং শিক্ষকদের তার বাড়ীতে নিমন্ত্রন করে খাইয়ে ছেলের মাকে শাসনকারী শিক্ষককে দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রসত্মাব নিয়ে তিনি স্কুলে এসেছেন। একথা শুনে অন্যান্য শিক্ষকরা থ বনে যান। এটা তার দায়িত্ববোধ ও কর্মনিষ্ঠার পুরষ্কার।
আবুল হাশেম মাষ্টার একজন শুধু সফল শিক্ষক নন। তিনি শিক্ষকতা পেশার অনুকরনীয় দৃষ্ঠান্ত। বই পড়ার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ। আর বই পড়ার প্রতি প্রচন্ড নেশাসসক্ত এ শিক্ষক বই ক্রযেও তার অনাবিল আগ্রহ। তার বাড়ীতে অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহে রয়েছে। তার বই সংগ্রহের ব্যাপারে অনেক মজার গল্পও রয়েছে। তিনি স্কুল থেকে পবিত্র ঈদ ও কোরবানীর ঈদের বোনাস নিয়ে পরিবারের জন্য বাজার করতে গিয়ে অসংখ্যবার পরিবারের বাজারের খরচের অর্থ দিয়ে বই কিনে নিয়ে এসেছেন। তার অসংখ্য শিক্ষার্থী ও ঘনিষ্ঠজন তাকে কিছু উপহার দেওয়ার কথা বললে তিনি কিছু বই এর নাম লিখে দেন। এসব বই তাদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নেন এবং এখনো তার সে অভ্যাস বদলায়নি। তার থাকার ঘরে বই এর অমূল্য সংগ্রহশালা রয়েছে। শোয়ার খাটের উপরে নিচে বই আর বই। টিনছানিযুক্ত বেড়ার কুঠিরি তার মূল্যবান দুষ্প্রাপ্য বই সংরড়্গনের আধুনিক রুচি সম্মত তাক ও আলমিরা না থাকায় এলামেলাভাবে বই গুলো সংরড়্গিত রয়েছে। বই প্রেমী ও পাঠকদের জন্য তার এ সংরক্ষনশালা অত্যন্ত মূল্যবান। তিনি অনৈতিক উপার্জনকারী ও দূর্নীতিবাজদের স্পষ্টভাবে কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের পড়্গের অত্যানত্ম সক্রিয় এ শিড়্গাবিদ সার্বক্ষনিক প্রগতিশীল চিনত্মা চেতানা ধারন করে প্রায় প্রত্যেকস্থানে এ ব্যাপারে সোচ্ছার হয়ে কথা বলেন। এক সময় প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে সৎ ও যোগ্য রাজনীতি সচেতন প্রগতিবাদী শক্তিকে জোরালো করতে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার ভাষায় রাজনীতিতে দুবৃত্তায়নের কারনে তিনি রাজনীতি বিমুখ হয়ে পরেছেন। তিনি নিজেই মিথ্যা বলে না। অন্য কাউকে মিথ্যা বলাও পছন্দ করে না। তেমনি তিনি মিথ্যাবাদীকে ঘৃণা করে। বড়ছোট সকলকে যোগ্যতা অনুসারে সম্মান করতে তিনি কুন্ঠাবোধ করেন না। সীমাহীন মেজাজী এ লোক কোন অকথা শুনতে পারেনা। যেখানে অন্যায় সেখানে হাশেম মাষ্টারের প্রতিবাদ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি দিতে গিয়ে তিনি নিজেকে দপ্তরী কিংবা পিয়ন পরিচয় দিয়ে বিদ্যালয়ের অর্থ সাশ্রয় করার কথাও প্রচারিত আছে। বেশী টাকা দিযে বিজ্ঞপ্তি দিলে তাকে প্রধান শিড়্গক বকাজকা করবে বলে দায়িত্বরত বিজ্ঞাপন কর্মকর্তাকে অনেকবার বলেছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে এটুকুই তার মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া।
হাশেম মাষ্টার শুধু শিড়্গক নয় তিনি একজন ভ্রমন বিলাসী মানুষও। দেশ ব্রমন মানুষের জীবনে একটি শিক্ষা। এতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। তাই তিনি দেশ ভ্রমনে বেশী আগ্রহী। প্রত্যেক ধর্মের প্রতি তার অগাদ বিশ্বাস ,শ্রদ্ধা ও ভক্তি রয়েছে। তাই তিনি ধর্মজ্ঞানে জ্ঞানী হতে প্রত্যেক ধর্মীয বই ও ব্যাপকভাবে পাঠ করে। শিক্ষকতা জীবনে তিনি অনেক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিড়্গক নিয়োগের সময় হাশেম স্যারকে নিয়োগ বোর্ডে রাখা হত। প্রশ্ন করার জন্য। কারন প্রত্যেক ধর্মের ব্যাপারে তার অগাদ জ্ঞান রয়েছে। তার ধর্ম ইসলামকে তিনি মানবতার ধর্ম বলে উলেস্নখ করে এ ধর্মে কোন সংকীর্ণতার স’ান নেই বলে মনে করেন। তাই প্রত্যেক ধর্ম তার কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধার। ১৯৯৭ সালে তিনি দেশ ভ্রমন শুরু করেন। বাংলাদেশের এমন কোন দর্শনীয় স’ান ও প্রত্নতাত্ত্বিক স’ান নেই তিনি যাননি। কোন জেলার কোন উপজেলা কি জন্য বিখ্যাত তিনি জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে বলে দিতে পারবে। দেশ ভ্রমনে আগ্রহীদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ভ্রমন পিপাসুদের সংগঠন“অভিযাত্রী”। সংগঠনের পড়্গ থেকে প্রতিবছর জানুয়ারী মাসে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স’ান ভ্রমন করে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো প্রত্যড়্গ করেন। অভিযাত্রী প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সমাজের কুসংষ্কার ও সংকীর্ণতা দূর করে আর্দশ,নীতিবান,সৎ যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলার ব্রত গ্রহন করেছে। এ সংগঠনের নেতৃত্বে তিনি ফতেপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করারও স্বপ্ন দেখেন। এ সংগঠনে বিভিন্ন শ্রেনী পেশা ধর্ম বর্ণের লোক রয়েছে। বিনে সূতার মালায় তাদের গ্রথীত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সুখী সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ সর্বপরি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাসত্মবায়ন করা তার একান্ত প্রত্যাশা। দেশের অনেক মানুষের একটি ভ্রানত্ম ধারনা বাংলা নববর্ষ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের উৎসব। প্রকৃতপক্ষে বর্ষবরন উৎসব সমসত্ম বাংলাভাষাভাষীর। একথা প্রমান করার জন্য তিনি প্রত্যেক বাংলা বর্ষের প্রথমদিন অভিযাত্রীর উদ্যোগে জাকজমকপূর্নভাবে বাংলা নববর্ষ পালন উৎসব পালন করে থাকেন। এখানে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুঁথি পাঠের আসর,কুইজ প্রতিযোগীতা এবং সংগঠনের কর্মপ্রন’া নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সমাজে প্রবাহমান অসুস’ধারার পরিবর্তন করে সুস’ধারা প্রর্বতনের মানসে তার এ উদ্যোগ ও আয়োজন। সমাজের সর্ব পেশার লোকজনকে অণুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয়।
শ্রদ্ধাভাজন আবুল হাশেম স্যার বই সংগ্রহ,বই পড়া ছাড়াও তিনি কথায় কথায় ছন্দ মিলিয়ে কথা বলতে পটু। তাছাড়া তার লেখালেখীর প্রতি সীমাহীন আগ্রহ। গ্রামের পথে প্রান্তরে বিচরন করে নিবেদিত প্রান মানুষকে তুলে এনে তার লেখায় স’ান করে নেওয়াতে তিনি তার দায়িত্ব বলে মনে করেন। তাছাড়া পুরাতন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার মানসে তিনি ইতিমধ্যে হাটহাজারীর ইতিহাস গ্রন’ ২য় খন্ড প্রকাশ করেছেন। ইতিহাস গ্রনে’র প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। বইটি তেমন সমৃদ্ধ না হলেও প্রথম খন্ড এখন পাওয়া যায় না। তাই এবার দ্বিতীয় খন্ড প্রথম খন্ডের চেয়ে সমৃদ্ধ পরিসরে প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয় খন্ড লেখনীর কাজও চলছে। তাছাড়া ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের বলী খেলা নিয়ে তার লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে মুক্তিসংগ্রামে চট্টগ্রাম নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। হাটহাজারীর ইতিহাস তৃতীয় খন্ডের লেখার কাজ চলছে,স্মৃতিময় ফতেপুর,ফতেপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং মহাকবি আলাওল এর নামে একটি বই লেখার কাজ চলছে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধে হাটহাজারী নামে একটি বই লেখার কাজ চলছে এবং বই গুলো প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। নিবৃত্তচারী এ হাশেম স্যার তাঁর জীবনের সমস্ত উপার্জনের অর্থ দিয়ে হাটহাজারীর ইতিহাস প্রকাশ করেছেন। নিবেদিত হাশেম স্যারের এ সৃজনশীল কর্মকান্ডকে সহযোগীতা করা বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব হলেও তেমন সহযোগীতা কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। ফলে প্রায় প্রত্যেকেই তাঁর এ উদ্যোগকে মহতি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর এ সৃজনশীল কর্মকান্ডে যাদের সহযোগীতার করার ইচ্ছা আছে তাদের চিত্ত আছে। কিন’ বিত্ত নেই। আর যাদের বিত্ত আছে তাদের মানসিকতা নেই। ভবিষ্যত প্রজম্মের কাছে দায়মুক্ত হতে তিনি যেই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে সহযোগীতা করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। চালচলনে একেবারে সাধারন এ মানুষটি ইতিহাসের উপকরন তথ্য সংগ্রহ সকরার জন্য কাঁধে থলে নিয়ে যখন বাড়ী বাড়ী ঘুরেছেন অনেকে ভিক্ষুক মনে করে তাকে চাউল ভিক্ষা দিতে হাজির হয়েছেন বলেও তিনি অনেক স’ানে কথা বলতে গিয়ে নিজ মুখে সেকথা বলেছেন। তিনি বলেছেন চাউর ভিক্ষা নয় ইতিহাসের উপকরন/উপাদান ভিক্ষা চাইতে তিনি এসেছেন। চাল চলনে একেবারে সাধারন বলে তাকে অনেকে পছন্দও করেনা। বৃহৎ অনত্মর ও অসাধারন প্রতিভার অধিকারী হাশেম স্যারের সাথে যারা ঘনিষ্ঠভাবে মিলামেশা করেনি তারা প্রাথমিক দেখায় বুঝতে পারবে না তিনি কত বড় মাপের মানুষ ও প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। আবুল হাশেম মাষ্টার ১৯৪৬ সালের ১৮ এপ্রিল হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের মাইজপট্টীর আশরাফ আলী হাজীর বাড়ীতে জম্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম নজির আহমদ। মাতা কুমছুমা বেগম। তাঁর সখ ভ্রমন,বই পড়া,পাঠাগার প্রতিষ্ঠা,ঐতিহাসিক স’ান দর্শন,বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন দেখা,লোকজ লুপ্তগান সংস্কৃতি উদ্ধার ও ঘুরে দেখা বাংলাদেশ। তিনি এম.এ.বি.এড ডিগ্রীর অধিকারী। বয়সের ভারে এ অসামান্য প্রভিতাধর শিড়্গাবিদ আক্রানত্ম হলেও মনের দিকে তিনি অত্যানত্ম শক্ত ও নবীন। মূহুর্তের মধ্যে তিনি যেকোন মানুষকে আপন করে নেওয়ার অসামান্য গুন তার রয়েছে। দুস্প্রাপ্য বই এর সংগ্রহ শালায় তিনি আকন্ঠ নিমর্জ্জিত থাকে। সব সময় তাঁর কাধে একটি থলে ঝুলানো থাকে। যেখানে বসে যেকারো সাথে কথা বলতে শুরম্ন করলেও ইতিহাসের উপকরন তথ্য সংগ্রহ করতে তিনি ব্যসত্ম হয়ে উঠেন এবং গুরুত্বপূর্ন উপকরন খাতায় লিখে নেন। বিরল প্রতিভার এ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে হাটহাজারীর সচেতন লোকজন গর্ববোধ করেন। তবে অনেকে শংকার মধ্যেও থাকেন তাঁর বয়সের কারনে। তাঁর অসমাপ্ত লেখা প্রকাশের জন্য সৃজনশীল মনোভাবাপন্নদের এগিয়ে আসা উচিত। বই অনুরাগী হাশেম স্যার ঢাকা চট্টগ্রামে বই মেলার কথা শুনলে কিংবা নতুন ইতিহাস ও এতিহ্য সমৃদ্ধ বই প্রকাশের সংবাদ পেলে ছুটে যায় তা সংগ্রহ করতে। হাশেম স্যারের পদাংক অনুসরন করলে সত্যিকারের আলোকিত সমাজ ব্যবস’া প্রতিষ্ঠিত হবে।