বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ

0
80

ফারাজী আজমল হোসেন

আজ ১৭ই মার্চ, বাঙালি জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় শিশু দিবসও আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তত্কালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুত্ফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীসহ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ের দুর্জয় প্রেরণা, ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় আর সকল ষড়যন্ত্রের কুহেলিকা ভেদ করে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের দৃপ্ত শপথ নিয়ে কৃতজ্ঞ বাঙালি আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয় তখন ছিল বৃটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তত্কালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে অর্থাত্ দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ, যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। ১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্ররা হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।

৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৪৮ সাল থেকে ৫২’র মহান ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হন। ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় বাঙালি জাতি। ৭ই মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৭১’র ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তাঁর প্রথম বিচার শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ৭৫’র ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত্ এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। রাষ্ট্রপতি জাতির পিতার ৯৪তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমরা আমাদের বর্তমানকে উত্সর্গ করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাল্যকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্ভীক, অমিত সাহসী এবং মানবদরদী। তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। বিকাশ ঘটে বাঙালি জাতিসত্তার। তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির প্রতিভূ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উত্সর্গ করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিনে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে জাতির পিতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আগামী দিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ কামনা করছি।

বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, সংগ্রামমুখর জীবন এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত