বন্ধু…আড্ডা… গান… কবিতা… গরম চা…ঝালমুড়ি… খিচুড়ি…

0
361

জুয়েল বড়ুয়া বাপ্পু:

SHAWONবাসার বেলকনির লোহার কপাটের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।আমার চোখ দুটো আকাশের বিশালতার শূন্যতার অসীমতায় অস্থির হয়ে কি যেন খুঁজছে।একটা পাখি হঠাৎ উড়ে এসে বেলকনির সামনের গাছটার ডালে এসে বসলো। রাতের আঁধার খানিকটা ভারী হওয়াতে পাখিটাকে আমি অস্পষ্টভাবে দেখছিলাম।একটু পরে মনে হলো এটাতো সেই চড়–ই পাখি। আমি আমার চার মাস বয়সী ছেলে রুদ্র অর্নিবানকে কোলে নিয়ে পাখিটার সাথে মাঝে মাঝে গল্প করি।আমার ছেলে ও পাখিটাকে দেখে ওয়া, আও কি যেন বলতে চেষ্টা করে।পাখিটা ও কিচির মিচির করতে থাকে।আমি ও কিছু কথার ঢালি সাজিয়ে আমরা তিনজনের যোগসূত্র তৈরি করি। হয়তো এখানে আমার একটা স্বার্থ আছে। স্বার্থটা হলো আমার ছেলেটাকে প্রকৃতির কাছাকাছি রাখা।যদি ও একটু একটু বড় হতে হতে যদি প্রকৃতির সরল সৎ বোধগুলো নিজের মধ্যে নিতে পারে।তাই বেলকনির সামনের গাছ,চড়–ই পাখিটার প্রতি আমার একটা কৃতজ্ঞতাবোধ আছে।আমি এবার চড়–ইপাখিটার দিতে তাকিয়ে আছি।পাখিটা চুপচাপ গাছের ডালে দাঁড়িয়ে আছে।বাসার মধ্যে অনেকক্ষন হলো রবীঠাকুরের গান চালিয়ে রেখেছিলাম।এখন রেজওয়ানা চৌধুরীর কন্ঠে রবীঠাকুরের এই গানটি কানে এসে বাজলো-
”আয়! আরেকটিবার আয়রে সখা প্রানের মাঝে আয়
মোরা সুখে দুঃখের কথা কবো প্রান জুড়াবে তাই…”
চড়–ই পাখির দিকে তাকিয়ে গানের কথাগুলো শুনতে শুনতে ভাবনার নিউরনগুলো আমাকে আঘাত করতে শুরু করলো।বন্ধু! পবিত্র কিছু মুখ,তাদের সাথে প্রান জুড়ানো ফেলে আসা অনেক সময়,কত পাগলামি,কত আড্ডা.কত কিছু…।স্বর্গ প্রানের পবিত্র কিছু বন্ধুর কথা মনে পড়ছে আমার।আমাদের প্রানের পাগলামিতে জন্ম নিয়েছে কত পবিত্র ভোর।ভোরের আলোগুলো এখনো বুকের গহীনে ছায়া ফেলে বাজিয়ে যায় আমাদের বন্ধুতের ঘন্টা।এই সব যখন ভাবছিলাম হঠাৎ আমার মুঠো ফোনটা বেজে উঠলো।মুঠো ফোনের দৃশ্যপটে তাকাতেই দেখি নাম ভেসে উঠলো স্বর্গ প্রানের পবিত্র এক বন্ধুর-শাদ ইরশাদ।
”:বাপ্পু কেমন আছো?শূক্রবার কোন কাজ নেইতো?চলে এসো পাঁচলাইশস্থ শাওনের অফিসে (newschittagong24.com)।পুরনো সব লেখক বন্ধুরা আসছে। সারাদিন আড্ডা হবে।”
আমি শুধু বললাম পৌঁছে যাবো।
বন্ধু...আড্ডা... গান... কবিতা... গরম চা...ঝালমুড়ি... খিচুড়ি...কিছুক্ষন পরে মুঠোফোনের দৃশ্যপটে বন্ধু শাওন।
“জুয়েল চলে এসে আমার অফিসে শুক্রবার। সবাই আসছে।আবার জমবে আড্ডার হাট। খিচুড়ি,টোষ্ট,গরম চা,ঝাল মুড়ি আড্ডা আর কবিতা।
পরের দিন মুঠো ফোনের দৃশ্যপটে মিজান ভাই।
:”কবি চলে এসো শুক্রবার।আমি বললাম তথাস্তু।(যদি ও আমি কবি নই!। আমার নামের আগে কবি বসানোর দায়দায়িত্ব সম্পুর্নরুপে মিজান ভাইয়ের উপর বর্তায়)।

“ওখানে পাহাড়ী বনভূমির হাত সুন্দর ছিলো এখানে তা নেই
এখানকার আকাশে বর্ষা নামে অশ্রুর মতো মনে হয়।”
না এখানে আজ অশ্রু হবে না।আজ শুধু হবে সুখের কীর্তন। আজ খোঁজে নিবো হেমন্তের ভোরে গ্রামের শিউলি তলা থেকে দল বেঁধে শিউলি কুড়ানোর মতো আনন্দমুখর সেই মেঠো শৈশবের ঘ্রান।
বেলা ১১ টার পর শাওনের অফিসে পৌঁছে দেখি পুরনো প্রিয় কিছু মুখ।শাওন স্বাগত জানাতেই মিজান ভাই,বাবলা ভাই,জাহেদ ভাই আর অন্তু বুকে জড়িয়ে নিতেই আমার শরীরের ভিতরের রক্তগুলো যেন বলে উঠলো রবীঠাকুরের ভাষায়-
“মাঝে হলো ছাড়াছাড়ি গেলাম কে কোথায়
দেখা যখন হলো সখা প্রানের মাঝে আয় “
এরপর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে এসে গেলো নিপুন,সবুজ ভাই,শাদ ভাই,আলী ভাই আর ও অনেকে। এই যেন একটুকরো স্বর্গউদ্যান।আড্ডায় আড্ডায় গরম চা আর টোষ্ট বিস্কুটে সাহিত্য সংস্কৃতি,কবিতা, দেশ,মনুষত্ব্য,মানবতা আর মানুষের গল্পে যেন বন্ধুরা বুঝিয়ে দিলো-এই স্বর্গ প্রানের বন্ধুরা পা মাটিতে রেখেই পরিবার,বন্ধুত্ব ¡,সমাজ আর দেশের প্রতি দায়বদ্বতা থেকে বন্ধুদের বুকের রক্ত যেন আজ ও চিৎকার করে বলে-নামানুষ তোমরা শুধূ মানুষ হও!।
আড্ডায় আড্ডায় দুপুর গড়াতেই গরম খিচুড়ি,সালাদ,ডিম আর মাংস হাজির। শাওনের আহবান বন্ধুরা এবার উদরপুর্তি হোক।( নিউজচিটাগাং ও শাওনের পরিবারকে বিশেষ ধন্যবাদ। সাথে সতর্কবার্তা ভাবী(শাওনের বউ )বিনা নিমন্ত্রনের অতিথি হয়ে গরম খিচুড়ির জন্য আরো জ্বালাবো।) গরম খিচুড়ির সাথে সাথে চললো ভাবনার আদান প্রদান। মিস করছিলাম বড় দা,মোজাম্মেল মাহমুদ ভাই,হৃদয় ভাই,মাহামুদ,রিপা,শান্তনা,নিশু,যাহেদী ভাই,খুকী,পলি আপু ,টুকটুকি সহ আরো অনেকে(লেখালেখির জগতের বন্ধুরা যাদের নাম দেখছো না যেনো তোমরা সবাই হৃদয় গহীনে আছো।)
সুখের ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে সময়টা যেন কৃস্নচূড়ার রংয়ে রাঙাতে এলো।আড্ডায় আড্ডায় ঝালমুড়িতে কবিতা আর গানে আড্ডার সূর্যাস্তের সময় চলে এলো।বুকে জড়িয়ে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম নিজের পথে।ও বন্ধুরা একটা কথা বলা হয় নি-তোমাদের সঙ্গ আজ থেকে বার বছর পূর্বে আমাকে আমার জীবন সর্ম্পকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিলো সেই জন্য তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।ডাল ভাতের জীবনটাতে তোমাদের মতো বন্ধুরা পাশে থাকলো আমি ভালো থাকবো। ভালো থেকো সবাই।বুক পকেটে আরো কিছু স্মৃতি জমা নিয়ে গেলাম।