বরখাস্তের পর ফের সিএমপিতে ওসি প্রদীপ

0
189

prodipবরখাস্তের ৫ মাসের মাথায় ফের চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি) যোগদান করেছেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সিআইপি পদমর্যাদার একজন শিল্পপতিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তৎকালীন বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে গত ১৬ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) আনোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার সিএমপিতে যোগদান করেছেন পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ। তবে তাকে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, তেলকান্ডে শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি আগেভাগে জেনে পুলিশ হাসপাতালে নিজেকে ভর্তি দেখান প্রদীপ কুমার দাশ। এরপর শাস্তি ঠেকাতে নানা চেষ্টা-তদবির চালান। কিন্ত শেষপর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করে তাকে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করার আদেশ দেয় পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু সিলেটে অবস্থান না করে নানা অযুহাতে তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে অবস্থান করতেন।

ওসি প্রদীপের ছোট ভাই আকবর শাহ থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ। রহস্যজনক কারণে দুইভাই দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে কর্মরত আছেন। এদিকে বরখাস্ত থাকাকালীন ওসি সদীপের বডিগার্ডকে সাথে নিয়ে নগরীর শপিং মলসহ বিভিন্ন এলাকায় ওসি প্রদীপকে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।

কোতোয়ালী থানার এসআই থাকাকালীন নগরীর পাথরঘাটায় এক হিন্দু বিধবা মহিলার জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নিজের বোনের জমি দখলের অভিযোগটাও বাদ যায়নি। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে পার পেয়ে যান প্রদীপ কুমার দাশ।

এর আগে গত ৪ অগাস্ট বেসরকারি তেল শোধনাগার সুপার রিফাইনারি থেকে মিরসরাই যাওয়ার পথে নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল গেইট এলাকায় সাড়ে নয় হাজার লিটার কেরোসিনসহ একটি লরি আটক করে পুলিশ। এরপর সুপার রিফাইনারির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দশ জনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়।

এ ঘটনার পর পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে হয়রানির অভিযোগ করেন সুপার রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আহমেদ। ওই অভিযোগের পর পুলিশ সদর দপ্তর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত শেষে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দফরতর।

পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ওসির দায়িত্ব পালনকালে প্রদীপ কুমার দাশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তেল পাচারের দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাই তদন্তে ভুয়া ও হয়রানিমূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে। যা, পুলিশ প্রশাসনে নজিরবিহীন।

২০১২ সালে আদালতের অনুমতি ছাড়া বন্দরে আসা একটি বিদেশি জাহাজকে তেল সরবরাহে বাধা, বার্জ আটক এবং ১৮ দিন পর বার্জ মালিকসহ ১২ জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার ঘটনায় ফেঁসে যান তৎকালীন পতেঙ্গা থানার ওসি প্রদীপ। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় হয়। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর ও তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা পৃথকভাবে তদন্ত করে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ওসি প্রদীপকে পতেঙ্গা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ওসির দায়িত্ব পালনের আগে পাঁচলাইশ থানার ওসি ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ৫৪ ধারা, সিএমপি অ্যাক্ট-৮৮ ধারাসহ বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একেকটি থানায় দায়িত্ব পালনের পর নানা অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তাকে বদলী করে ‘দায়িত্ব সারছে’ পুলিশ প্রশাসন।

২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী হরতাল চলাকালে পাঁচলাইশে থানা এলাকায় শিবিরকর্মীদের গায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ওসি প্রদীপ। ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ওসি প্রদীপের একটি মামলায় রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করায় এক আইনজীবীকে লালদীঘির পাড় থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের শিকার ওই আইনজীবী সুস্থ হয়ে ২৯ জানুয়ারি আদালতে পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ওসি তদন্ত আজিজ আহমেদ, এসআই মাসুদ পারভেজসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওসি প্রদীপের পক্ষে কোন আইনজীবি মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।

২০১৩ সালের ২৪ মে পাঁচলাইশ থানার পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে শিবির আখ্যা দিয়ে ৪০ শিক্ষার্থীকে আটকের ঘটনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের তোপের মুখে পড়েন ওসি প্রদীপ। সেসময় ওসি প্রদীপের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা ওসিকে লাঞ্ছিত করে।

এছাড়া পাঁচলাইশে ওসি থাকাকালীন বাদুরতলা এলাকায় বোরকা পরা এক বয়োবৃদ্ধাকে রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ব্যাপক সমালোচিত হন ওসি প্রদীপ। এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে টনক নড়ে। ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট তাকে পাঁচলাইশ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।