বরিশাল কলোনিতে মাদকের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

0
141

মাদক সম্রাট ইউসুফের নির্যাতনে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক::
চট্টগ্রমের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ পুলিশের অভিযানে বারবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে মাদক ব্যবসার টাকা ভাগভাটোয়ারা এবং আধিপত্য বিস্তারের কারণ অন্যতম বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়। মাদক ব্যবসার গডফাদার ফাদার ইউসুফের সহযোগি ্ও নিয়ন্ত্রকেরা হলেন, রানা ডাইল ছালামত, ডন নাছির, টেক্সী জসিম, শাকিল, বিলাই মনির, মতিন, মোশারফ হোসেন লিঠন, ভাগিনা মানিক, আলমগীর, শাকিলের শ্যালক সাহাবুদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট মাদক ইয়াবা, ফেন্সিডিল, চোরা ছালান, চুরি, ছিনতাই, খুন,খারাপীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে তারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অদিধপ্তরসহ বিভিন্ন সূত্রে নামগুলো উঠে এসেছে।
এমনকি মাদকের ব্যবসায় ভারতে বসে নগরীর কদমতলী বরিশাল কলোনির মাদকের বাজার নিয়ন্ত্রণ বরাবরই ঘুরেফিরে মাদক ব্যবসায়ী ইউসুপ। মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউসুফের নির্দেশে আনোয়ার হোসেন কাউয়া, মতিঝর্ণার লিটন, মানিক প্রকাশ ছাদি মানিক, কালিয়া পাড়ার গুল পাড়াড়ের নয়ন, গার্মেন্টস মনির হত্যা,তার সহযোগি বাহারের হাত কাটা ্ও সম্প্রতি যুবদল নেতা শুভপুর বাস স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী হারুণকে হত্যা কওে ইউসুফের সহযোগিরা। যুবদল নেতা হারুন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ইউসুফের ঘনিষ্ঠ সহযোগি মোশারফ হোসেন লিটন। ইউসুফের সহযোগিদেও মধ্যে মরিচা পাড়ার বিলাই মনির, মতিন ও মোশারফ হোসেন লিটনের আধিপত্য রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইউসুফের সহযোগী মোশাররফ মারা যায়। এ সুযোগে রাতারাতি বরিশাল কলোনির মাদকের বাজারের দখলে নিয়েছে ছয়মাস আগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ফারুকের ভাই শুক্কুর। বছরের পর বছর ধরে কখনো ইউসুফ আবার কখনো ফারুকের সিন্ডিকেট মাদকের বাজার বরিশাল কলোনি নিয়ন্ত্রণ করছে। দখল–বেদখল নিয়ে সংঘটিত হয়েছে খুন গুমের ঘটনা। কদমতলীর বরিশাল কলোনিতে প্রকাশ্যে মাদকের বেচাকেনা হলেও তা বন্ধ করতে আগে তেমন উদ্যোগ নেয়নি আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী।
বন্দুকযুদ্ধে তিন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলেও কখনো বন্ধ হয়নি বরিশাল কালোনির মাদক ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের অনেক কর্তা ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বরিশাল কলোনির মাদক বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের।
মাদক স¤্রাট ইউসুফের উত্থান যেভাবে : জানা যায় কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জের দিন মজুর চারু মিয়ার ছেলে ইউসুফ ২০০১ সালের দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বাবার সাথে কুলির কাজ করতো। এক পর্যায়ে রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ছিঁচকে চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কুলির কাজ ছেড়ে দিয়ে ২০১০ সালের শেষের দিকে পুরোদমে মাদকের ব্যবসা শুরু করে। আট বছরের ব্যবধানে ইউসুফ একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হয়ে উঠে। নগরীর কদমতলী পোড়া মসজিদের পেছনে নিজস্ব জমির ওপর তৈরি করেছে পাঁচতলা ভবন।কিনেছে একাধিক কাভার্ডভ্যান। পটিয়ায় রয়েছে মাছ ও পোল্ট্রি খামার। পুলিশ জানিয়েছেন, র‌্যাবের অভিযানের সময় ওই এলাকার দেখভাল করছিল সালামত ও নাছির। পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল কলোনির মাদক বাজারের নিয়ন্ত্রক হিসাবে ঘুরে ফিরে আসে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গত বছর নিহত ফারুক ও ভারতে পালিয়ে থাকা ইউসুফের নাম। ইউসুফের বিরুদ্ধে নগরীর ডবলমুরিং থানায় এগারো, কোতোয়ালী থানায় একটি, সদরঘাট থানায় দুটি ও বাকলিয়া থানায় একটি মামলা রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুাযায়ী ২০১১ সাল পুরোদমে মাদক ব্যবসা শুরু করে ইউসুফ। শুরুতে ফেন্সিডিলের ব্যবসা করলেও পরবর্তীতে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও আফিমের ব্যবসাও শুরু করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৯০’র দশকে বরিশাল কলোনিতে মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ ছিল রফিক নামে এক ব্যক্তির হাতে। তার সঙ্গী ছিল মনির, ফারুক, সালামত, নাছির, ইউসুফ, হোন্ডা বাহার ও সিএনজি জসীম। এ সিন্ডিকেটের ম্যানেজার ছিল ইউসুফ।
এক দশক আগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের এক পর্যায়ে রফিককে সরিয়ে দিয়ে আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল মনির ও তার সহযোগী ফারুক। এরপর ফারুক মনিরের দ্বন্ধ শুরু হলে সালামত, নাছির ফারুর গ্রুপের পক্ষে নেয়, বেলাল, বাহার ও নয়ন যোগ দেয় মনিরের গ্রুপে। ২০১২ সালের দিকে নয়ন মাদকের টাকা ভাভাভাগি নিয়ে খুন হয় ।
বিভিন্নসূত্র মতে বাইট্টা ফারুক ও মনিরের দ্বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আখড়ার একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় মাদক স¤্রাট ইউসুফ। ২০১৬ সালে মনির ‘নিখোঁজ’ হলে ফারুক অনেকটা একক নিয়ন্ত্রণে নেয় পুরো বরিশাল কলোনির। ফারুক শুরুতে ইউসুফের সঙ্গে বড় কোনো বিরোধে না জড়ালেও কিছুদিন পর খসরু নামে একজনকে নিয়ে ফারুক ও ইউসুফের দ্বন্দ্ব শরু হয়। গত বছরের ২০ অক্টোবর র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ফারুক। পুলিশ জানায়, ফারুক মারা যাওয়ার পর তার ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দেয়। ফারুকের স্ত্রী ও শ্যালক রানার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তার ছোট ভাই শুক্কুরের।
ফারুকের স্ত্রী ও শ্যালক তখন নাছির, সালামতের সঙ্গে মিলে ইউসুফের দলে ভিড়ে যায়। আর খসরুর সঙ্গে যোগ দেয় শুক্কুর। গত বছরের নভেম্বরে সিলেটের র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে বর্তমানে কারাগারে আছে খসরু।
ইউসুফ ভারতে পালিয়ে থাকলেও তার অনুসারী নাছির,–সালামত বরিশাল কলোনিতে কর্তৃত্ব করতো, তাদের সঙ্গে ছিল ফারুকের স্ত্রী। মাদকের আখড়া থেকে প্রতি সপ্তাহে ফারুকের স্ত্রীর আয় দুই লাখ টাকা। স্থানীয়রা জানান, নাছির–, সালামতের হয়ে মাদকস্পট দেখাশোনা করতো গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের অভিযানে নিহত মোশারফ ওরফে মুসা। মুসা নিহত হওয়ার পর নাসির–,সালামত গা ঢাকা দেয়।
বরিশাল কলোনিতে যত গিরা : মাদক বিক্রির একাধিক স্পট রয়েছে কলোনির ঝুপড়ী ঘরে। ওদের ভাষায় এসব স্পটকে বলা হয় গিরা। যেমন : শাকিলের টিটির গিরা, নাজমার গিরা, মমতাজের গিরা, সাথীর মার গিরা, সাথীর গিরা, পিয়াজ ওয়ালার গিরা, লাকির গিরা, জামালের মার গিরা, কুত্তাওয়ালার গিরা, জানির গিরা, হাফেজের গিরা, তপন বাবুর গিরা অন্যতম। এ বিষয়ে রেলওয়ে থানার সিনিয়র অফিসার সমর কান্তি বড়–য়া বলেন, রবিশাল কলোনির অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা চেষ্ঠা করে যাচ্ছি, রেলওয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রনাধিন এলাকায় অপরাধ আগের চেয়ে অনেকে কমেছে, আমরা চেষ্ঠা কওে যাচ্ছি যাতে অপরাধ নির্মুল করা যায়। এ বিষয়ে সদরঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ নেজাম উদ্দীন বলেন, বরিশাল কলোনিতে মাদক বিরোধী অভিযান নিয়মিত হচ্ছে তব্ওু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, অপরাধীদের সাথে আমাদের পুলিশেল কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথেও সখ্যতা থাকার অভিযোগ উঠেছে, বাস্তবে পুরোপরি সত্য নয় বলে তিনি জানান।