বাংলাদেশের আইনে পাখি পোষা

0
675

কেইজ বার্ড বা পোষা পাখি হিসেবে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল Psittacines পাখিরা। এরা সবাই Psittaciformes বর্গের পাখি। সমগ্র পৃথিবীতে ৮৬টি জেনাসের অধীনে ৩৭২ প্রজাতির Psittacines রয়েছে। সকল তোতা, টিয়া, ম্যাকাও, কাকাতু, লাভবার্ড ইত্যাদি এদের অন্তর্ভুক্ত। এদের প্রধান বৈশিষ্ট হল:

❏ এরা খুবই রঙিন ও সুন্দর হয়ে থাকে।

❏ এদের ঠোঁট চ্যাপ্টা ধরণের ও মজবুত যা এদের খাবারের বৈশিষ্ট প্রকাশ করে।

❏ এদের খাবার মূলত ফল, সবজি, শষ্য, ফুলের রেণু ইত্যাদি। কিছু ক্ষেত্রে পোকাও প্রাণী।

❏ এদের প্রজনন বৈশিষ্ট শক্তিশালী হওয়ায় অধিকাংশ পাখি খাচায় প্রজনন বা Breeding করা যায়।

❏ এদের জীবনিশক্তি অনেক বেশি। তাই খাচায় বা গৃহে খুব সহজেই লালন পালন করা যায়।

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত এমন ৬টি টিয়া পাখি হলো:

তফসিল-১

১) বাসন্তী লটকনটিয়া বা Vernal Hanging Parrot (Loriculus vernalis)

২) মদনা টিয়া বা Red-breasted Parakeet (Psittacula alexandri)

৩) লালমাথা টিয়া বা Plum-headed Parakeet (Psittacula cyanocephala)

৪) চন্দনা টিয়া বা Alexandrine Parakeet (Psittacula eupatria)

৫) ফুলমাথা টিয়া বা Blossom-headed Parakeet (Psittacula roseata)

তফসিল-২

৬) সবুজ টিয়া বা Rose-ringed parakeet (Psittacula krameri)

 

যদিও এদের সকল সদস্যকে খাচায় লালন পালন করা এবং প্রজননও করানো সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনের কারণে এ সকল টিয়া পাখি শিকার করে খাচায় পালন করা, বিক্রি করে, নিজের কাছে রাখা, পরিবহন করা, উপহার দেয়া সম্পূর্ণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। যে সকল ব্যক্তি এর সাথে জড়িত থাকবেন তাদের সবাইকে অপরাধী বলে গন্য করা হবে।

এই পাখিগুলি সম্পর্কে সবাই সতর্ক ও সচেতন থাকবেন। কাউকে এগুলি শিকার, বিক্রি, পালা, পরিবহন, দখলে রাখতে দেখলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবার ও বাংলাদেশ বন বিভাগের অপরাধ দমন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

টিয়ার মধ্যে শুধু এই ছয়টি টিয়া ছাড়া অন্যসকল টিয়া, তোতা, টিয়া, ম্যাকাও, কাকাতু, লাভবার্ড পালা বৈধ। তাই সেগুলি পালেন কোন সমস্যা নেই। এই ছয়টিসহ বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী আইনে তফসিল-১ এর ৫৭৮টি পাখি ও তফসিল-২ এর ৪৪টি পাখি কঠোরভাবে সংরক্ষিত।

ময়না কি পোষা বা বিক্রি করা অপরাধ?

হাঁ ৭ প্রজাতির শালিক ও ময়না পোষা, ধরা, বিক্রি, ক্রয়, পরিবহন অপরাধ। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী পালা যাবে না।

আর একটি কথা, যারা এসব দেশি পাখি বিক্রি করে তারা সকল পাখি বন থেকে ধরেই বিক্রি করে। এরা মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য শো হিসেবে খাচায় কিছু বিদেশি পাখি রাখেও ব্রিড করে। কিন্তু যেগুলি বিক্রি করে সেগুলি গোপন রাখে। বিক্রি করার চুক্তি হবার পর পাখি পৌঁছে দেয় যা আসলেই বন থেকে অবৈধভাবে শিকার করা।

আমি শ্রীমঙ্গলসহ বেশ কিছু জায়গায় গবেষণার সময় দেখেছি গাছের মধ্য একটি টিয়া বেঁধে রেখে ও আঠা বা লুকানো জাল দিয়ে খুব সহজেই সবুজ টিয়ার ঝাঁক ধরে। বেঁধে রাখা টিয়া ডাকে এবং অন্যরা ডাকে আকৃষ্ট হয়ে দলবেঁধে চলে আসে ও ফাঁদে ধরা পরে। এছাড়াও টিয়া গাছের গর্তে ডিম পারে, রাতে সেসব গর্ত থেকেও এদের ধরে। চেতনানাশক খাবার খাইয়েও এদের ধরে।

এরা আসলে এক একটা ক্রিমিনাল।

বিক্রি করা যাবে না এসব পাখির লিস্ট অনেক বড়! তফসিল -১ এর ৫৭৮টি পাখি ও তফসিল-২ এর ৪৪টি পাখি।

তবে একটা সহজ বিষয় যেগুলি দেশী অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রকৃতিতে পাওয়া যায় সেগুলি আইন দ্বারা সংরক্ষিত। আর যেগুলি বিদেশী সেগুলি বিক্রি করা যাবে।