বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বিশ্ব আগ্রহী: প্রধানমন্ত্রী

0
49

নির্বাচন নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিয়ে বিশ্বনেতাদের আগ্রহ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সফর শেষে রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।

এই সফরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আলোচনায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওই নির্বাচন নিয়ে তখন পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুলেছিল।

অর্ধেকের বেশি সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত ও্ই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন- বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে কি কোনো প্রশ্ন আছে?

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, কেউ তো বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট কী, এটা নিয়ে কোনো আলোচনাই করে নাই, বা নির্বাচন, কোনোকিছু নিয়েই আলোচনা করেনি। বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রাকেই তারা সব থেকে বেশি সাধুবাদ দিয়েছে, প্রত্যেকেই।

“বাংলাদেশটাই ওখানে একটা অন্যরকম ফোকাল পয়েন্ট ছিল যে, বাংলাদেশ কীভাবে করে, কীভাবে এত উন্নতি করল। এটাই ছিল তাদের আলোচনার সব থেকে বেশি উৎস। সবাই একটা বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ কীভাবে এত উন্নতি করে যাচ্ছে।”

সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনে বাংলাদেশের কৃতিত্ব ইতোমধ্যে বিশ্বে প্রশংসিত। ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে শেখ হাসিনা সরকার।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন এলডিসির নেতৃত্বে বাংলাদেশ। এতই যদি রাজনৈতিক সঙ্কট থাকত, তাহলে বাংলাদেশ এলডিসির নেতৃত্ব কীভাবে পেল?”

“সঙ্কট দেশের বাইরে না, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনের সঙ্কট চলছে। বাইরে কোনো সঙ্কটের কথা কেউ বলেননি, দেখিওনি। সঙ্কট এখানে কিছু লোকের মনের সঙ্কট। বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সঙ্কট বা সরকারের বৈধতা না থাকলে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

“তারা যদি মনে করতেন যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক খুব সঙ্কট আছে বা সরকারের বৈধতা নেই, তাহলে এই যে বারাক ওবামার এই যে অনুষ্ঠানগুলি করলেন; তিনি কিন্তু নিজে আমাকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ও কো-চেয়ার হওয়ার জন্য।”

অন্যান্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অনুষ্ঠানেও নিজেকে আমন্ত্রণ জানানোর তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই প্রশ্নগুলি যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে তো তারা আমাকে দাওয়াত দিত না।”

বিদেশি বিনিয়োগ করার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রশ্নই যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে এই কথাগুলি আসত না।”

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “তবে আপনাদেরকে মাথায় রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে যে, অবশ্যই একটা গ্রুপ আছে যে, তারা একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং সে চেষ্টা তারা করতে থাকবে।

“আজকে বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের ধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটাই তো অনেকের পছন্দ না।”

গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালের সময় মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করাকে বিশ্বনেতারা ভালোভাবে নেয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ, তাদের লবিস্ট আছে, টাকা-পয়সা আছে। হয়ত লবিস্ট নিয়োগ করে কিছু কথা বলাতে পারে, লেখাতে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা আমরা রাখতে পেরেছি।”

সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।

“ঘটনা এটা ওটা তো ঘটতেই থাকবে এবং তারা চুপ করে তো বসে থাকবে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা আপনারা আশা করেন কী করে? তারা তো প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে। একাত্তরে ঘটিয়েছে, পঁচাত্তরের ঘটনা।”

সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের অর্জন নিয়েও কথা বলেন তিনি।

“বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জল, দৃশ্যমান ও সুসংহত করেছে।”

এআর আইটিইউ’র ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২৬ সেপ্টেম্বর সংস্থার মহাসচিব হাউলিন ঝাও শেখ হাসিনার হাতে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ তুলে দেন। পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দি আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের মেয়াদ এবার শেষ হওয়ায় নতুন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করা হয়েছে।

এমডিজি গ্রহণের সময়ও ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা জাতিসংঘে তার মতামত তুলে ধরেন। এসডিজিও ক্ষেত্রেও তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বারবারই প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়েছে। এসডিজি চুড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।”

সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।