বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব শুরু

0
116

বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
bবান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে। আজ রোববার পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ থেকে সংস্কৃতির শেখড়েই বৈচিত্রময় ঐতিহ্যের ঐক্য: প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপির নেতৃত্বে সাংগ্রাই র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালীতে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, বম, চাক’সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুন-তরুনী এবং শিশু-কিশোরসহ নারী-পুরুষেরা অংশ নেয়। এসময় র‌্যালীতে অন্যান্যদের মধ্যে বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়নের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য, সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমাসহ বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। পরে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা এবং বসস্ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চলে
b2পাহাড়ী তরুন-তরুনীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
আয়োজক কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা জানান, মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই’কে ঘিরে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানে এবারও ছয়’দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবগুলো হচ্ছে- সোমবার উজানী পাড়াস্থ সাঙ্গূ নদী চড়ে পবিত্র বুদ্ধমূর্তি ¯œান অনুষ্ঠান। পরেদিন মঙ্গলবার ও বুধবার দুদিন’ব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ- জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণ খেলা হবে। শহরের পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ, সদর উপজেলার রেইছা থলিপাড়ায়, রোয়াংছড়ি উপজেলা হাইস্কুল মাঠে তরুন-তরুনীরা মেতে উঠবে জলকেলী বা মৈত্রী পানি বর্ষণ প্রতিযোগীতায়। জলকেলী উৎসবে তরুন-তরুনীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে ভাবের আদান-প্রদান করে। জলকেলীর আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- পানি খেলায় বিবাহিত নারী পুরুষরা অংশ নিতে পারে না। জলকেলী উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ী তরুন-তরুনীরা সর্ম্পকের সেতু বন্ধন তৈরি করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পানি খেলা দেখতে শতশত পাহাড়ী-বাঙ্গালী নারী-পুরুষ ছাড়াও দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও ভীড় জমিয়েছে বান্দরবানে। জলকেলী উৎসবের সঙ্গে রয়েছে তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। পাহাড়ী তরুন-তরুনীরা নাচে গানে মাতাবেন উৎসব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পী গোষ্ঠীসহ স্থানীয় শিল্পী গোষ্ঠীরা নাচ-গান পরিবেশন করবে। রাতে উজানী পাড়াস্থ বিসিক গলি, মধ্যমপাড়াস্থ ছয়নং গলি, জাদী পাড়া গলিসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সাড়িবদ্ধভাবে বসে তরুন-তরুনী এবং শিশু-কিশোররা তৈরি করছে হরেক রকমের পিঠা। রাতব্যাপী পিঠা তৈরি করে পাড়া-প্রতিব্শেী এবং ক্যায়াংএ ক্যায়াংএ বিতরণ করছে তরুন-তরুনীরা। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ ক্যায়াংসহ পাড়া-মহল্লায় ক্যায়াংএ ক্যায়াংএ মঙ্গল প্রদ্বীপ প্রজ্জলন করা হবে। সাংগ্রাই উৎসব চলবে আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত।
জানাগেছে, বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উৎসবকে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীরা ভিন্নভিন্ন নামে পালন করে। মারমা ভাষায় সাংগ্রাই, ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিসু এবং চাকমা ভাষায় বিজু’র সংক্ষেপিত রুপ হচ্ছে বৈসাবী। পাহাড়ী চার সম্প্রদায়ের প্রধান এই সামাজিক উৎসবকে সমষ্টিগত ভাবে বৈসাবি বলা হয়। অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ বছরের শেষ দু’দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দুদিন বৈসাবীকে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, ম্রো সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিজু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু নামে বৈসাবী উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে।