বান্দরবানে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশ

0
69

পাল্টাপাল্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ১৩ মেয়ে শিশু’কে মিয়ানমারে পাচার-শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস’র সহযোগী সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ব্যানারে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশি হেফাজতে শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) জেলা সভাপতি উবাসিং মারমা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উসাইমং মারমা, সহ-সভাপতি নুশৈমং মারমা, সাধারণ সম্পাদক অজিত তংচংঙ্গ্যা’সহ সংগঠনে নেতারা। বক্তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে জোর পুর্বক স্বাক্ষ্য আদায় করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ ছাড়া শিশুদের শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রমাণ করতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধার করা হলেও অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশুদের অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া না হলে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। পাল্টাপাল্টি ২
অপরদিকে দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে শিশু পাচারকারী বৌদ্ধ ভান্তে উসিরি ভিক্ষু এবং সহযোগী উচা থোয়াই’সহ পাহাড়ী শিশু পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের শাস্তির দাবীতে জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং শিশুদের অভিভাবকরা ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন ছাত্রনেতা রুবেল কান্তি দাশ, উবা হাই মারমা, এন.এইচ বাবলু’সহ ছাত্রছাত্রীরা।
কর্মসূচী থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, তিন পার্বত্য জেলায় ধর্মীয় শিক্ষার নামে অসংখ্য মেয়ে’কে বিভিন্ন দেশে পাচার করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এ চক্রটির মুখোশ উন্মোচন হওয়ার ভয়ে পাচারকারী ভান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বন্ধ করতে চক্রটি নানা কৌশল অবলম্বন করে বিষয়টি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবী জানান।
এদিকে পাচার হওয়া শিশুর পাইনু চিং মারমা’র পিতা মংপ্রু হ্লা মারমা বলেন, তার মেয়ে কোনো ধরণের পুলিশি হয়রানী করা হয়নি। পুলিশি হেফাজতে শিশুদের নির্যাতনের বিষয়টিও সত্য নয়। পুলিশ ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের শিশুদের মিয়ানমার থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে আমি অনেক খুশী। দোষি ব্যক্তিদের শাস্তি চাই। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে মেয়েদের সুস্থ্য শরীরে বাড়ী নিয়ে যেতে চাই।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মো: জসিম উদ্দিন জানান, মিয়ানমারে পাচার হওয়া ১১ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ দুই শিশুকে উদ্ধারে বিজ্ঞ আদালতের পরামর্শ ও নির্দেশনায় এবং পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে স্পর্শকাতর এই ঘটনাটির সুস্থ্য সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে শিশুদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
প্রসঙ্গত: উসিরি ভিক্ষু আশ্রমে নেয়ার কথা জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে ১৪ শিশু কন্যাকে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মিতিংঙ্গ্যা ছড়ি বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নেয়ার কথা বলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৩ শিশু কন্যাকে মিয়ানমারে পাচার করে। আশ্রম থেকে ১ জন শিশু কন্যা পালিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাড়ি ফিরে ঘটনাটি অভিভাবকদের জানালে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় অভিভাবকরা রোয়াংছড়ি থানায় একটি মামলা করেন।