বাস্তবতাকে মানতেই হবে

0
117

সকলের মনের মাঝেই একটি গোপন ইচ্ছা থাকে। নিজের ভালোবাসার সম্পর্কটি অনেক বেশী রোমান্টিক হবে, পরিপাটি হবে। অথবা রূপকথার গল্পের মতো ‘অবশেষে তাহার সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিল’- এই একটি উক্তির মাঝেই শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশী ভিন্ন। বাস্তব জীবনে ভালোবাসার সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান, আকর্ষণের পাশাপাশি এমন কিছু বাস্তবতা থাকবে, যেগুলকে কোনোভাবেই এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। সঙ্গীর সাথে ভালোবাসার সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলে নিজের ভেতরের কিছু চিন্তা-ভাবনা দূর করতে হবে, বদলাতে হবে। মেনে নিতে হবে কিছু বাস্তবতাও। আর এগুলোই ভালোবাসার সম্পর্কটিকে মজবুত করতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করবে। এবার জেনে নিন, ভালোবাসার সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে যে বাস্তবতাগুলো মানতেই হবে।

“ভালোবাসা দ্বারা সবকিছু জয় করা সম্ভব”

খুব সাধারণভাবে বললে, ভালোবাসা দ্বারা কখনোই সবকিছু জয় করা সম্ভব নয়। সবকিছু শব্দটা বলতে আদতে অনেক বেশী কিছু বোঝানো হয়। প্রকৃত অর্থেই অনেক বেশী কিছু। যার ফলে এই ধারণাটি আক্ষরিক অর্থেই খুব বেশী বিভ্রান্তিকর। এমন ধারণা যারা নিজেদের মাঝে ধারণ করেন, তারা ভাবেন, শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়েই সবকিছু জয় করা যায় এবং সঙ্গীকেও পাশে রাখা যায়। কিন্তু একটা মজবুত ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক বেশী দায়িত্বের প্রয়োজন। শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়েই সেটা অর্জন করা সম্ভব না।

“জীবনে শুধুমাত্র ভালোবাসা প্রয়োজন”

ভুল কথা। খুবই ভুল কথা। একজন মানুষের জীবন যাপন ও ধারনের জন্য আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা- মৌলিক এই পাঁচটি জিনিস ছাড়াও বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেনের! তার চাইতেও বড় বাস্তবতা হচ্ছে, ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সফল একটি ক্যারিয়ার জীবন গড়ে তোলা। এই কথাগুলো খুব বেশী সরল ও সত্য। তাই যখনই এমন চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাবে, সাথে সাথেই এই চিন্তাগুলোকে বিদায় করে দিতে হবে। অবশ্যই জীবনে ভালোবাসার প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটাই সবকিছু নয়।

“সত্য ভালোবাসা হয় নিঃশর্ত”

দুঃখিত। এটাও চূড়ান্ত ভুল একটি ধারণা। প্রায়’শ দেখা যায় কিছু যুগল অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একে-অন্যের প্রেমে পড়ে যান। অকল্পনীয় ভালোবাসায় দুজনেই ডুবে থাকেন। কিন্তু, কিছুদিন যাওয়ার পর কোথায় যেন সেই রোমান্টিকতা উবে যায়। ফলাফল স্বরূপ, ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে যায়। কেন এমন হয়? কারণ সম্পর্কে ভালোবাসার কমতি না থাকলেও অন্যান্য যে সকল বিষয় ও বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া হয়, সেগুলোই এসে কড়া নাড়তে শুরু করে একটা সময় পর। বাস্তবে সত্যি ভালোবাসা কখনোই নিঃস্বার্থ নয়। ভালোবাসার পাশাপাশি সময়, সুস্বাস্থ্য, স্বপ্ন, ইচ্ছা, ক্যারিয়ার ইত্যাদি আরো কিছু ব্যাপার চলে আসে, যেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

“সঠিক মানুষের সাথে জীবনের সবকিছুই সহজ”

জীবনের কোনকিছুই কখনো সহজ নয়। বিশেষ করে ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময়ই অনেক বাধাবিপত্তি, ঝামেলা, সমস্যা থাকবেই। সম্পর্কের শুরুর দিকে সবকিছুকেই অনেক রঙিন এবং আনন্দময় বলে মনে হবে। তবে এই সময়টা পার হয়ে যায় খুব দ্রুত। এরপর প্রতিটি ধাপেই লড়ায় করে এগিয়ে যাওয়া। তবে বলা যেতে পারে, সঠিক মানুষের সাথে জীবনের লড়াইগুলো করা সহজ হয়ে যায়। ভালোবাসার সম্পর্ককে ধরে রাখা, একসাথে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপারগুলো এতোটাও সহজ নয়।

“মানুষ কখনোই বদলায় না”

মুনীর চৌধুরী রচয়িত ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের খুব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় একটি লাইন হলো- ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।‘ এই একটা লাইনই যথেষ্ট পুরো বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য। প্রতিটা মানুষ জীবনের বিভিন্ন ধাপে, বিভিন্ন কারণে বদলায়। এটাই স্বাভাবিক। ভালোবাসার সম্পর্কের জড়ানোর পরেও একজন মানুষ বদলাতেই পারে। আগে ভালোবাসার মানুষটি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করলেও এখন হয়তো কোন কারণে ঘরে বসে থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। কারোর চারিত্রিক পরিবর্তন কোনভাবেই তার সম্পর্কের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে না।

“সবকিছুই হবে সঠিক সময়ে”

জীবনের সবকিছুর জন্যে সঠিক সময়ের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে সঠিক সময়ে সবকিছু হয় না, অনেককিছু হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেক ঘটনা ঘটে যায়। জীবনে চলে আসে ভিন্ন মোড়। সেক্ষেত্রে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করাটা বোকামি। বরং যখন যেমন প্রয়োজন,তেমনভাবেই সবকিছুকে সময়ের সাথে সাথে গুছিয়ে নিতে হবে।