বাস্তবের নায়ক দীদার; ঝর্ণায় আটকা পড়া ৩২ জনকে একাই উদ্ধার করল

0
50

ছেলেটার নাম দীদার। রাঙামাটির ঘাগরার কলাবাগান নামক জায়গায় দীদার স্টোর নামক একটা ঝুপড়ি দোকানের সাথেই ছোট্ট কুড়ে ঘরে সে তার মা ও বোনকে নিয়ে থাকে।

 

সারাদিন দোকানে ও হ্যাদাছড়া ঝর্ণায় গাইড হিসেবে কাজ করে সময় কাটে তার। ১১ আগস্ট বিকেলেও যথারীতি দোকানে কাজ করছিল ১৩ বছরবয়সী এই ছেলেটি।

যদিও সারাদিনের ঝুম বৃষ্টিতে তার বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। ঠিক সেসময় তার কানে ভেসে এলো কান্নার আওয়াজ। দোকানের পেছনে গিয়ে সে দেখলো মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় একটা ছেলে সেখানে পড়ে আছে। কাছে যেতেই ছেলেটা জানালো, সে কোনমতে বেচে ফিরলেও তার গ্রুপের ২৯ জন এবং আর্মি সদস্য তিনজন মোট ৩২ জন আটকা পড়েছে হ্যাদাছড়ার পাহাড়ি ঢলে এবং পাহাড়ধসে ফেরার পথও বন্ধ।

দীদারের পরিবারের কারো ফোন নেই এবং ওই জায়গায় সচরাচর কোন গাড়ি না থামায় নিকটবর্তী ঘাগরা আর্মি ক্যাম্পে খবর দেয়া প্রায় অসম্ভব। ততোক্ষণে হয়তো কারো প্রাণ নাশ হবে। আর তার বাড়ির পেছনে হ্যাদাছড়ার রাস্তায় ঢুকলে আর কোন নেটওয়ার্ক থাকে না। এমতাবস্থায় দেরি না করে মায়ের কাছে আহত ছেলেটাকে রেখে দৌড়ে চলে গেলো দীদার।

কোনমতে এপাহাড়, ওপাহাড় দিয়ে আটকে পড়া ৩২ জনের কাছে পৌঁছাতেই দেখল ততোক্ষণে অন্যান্য আহত ছেলেমেয়েদের সান্ত্বনা দিতে থাকলেও প্রকৃতির কাছে প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছে ওই তিনজন সেনা সদস্য।

দীদারকে দেখে ভয়ে অর্ধমৃত ছেলেমেয়েরা কিছুটা সাহস পেলো। দোকান থেকে বুদ্ধি করে দড়ি সাথে এনেছিল দীদার। ততোক্ষণে তাদের আশ্রয় নেয়া জায়গাটাও মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে একদিকে পাহাড়ধসে, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে। গাছে রশি বেধে নিচে নেমে পথ বাতলে দিল সে ওই ৩২ জনকে। একজন একজন করে খাদ থেকে পাহাড়ে উঠে এলো।

সেনাসদস্যরা আহতদের সাহায্য করে পাহাড়ের উপরে নিয়ে গেলো। সবার জন্য নিরাপদ একটা চলার পথ খুজে সবাই যখন দীদারের দোকানে এসে পৌছায় তখন রাত ৮ টা। বেচে ফেরা ছেলেমেয়েদের ভেতর কেউ একটা সিমসহ মোবাইল সেট দিয়ে গেছে দীদার ও তার মাকে। যেন কেউ বিপদে পড়লে তারা তৎক্ষণাৎ আর্মি ক্যাম্পে জানাতে পারে।

দেশে দিন দিন দীদারদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একদিন ওই ৩২ জনের মত সারা দেশকে পথ দেখাবে দীদাররা। দেশের ক্রান্তিকালে দীদাররাই একদিন পথ দেখাবে দেশকে। কিন্তু, এত অল্প বয়সে এত সাহসী নায়ক-মহানায়কেরা কেবল অগোচরেই রয়ে যায়। তাদের মহৎ কর্মের কোন স্বীকৃতি আমরা তাদেরকে দেই না।