বিএনপি নির্বাচনে থাকলে একক প্রার্থী দেবে ১৪ দল

0
54

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছিরকে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দল। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ নিলে ঢাকাতেও একক প্রার্থীকে সমর্থন দেবে ১৪ দল। আর বিএনপি নির্বাচনে না থাকলে নির্বাচন সব প্রার্থীর জন্য
উন্মুক্ত রাখা হবে। গতকাল ১৪ দলের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের একাধিক নেতা জানান, যেহেতু মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ১৪ দলের সমর্থনের আশায় অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সেকারণে ঢাকায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ১৪ দলের সমর্থনের বিষয় চূড়ান্ত হবে। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনে আসা না আসার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। বৈঠকে অংশ নেয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত দুই প্রার্থীর পক্ষে থাকার জন্য ১৪ দল নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য ১৪ দলের অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারাও নির্বাচন করতে আগ্রহী। তাই কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের প্রার্থীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের আজকালের মধ্যে আলোচনার কথা রয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া জাসদের প্রার্থী হিসেবে ঢাকার উত্তরে নাদের চৌধুরী ও দক্ষিণে শহীদুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমাদানের বিষয়ে জোটের মুখপাত্র নাসিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে নাসিম নির্বাচন কমিশনের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। আম্বিয়া বলেন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে আমাদের দলের দুজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে প্রার্থিতা বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ দলীয় জোট যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে ১৪ দলও একজন প্রার্থী নির্ধারণ করে সেই প্রার্থীকে সমর্থন করবে। আর যদি ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে ১৪ দলের প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। ২৭শে মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে সাঈদ খোকন ও আনিসুল হকের নাম ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ১৪ দলের অনেক নেতা। তাদের অভিযোগ ছিল, নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়টি গতকালের বৈঠকে ১৪ দলের একাধিক নেতা উত্থাপন করেন। তারা বলেন, একক প্রার্থী ঘোষণার আগে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আগে থেকে আলাপ, পরামর্শ করলে ভাল হতো। নেতাদের এসব বক্তব্য শুনে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম কোন মন্তব্য করেননি বলে জানান ১৪ দলের কয়েক নেতা। এ বিষয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিষয়টি মোহাম্মদ নাসিমকে অবহিত করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। আর শেখ হাসিনা জোটের প্রধান। তিনি যা ভাল মনে করেন সেটাই করবেন। আর তিনিতো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাও করতে পারেন। তবে বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিমের বলা সিদ্ধান্তের কথা সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের একজন নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, আজকের (গতকাল) বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার দুইজন ও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিষয়ে ১৪ দলের সমর্থন আদায় করা। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের প্রার্থীর বিষয়ে আমরা মৌন সমর্থন দিয়েছি। ঢাকার প্রার্থীদের বিষয়েও নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই প্রার্থী ও জাসদ সমর্থিত দুই প্রার্থীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রার্থী বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু জোটের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করলেন ‘সিটি নির্বাচনে অবশ্যই একক প্রার্থী ও জোটের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ১৪ দল মেনে নেবে’। তিনি সংবাদ সম্মেলনে কেন এই বক্তব্য দিলেন তা বোধগম্য নয়। বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে ১৪ দলের নেতারা তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া নাসিরের সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের দূরত্বের বিষয়টি ঘোচানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন চট্টগ্রামের প্রার্থী আ জ ম নাছিরের সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের দূরত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে তা নিরসনের আহবান জানান। পরে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিকে ১৪ দল ও আ জ ম নাছিরের মধ্যে সমঝোতার দায়িত্ব দেয়া হয়। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্য গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজাল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এসএম কামাল, সুজিত রায় নন্দি। এ ছাড়া ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল হাসান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, ন্যাপের (মোজাফফর) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসামাইল হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি ডা. জাকির হোসেন, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার প্রমুখ। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নাসিম বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীর সমর্থনের বিষয়ে জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন ১৪ দল তাই মেনে নেবে এবং নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অবশ্যই একজন থাকবে। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের রাজনীতি এখন ডাবল স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছেছে। কখনও তারা বলে হরতাল প্রত্যাহার, আবার তারাই গায়েবি প্রেসরিলিজ দিয়ে হরতাল ডাকে। তিনি বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা কখন কি করবে দেশের জনগণ জানে না। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা স্তিমিত হয়ে এলেও তা এখানও অব্যাহত আছে। তবে জনগণ বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। চূড়ান্তভাবে বিএনপিকে পরাজিত না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলতে থাকবে। নাসিম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় নির্বাচন হলেও এখানে রাজনৈতিক আবহাওয়া থাকে। জনগণ এই নির্বাচনে অংশ নেবে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেই তারা বিজয়ী করবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য লেবেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে। তবে, সন্ত্রাসী কাজের জন্য কোন লেবেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে না।