বিএসটিআই এর সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ

0
199
চট্টগ্রামে  বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উদযাপন!
 

চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও বন্দর নগরী, দেশের অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনকারীর অবস্থান চট্টগ্রামে একই সাথে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সিংহভাগ আমদানী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হলেও এখনও যে কোন পণ্যের মান নির্ণয়ের বিএসটিআই এর মান সদনের জন্য ঢাকায় যেতে হয়। যা শুধুমাত্র ব্যয় নির্ভর নয়, সময় সাপেক্ষেও বটে। সরকারের কিছু নীতিনির্ধারনী মহলের খামখেয়ালীপনার কারনে এই দীর্ঘ সুত্রিতা। ফলে দেশে শিল্প ও উৎপাদনকারীদের ভোগান্তির মাত্রা যেমন বাড়ছে তেমনি এর উৎপাদন খরচও বাড়ছে। তাই দেশের শিল্প উৎপাদন, শিল্পের উৎপাদন খরচ কমানো ও নিরাপদ খাদ্য ও পণ্য নিশ্চিতে চট্টগ্রামে খাদ্য ও পণ্যের মান সনদ প্রদানে বিএসটিআই এর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। সোমবার (২০ মে) সকাল ১১ টায় ১৬ তম বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উদ্যোগে নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আলোচনা সভায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত দাবি জানান। এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- আন্তর্জাতিক পদ্ধতির একক মৌলিকভাবে উত্তম। বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন আক্তার, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। আলোচনায় অংশনেন বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসের উপ-পরিচালক শওকত ওসমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বনফুল গ্রুপের চেয়াম্যানআবদুল মোতালেব, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, ক্যাব চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যৗাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য মোহাম্মদ আলী পাশা, চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, ক্যাব চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, চকবাজার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ক্যাব পাচলাইশের যুগ্ন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

বক্তাগন বলেন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সঠিক ওজন পরিমাপের গুরুত্ব এবং জনগণকে সচেতন করে তোলাই বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। ওজন ও পরিমাপের সর্বক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতির একক পরিমাপ (কেজি, লিটার, মিটার) ব্যবহার ও বিএসটিআই কর্তৃক পরীক্ষিত ওজনযন্ত্রে মেপে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান। পণ্য ক্রয়ে ভোক্তারা বিএসটিআইয়ের স্টিকারযুক্ত ওজন যন্ত্র দেখে ক্রয় করতে সচেতনতা সৃষ্ঠিতে আরও কর্মসুচি গ্রহনের আহবান জানান।

চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন আক্তার বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওজনে পণ্য কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটা সত্যি যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভ ও তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার নেশায় ওজনে পণ্য কম ও পণ্যে ভেজাল দিচ্ছেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ভেজালমুক্ত পণ্য তুলে দেয়ার লক্ষ্যে প্রশাসন, বিক্রেতা, ভোক্তা ও বিএসটিআই এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দিবস পালনের মধ্যেই সীমিত না রেখে ভোক্তা  ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরও কর্মকান্ড পরিচালনার উপর গুরুত্বআরোপ করেন। তিনি বলেন  ওজন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে ভোক্তারা প্রতিনিয়তই ঠকছে। বিশেষ করে কাপড়ের ব্যবসায়ীরা মিটারে কাপড় কিনে তা ক্রেতাদের কাছে গজে বিক্রি করছেন। এভাবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছেন। আর প্রশাসন বারবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমান করলেও অপরাধ থেমে নেই। তাই এ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সামাজিক ভাবেও বয়কট করার দাবি জানান। তিনিও বলেন ব্যবসায়ী হই আর চাকুরীজীবি হই, দিন শেষে সকলইে ভোক্তা, ছোট ব্যবসায়ী ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে, কাপড়ের ব্যবসায়ী খাদ্য, মাছ, মাংশসহ অন্যের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে। ওজনে কম দেবার প্রতারনা মারাত্মকভাবে সামাজিক ব্যাধি হিসাবে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করে সমাজকে কলুষিত করছে। তাই ওজনে কম দেয়া, ভেজাল পণ্য বিক্রি বন্ধে বিএসটিআই এর মাঠ পর্যায়ে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে এবং জনগণকে এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করতে হবে। তিনি ৪টি ক্যালিব্রেশন ভ্যান দিয়ে সারা দেশে মোবাইল ক্যালিব্রেশন নজরদারির খুবই নগন্য বলে এ কর্মকান্ড আরও সম্প্রসারণ করা, চট্টগ্রামে বিএসটিআই এর কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের দাবি জানান।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম রেজা বলেন, পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধান এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধসহ সর্বক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ১৮১ টি শিল্প, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যের গুণগতমান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানহীন ও অনিরাপদ খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য ভোক্তাগণের জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ জাতীয় পণ্য বর্জন করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।