বিলুপ্ত মেটে তিতিরের দেখা!

0
69

‘মেটে তিতির’ পাখিটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) এক প্রতিবেদনে। কিন্তু সম্প্রতি কুষ্টিয়ার গড়াই নদীসংলগ্ন হরিপুর চরে বিরল এ পাখিটির সন্ধান পেয়েছে ‘কিচির-মিচির’ সংগঠন। এতে পাখি প্রেমিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।

‘কিচির-মিচির’ সংগঠনের বার্ডওয়াচার সদানন্দ মণ্ডল জানান, বসবাসের অভাব ও পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্যে মেটে তিতির পাখিটি এখন বিলুপ্ত বলে ধরা হয়। কিন্তু ফের পাখিটির দেখা মিলেছে। পাখিটি বড়ই লাজুক। দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ২৭৫ গ্রাম।

একটি প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা, কালো চক্ষু-রেখা, পিঙ্গল-বাদামি চোখ, সরু কালো ডোরাকাটা হয়ে থাকে পাখিটি। পাখিটির পা লালচে হওয়াতে কাশ ঘাসের লালচে কাণ্ড ও তামাটে নলঘাসের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিশে যায়।

উপরন্তু বুকের ধুসর ডোরাকাটা দাগগুলো যেন মাটি আর শুকনো ঘাসের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। ফলে পাখিটি এমন ছদ্মবেশে ঘাসবনে চলাফেরা করে, সামনে থাকলেও খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়। পাখিটির ইংরেজি নাম Grey Francolin, বৈজ্ঞানিক নাম Francolinus pondicerianus, আর বাংলায় মেটে তিতির। ১৬৬ বছর আগে তৎকালীন বেঙ্গল ইনফ্রেন্ট্রির কর্নেল আরসি টিটলার এদেশ থেকে এই পাখির একটি নমুনা সংগ্রহ করেন।

এরপর ২০১০ সালে আরেকটি নমুনা পাওয়া যায়। এর মাঝে পাখি বিজ্ঞানীদের কাছে এদের অস্তিত্ব নিয়ে বেশ সংশয় ছিল। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) প্রতিবেদনে পাখিটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বলে (regionally extinct) উল্লেখ করা হয়।

তবে এ আগস্ট মাসেই রাজশাহীর পদ্মার চর ও পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার গড়াই তীরবর্তী চরাঞ্চলে এদের পুনরায় দেখা মিলেছে। এ ঘটনা পাখিপ্রেমীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

মেটে তিতির অতি লাজুক পাখি। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। পুরুষ পাখি জোরালো কণ্ঠে ডেকে উঠে এলাকায় উপস্থিতি জানান দেয় এবং স্ত্রী পাখিকে আকর্ষণ করে। জোড়া বাঁধার পর ঘাস-পাতা দিয়ে তৈরি বাসায় সচরাচর ৪-৯টি ডিম পাড়ে।

তবে একসঙ্গে ১৪টি পর্যন্ত ডিমও দিতে পারে। টানা ১৮-১৯ দিন যাবৎ ডিমে তা দেয়ার কাজটি স্ত্রী পাখিই করে। পুরুষ পাখিও সেই সময়টায় তার আশপাশেই থাকে এবং বিপদ আসন্ন দেখলে ডেকে উঠে স্ত্রীকে সতর্ক করে দেয়। এদের প্রধান খাবার ঘাসের ডগা, ঘাসবীজ ও পোকা-মাকড়।

ফাঁদ পেতে ধরা এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণেই মূলত পাখিটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তবে আশার কথা হলো- লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা পদ্মা বিধৌত কিছু চরে অনুকূল আবাসস্থলের কারণে এখনো এরা টিকে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিপদাপন্ন এ প্রজাতিটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সচেতন হওয়ার এখনই সময়। নতুবা আমাদেরই অজ্ঞতা ও অমানবিকতার শিকার হয়ে এদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে মেটে তিতির।