বিসিবির নির্বাচন!

0
110

বিসিবিএনএসসি টাওয়ারের ষষ্ঠ তলার সুনসান করিডরটা হঠাৎই যেন হয়ে গেল এক টুকরো বিসিবি কার্যালয়। জালাল ইউনুস, মাহবুবুল আনাম, এনায়েত হোসেনদের তো সেখানে দেখেই অভ্যস্ত সবাই! প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমান অভ্যর্থনা জানালেন এই ত্রয়ীকে।
তাঁরা নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে ঢুকতে না-ঢুকতেই বড় ধাক্কা খেতে হলো। বিসিবির বর্তমান অস্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ইসমাইল হায়দার মল্লিক আর লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার পেছন পেছন এঁরা কারা ঢুকে পড়ছেন নির্বাচন কমিশনারের কক্ষে? কারও পরনে লুঙ্গি, কারও শর্টস, টি-শার্ট, কারও পিঠে ট্রাভেলিং ব্যাগ, কেউ হয়তো বোতাম খোলা শার্টের উদ্ধত তরুণ। ‘নেতা’দের পেছন পেছন ২০-৩০ জনের এই বেপরোয়া দলটা নির্বাচন কমিশনের কক্ষে ঢুকে চেয়ারে চেয়ারে বসে পড়ল। যেন তাঁরা কাউন্সিলর কিংবা বিসিবির কর্মকর্তা। অথচ এ দুটো হওয়ার মতো বয়স এঁদের বেশির ভাগেরই নয়। তাহলে কেন এই মহড়া?
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য, টাকার বিনিময়ে তরুণ এই দলটাকে সঙ্গে আনা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করতে। যদিও পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এনায়েত হোসেন এঁদের সঙ্গে তাঁদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। সত্যি যাই হোক—বিসিবির নির্বাচনের সবচেয়ে কদর্য দিকটাই তুলে ধরল এ ঘটনা। দৃশ্যটা একবার কল্পনা করুন, বিসিবির চার-পাঁচজন ডাকসাইটে পরিচালক আর নির্বাচন কমিশনারদের (সবাই সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) সঙ্গে পাশাপাশি বসে ‘সভা’ করছেন লুঙ্গি-শর্টস আর বুক খোলা জামার কিছু তরুণ-যুবক!
‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলে পরিচিত ক্রিকেটের নির্বাচন যদি এই পর্যায়ে নেমে আসতে পারে, তাহলে অসম্ভব বলে আর কিছুই থাকার কথা নয়। সেটা নেইও। নইলে কেন গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী উপায়ে কাউন্সিলরদের নাম সংগ্রহ করার পরও খসড়া ভোটার তালিকাই বহাল রাখবে নির্বাচন কমিশন? কাল বেলা ৩টায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা হলো সন্ধ্যা ৬টার দিকে। জনাকীর্ণ সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমান জানালেন, ‘আজ (গতকাল) আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছি। এর সঙ্গে খসড়া ভোটার তালিকার কোনো পার্থক্য নেই। ১৬টি আপত্তি পর্যালোচনা করে এর কোনোটিকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কাজেই খসড়া তালিকায়ই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে।’ সাবেক বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী আগের দিন যে অ্যাপিলেট ডিভিশনের রায়ের সার্টিফায়েড কপির কথা বলেছিলেন, কাল বিসিবির কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন সেটাও পেয়েছে বলে জানালেন তিনি।
এর আগে দিনভর অপেক্ষার পালাই চলেছে এনএসসি টাওয়ারে। মাঝে খবর রটল, বিসিবির দুই বেতনভুক্ত কর্মকর্তা নাকি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বসে বসে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ তদারকি করছেন। প্রভাবিত করছেন নির্বাচন কমিশনকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবশ্য অভিযোগটা অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে পারছেন।
দুপুরে এনএসসি টাওয়ারে বিসিবি কর্মকর্তাদের ‘মহড়া’ এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মিনিট পাঁচেকের সভা অবশ্য সে আভাস দেয় না। তবে এনায়েত হোসেনের দাবি, ‘আমরা এসেছিলাম সিসিডিএমে (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সিসিডিএম কার্যালয়) লিগের খেলা নিয়ে কিছু কথা বলতে। ভাগ্যক্রমে সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা।’ যদিও তাঁর পরবর্তী কথাবার্তা এবং সহযোগী বোর্ড কর্মকর্তা ইসমাইল হায়দার মল্লিকের দেখানো নির্বাচন-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে তাঁদের এনএসসিতে পদধূলি দেওয়ার কারণ পরিষ্কার হয়ে গেছে।
যা-ই হোক, ‘ভাগ্যক্রমে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনাও হয়েছে দুই পক্ষে। এনায়েত হোসেনই বলছিলেন, ‘পত্রপত্রিকায় কিছু বিভ্রান্তিকর কথা এসেছে। আমরা বলেছি এ কথাগুলোর ভিত্তি নেই। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রসহ যেসব কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তি উঠেছে আমরা সেসবের কাগজপত্র দেখিয়েছি। ওনারা বলেছেন, এসব কাগজ তাঁদের কাছেও আছে।’ পাশে দাঁড়ানো শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের ক্রিকেট কমিটির প্রধান রাশুরুল হক সমর্থন করলেন এনায়েত হোসেনের বক্তব্যকে।
এনএসসি টাওয়ার ছাড়ার আগে ইসমাইল হায়দার মল্লিক আপত্তি ওঠা কয়েকটি জেলা ও বিভাগের কাউন্সিলর মনোনয়নের চিঠি দেখিয়ে বললেন, ‘এসব চিঠি অসংগতিপূর্ণ। চিঠি ইস্যুর তারিখ হয়তো সেপ্টেম্বরে, কিন্তু সই করানো হয়েছে আরও আগে। তার মানে কাউন্সিলর চাওয়ার আগেই তারা সাদা কাগজে সই নিয়ে নিয়েছিল।’
বিসিবির নির্বাচন আসলেই তুলে ধরছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কদর্য দিক। ক্রিকেট এ দেশে মাঠেই সুন্দর, মাঠের বাইরে নোংরামি ছাড়া আর কিছুই না।
pa.com