বেনারসি পল্লী,মাকুতে স্বপ্ন জয় করেছে শ্রমিকরা

0
84

আবদুস সালাম, রংপুর>>রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তালুকহাবু বেনারসি পল্লীতে মাকুতে স্বপ্ন জয় করেছে শ্রমিকরা। ঈদ সামনে রেখে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বাড়ছে শ্রমিকদের। বেনারসি পল্লীটির কাজ শেষ হলেও নানা সমস্যা থাকায় এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কারিগর ও তাঁতিরা। সরেজমিন বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, নানা সমস্যার কারণে তালুকহাবু গ্রামের তাঁতিরা আতঙ্কিত। শ্রমিকরা জানান, উৎপাদিত শাড়ি বাজারজাত করা, ক্রেতার চাহিদামতো ডিজাইন সংগ্রহ এবং কাঁচামালসহ অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহের সমস্যায় তাদের এ পেশা বেনারসি পল্লী১টিকে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে করে ঈদে ব্যস্ততা বাড়লেও দুশ্চিন্তা তাদের পিছু ছাড়ছে না। তারপরও শ্রমিকরা তাদের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন। অন্তত ২০০ পরিবার এ বেনারসি পল্লীর মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

রংপুর বিসিক জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৬৭টি তাঁতি পরিবারকে দুই বছর তাঁতের জন্য বিনামূল্যে শেড নির্মাণ, কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, ডিজাইন, উৎপাদন, বিপণনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বিসিকের এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মাকু চলার গতি বেড়ে যায়। তবে ফাইজার বেনারসি উইভিং ফ্যাক্টরির কারিগর সাইফুর রহমানসহ সেখানকার শ্রমিকরা জানান, সরকারি বা বেসরকারিভাবে এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিলে আরও উৎসাহ পেত শ্রমিকরা। শ্রমিক রবীন্দ্র জানান, একটি শাড়ি তৈরি বেনারসি পল্লীকরে মজুরি পাই ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এতে করে আমার সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে। তাঁত শ্রমিক মনজিলা বেগম বলেন, এখানে কাজ করে আমার সংসার চলে। মাকুতে আমাদের স্বপ্ন। একটি শাড়ি প্রস্তুত করতে সময় লাগে কমপক্ষে তিন থেকে চারদিন। একটি শাড়ি পাইকারি দামে বিক্রি হয় দেড় হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। শ্রমিকরা জানান, তারা ন্যায্য মজুরি পেলে এ বেনারসি পল্লীতে আনন্দ নিয়ে কাজ করত। রংপুরে বেনারসিতে জামদানিসহ বিভিন্ন দামি শাড়ি তৈরি হলেও শাড়ির সুতা কাটার মেশিন নেই, সুতা কাটার জন্য যেতে হয় ঢাকায়।

বেনারসি পল্লী মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, বেনারসি শাড়িশিল্প ধরে রাখাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। মাল তৈরি করার পর ডায়িং করতে ঢাকার মিরপুর অথবা নারায়ণগঞ্জে যেতে হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি ডায়িং মেশিন বসাতে পারলে গঙ্গাচড়ার বেনারসি শিল্পে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন। তালুকহাবু গ্রামের তাঁতি মুন্না জানান, তার পরিবারের ৩০টি তাঁত রয়েছে। কাঁচামালের পুঁজি জোগান এবং বাজারজাতকরণের অভাবে বছরের অধিকাংশ সময় তাঁত মেশিন অলস পড়ে থাকছে। বেনারসি পল্লীর প্রকল্প পরিচালক এবং বিসিক রংপুর জেলার উপব্যবস্থাপক আলতাব হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, তাঁতিদের সুদবিহীন নগদ অর্থ সহায়তা, তাঁতের ঘরসহ অবকাঠামো নির্মাণ, উৎপাদিত বেনারসি শাড়ির প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়ন ও উৎপাদন সহযোগিতার মাধ্যমে বেনারসি পল্লী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকার ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে। বিসিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬৭টি পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করে ৪০টিতে ৬৮০ বর্গফুটের তাঁত বসানো শেড নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এসব শেডের সম্পূর্ণ নির্মাণ ব্যয় প্রকল্প খাত থেকে করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক তাঁতির মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা স্বল্পসুদে উৎপাদন, ঋণ বিতরণ করে আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়।