ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে ৪টি গ্রাম

0
107

অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণমণি, মনোহরপুর, হেলেঞ্চা ও টানাঘাট গ্রাম। ব্রক্ষপুত্রের কড়াল গ্রাসের শিকার হয়ে ওই ৪ গ্রামের দুই সহ¯্রাধিক মানুষ তাদের পৈত্রিক ভিটেমাটিসহ সর্বস্ব হারিয়ে এখন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বিগত সময়ের উপর্যুপরি বন্যা ও নদী ভাঙন বিশাল এ এলাকার জনগোষ্ঠীর এগিয়ে চলার পথকে থামিয়ে দিয়েছে। ফলে ভিটেমাটি হারা সহায় সম্মলহীন ওইসব মানুষ পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে।

ওই গ্রামের সাবেক বাসিন্দা ইনছাফ আলী মন্ডল (৭৫), আশরাফ মুন্সি (৬৫), ফজর মিয়া (৬২) ও বদর মিয়া (৭০) সহ অনেকে বলেন, উপজেলার সবচেয়ে উর্বর ভিটেমাটিযুক্ত গ্রাম কৃষ্ণমণি, মনোহরপুর, হেলেঞ্চা ও টানাঘাট । বৃক্ষ শোভিত শস্য-শ্যামল সমৃদ্ধ গ্রামগুলো ব্রক্ষপুত্রের অবিরাম ভাঙনে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে ঠিকানাহীন হয়ে পড়েছে এলাকার শত শত পরিবার। অনেকে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে নদীর তীরবর্তী বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ওইসব পরিবারে সামাজিক অবহেলা যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, ইতিমধ্যে নদী ভাঙনের কারণে তার এলাকার কৃষ্ণমণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ্ববর্তী ৪নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া হেলেঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চিকিরপটল দাখিল মাদ্রাসা নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় পার্শ্ববর্তী উড়িয়া ইউনিয়নের কালাসোনা গ্রামে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য স্থাপনাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে আশপাশের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে।

মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালে প্রবল নদী ভাঙনের কারণে অত্র বিদ্যালয় এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার লোকজন তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ৩নং ওয়ার্ডের অন্য কোথাও ঘর তোলার জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়টি ৪নং ওয়ার্ডের বাজে তেলকুপি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে। এলাকার সাবেক সমাজসেবী এনায়েত আলী বলেন, দীর্ঘদিনের পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে কার মন চায় ? কিন্তু ভয়ংকর নদী ভাঙনে বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে হয়ে গেছে পথের ফকির। নদী ভাঙন রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে কোন কার্যক্রম না থাকায় ধীরে ধীরে গ্রাম গুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনও অনেকে নদীর পাড়ে বসে পানিতে তলিয়ে যাওয়া পৈত্রিক ভিটেমাটি অনুমান করে স্মৃতি রোমন্থন করে।

রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া কৃষ্ণমণি গ্রামের ফরিদ বেপারী বলেন, এখনও আশায় বুক বেঁধে আছি, কখনও চর জেগে উঠলে পুনরায় ফিরে যাব বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে। ফজলুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল বলেন, গত কয়েক বছরের তীব্র ভাঙনে ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণমণি, মনোহরপুর, হেলেঞ্চা ও টানাঘাট গ্রাম সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ৩নং ওয়ার্ডের গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানে অবস্থান করছে। ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে ওইসব গ্রামের লোকজন বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও ভিটেমাটি হারা ওইসব লোক তাদের পৈত্রিক জমিজমা জেগে উঠবে এ আসায় রয়েছে। ওইসব গ্রামের অনেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধেও আশ্রয় নিয়েছে কিছু পরিবার। বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সামান্যতম সহযোগিতা এলে তা বাঁধে আশ্রিতদের মধ্যেও বিতরন করা হয়।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফজলুপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড নদী গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা জেনেছি। চরাঞ্চলে ভাঙন রোধে সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান মো.হাবিবুর রহমান এলাকাটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।