মনে হয় আমরা মগের মুল্লুকে বাস করছি-ফখরুল

0
86
ফাইল ছবি

দেশে আইনের শাসন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী-সন্তান ও ভাই-বোনদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে মির্জা আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের অমানবিকতা ১৯৭১-এর পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর পৈশাচিকতাকেও হার মানিয়েছে। সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে তা দেখে মনে হয় আমরা যেন এক মগের মুল্লুকে বাস করছি। সরকার ক্ষমতার সীমারেখা অতিক্রম করে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সারা দেশে বিভীষিকাময় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমাদানের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে সরকার বৈধ অস্ত্র জমাদান নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে গোটা জাতিকে এক ভীতিকর অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘোষণা এটাই প্রমাণ করে যে, বিরোধী দল ও জনগণকে দমনে সরকার দলীয় বাহিনীর অস্ত্রের শক্তি বলবৎ রাখলো, এতে করে বোঝা যায় জনগণের শক্তির ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। তিনি বলেন, গত রাতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার শামিম পারভেজ এর স্ত্রী ও দুই সন্তান, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই কন্যাকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজশাহীতে দুস্কৃতকারি কর্তৃক পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলায় পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ চার শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান মির্জা আলমগীর। এছাড়া নিহত পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ এর আত্মার শান্তি এবং আহত অন্য পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও আশু সুস্থতা কামনা করেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের কতিপয় সদস্য ও আওয়ামী নেতারা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বন্ধ করার জন্য যেভাবে ধমকের সুরে কথা বলছেন তাতে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিকতা, সীমাহীন আস্ফালন, অগণতান্ত্রিক আচরণ জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে যৌথ বাহিনী দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে বিরোধী দল নিধনে সাঁড়াশী অভিযানের নামে বিরোধী নেতা-কর্মী ছাড়াও তাদের পরিবার-পরিজনকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার অথচ সরকার ২৯ ডিসেম্বরের শান্তিপূণ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ কর্মসূচি পালন করতে অনুমতি দিলো না। সরকারের এ ধরণের হিংসাশ্রয়ী আচরণে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, গণতন্ত্র নামক শব্দটিকে তারা ইতোমধ্যেই কবর দিয়ে দিয়েছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাহায্যে ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখানো যত সহজ, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটসহ জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সাহায্য ছাড়া রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা তার চেয়ে অনেক কঠিন। ২৯ ডিসেম্বরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচালে সরকারি ঘোষণা ও বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ১৮ দল জনগণকে সাথে নিয়ে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতি। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’র মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য সৃষ্ট অচলাবস্থার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।