মাইনী নদী পারাপারে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দুর্ভোগ

0
50

খাগড়াছড়িতে টর্নেডোর আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া ঝুলন্ত ব্রীজটি মেরামত হয়নি

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি॥ টর্নেডোতে ভেঙ্গে যায় খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলার মাইনী নদীর ওপর একটি ঝুলন্ত ব্রীজ। গত চার মাসেও ব্রীজটি সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পরেছে নদীর দুপাড়ের বাসিন্দারা। নৌকায় নদী পার হতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী ভোগান্তিতে পরছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা। ভারী বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে গেলে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না অনেকে।

এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সংস্কার না হওয়ায় দারুন বিপাকে পড়েছে নদীর দুই তীরে বসবাসরত প্রায় ১০ গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দা।

দীঘিনালার হাচিনসনপুর এলা ঘুরে দেখা যায়,নদীর দুই তীরে হাতে ও মাথায় বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছে নৌকার জন্য। ছোট ডিঙি নৌকায় গাদাগাদি করে পার হচ্ছে ১৫-২০ জনের বেশী শিক্ষার্থী। কোন কোন দিন নৌকায় পারাপার হতে অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ছুটির সময় এই দুর্ভোগে পরতে হয়। নৌকার জন্য দীর্ঘক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী আকলিমা আক্তার, মুন্নি ছাত্র মোঃ জুনায়েদ হোসেননহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলেন,ঝুলন্ত ব্রীজটি সংস্কার না হওয়ায় বিদ্যালয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। সময়মত বিদ্যালয়ে যেতে অনেক সময় দেরী হয়ে যায়। তাছাড়া নদীতে পানি বেড়ে গেলে প্রবল স্রোতের কারনে নৌকায় চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ন। সর্বশেষ ভারী বৃষ্টি নদীর পানি বাড়ায় স্রোতের তোড়ে নৌকা উল্টে গিয়ে অনেকে পরে যায় নদীতে ।

নৌকার মাঝি মো.ইদ্রিস মিয়া জানান, ব্রীজটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এখানে নৌকা করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার মানুষ পারাপার করতে হয়। যাত্রী প্রতি ভাড়া নেয়া ৫ টাকা,তবে নদীতে পানি বাড়লে অনেক সময় ১০ টাকা রাখি তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া রাখা হয়। হাচিনসনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.মফিজুর রহমান,ফিরোজ আলম ও মোঃ শাহ আলম বলেন, উত্তর ও দক্ষিন হাচিনসনপুর,তারাবুনিয়া,মুসলিম পাড়া,খালকুল,দুলোছড়ি,হাজাছড়াসহ ১০ গ্রামের হাজারো বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঝুলন্ত ব্রীজটি। কিন্তু মাস চারেক আগে ঘুনিঝড়ে ব্রীজটি সর্ম্পূন ধুমড়ে মুচড়ে যায়। দীর্ঘদিন এর সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। রাতের বেলায় নৌকার মাঝি থাকে না কোন প্রয়োজন হলে বিকল্প পথে ৫ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে এলাকার বাসিন্দারা আরো বলেন,পন্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশী ঝামেলায় পড়তে হয়,তাছাড়া দিনের মধ্যে কয়েকবার পার হতে হলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।

হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবপ্রিয় বড়–য়া বলেন, ব্রীজটি ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সময় ঝামেলায় পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। বেশী বৃষ্টিতে নদী পারাপারের ঝামেলায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়। দীঘিনালা,আশ্রয়,জামতলী,মধ্যবেতছড়িসহ বেশকিছু গ্রামের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন নৌকায় নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। নৌকা করে পার হতে গিয়ে বেশ কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কয়েকদিন আগে নৌকায় উঠতে গিয়ে একজন শিক্ষিকার হাত ভেঙে গেছে। ব্রীজটি ধ্র“ত মেরামত করা অতীত প্রয়োজন।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা বলেন, গত এপ্রিল মাসে টর্নেডোর আঘাতে সম্পূর্নভাবে বিধস্ত হয়ে যায় হাচিনসনপুর ব্রীজটি এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমাতে অতি জরুরী ভিত্তিতে ঝুলন্ত ব্রীজটির নির্মান করা দরকার। তবে, এটি নতুন করে নির্মান করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পাবর্ত্য মন্ত্রানালয় বরাবরে চিঠি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।