মাদ্রাসা শিক্ষা একই নীতির আওতায় আনতে হবে

0
107

কউমি সনদ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সমন্বয় কমিটির মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষানীতিকে সরকারিভাবে বিভক্ত করে মুসলমানদেরকে বিভেদের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে আলিয়া এবং কউমি নির্বিশেষে সব মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য একই নীতি, একই সিলেবাস ও কারিকুলামভুক্ত করে একই শিক্ষাবোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসার দাবি জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে এই নীতি কায়েম হলে ওহাবী-সুন্নি বিতর্ক যেমন কমে আসবে, তেমনি ইসলামের নামে উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও হালে পানি পাবেনা, বিধায় দেশ সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। সরকার সুন্নি ও কউমী আলেমদের নিয়ে সে সিলেবাস ও নীতিমালা তৈরী করলে তাতে কারো কোন পক্ষের আপত্তি করার সুযোগ থাকবেনা। আমরা এ দাবি বিগত কয়েকবছর ধরে জানিয়ে আসলেও সরকার এমন একটি নিরপেক্ষ এবং যৌক্তিক প্রস্তাবকে গুরুত্ব না দিয়ে হেফাজতের সাথে অশুভ রাজনৈতিক আঁতাত করে মূলত দেশের ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ সরকার হেফাজতের পাশবিক শক্তিকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিনাশর্ত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে এবং কোন ধরনের সংস্কার না করে তাদের ইতোপূর্বের সব বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে একবারে মাস্টার্স মানের স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। যা রীতিমতো হাস্যকর এবং অবিবেচনাপ্রসূত। সরকারের এ নীতি সতের বছরের নিরবচ্ছিন্ন কঠিন শিক্ষাজীবন পাড়ি দিয়ে এবং অনেকগুলো পাবলিক পরীক্ষার কঠিন বৈতরণী উত্তীর্ণ হয়ে একই সনদ অর্জন করা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য অপমানজনকও বটে। শুধু তাই নয়, সাধারন ও আলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হবার জন্যও সরকারি কঠিন নিবন্ধন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়-যা কউমী-ওহাবীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়নি। যা এক ভয়াবহ বৈষম্য এবং অশুভ আঁতাত ছাড়া আর কিছুই নয়। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার একদিকে ঐতিহ্যবাহী আলিয়া সিলেবাসের উপর খড়গ চালিয়ে একে সাধারণ শিক্ষা বানিয়ে নিচ্ছে নান্তিকদের খুশি করতে, আর অপরদিকে ওহাবী-কউমীদের সিলেবাস ও নীতিতে কোনপ্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের সর্বোচ্চ সনদ দিয়ে, মূলত আলিয়া মাদ্রাসামুখি দ্বীনী শিক্ষা পিপাশুদের সুকৌশলে কউমী মাদ্রাসার সহজ সনদ অর্জনের দিকে চলে যেতে উৎসাহী করছে। যা শান্তিপ্রিয় ও উদারপন্থী সুন্নি সূফিবাদী মুসলমানদের উগ্রওহাবীবাদের দিকে নিয়ে যাবার এক মহাচক্রান্ত। এ চক্রান্ত রূখে দিতে এবং সুন্নিয়তের ঐতিহ্য রক্ষা করতে দেশের সকল দরবার-দরগাহ, আলিয়া মাদ্রাসা ও সচেতন জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মাঠে নামার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
কউমি সনদের অযৌক্তিক সরকারি স্বীকৃতি বাতিলের দাবি ও আলীয়া মাদ্রাসা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি সৈয়্যদ অছিয়র রহমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আহলে সুন্নাত সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রিয় প্রধান সমন্বয়ক আল্লামা এম এ মতিন। প্রধান বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রিয় সদস্য সচিব এড. মোছাহেব উদ্দীন বখতিয়ার আলকাদেরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান মুফাসসির আল্লামা এম এ মান্নান, পীরে তরীক্বত সৈয়্যদ মছিহুদ্দৌলা, ড. জালালুদ্দীন আল আজহারী, অধ্যক্ষ আল্লামা তৈয়্যব আলী, অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ ফরিদ উদ্দীন, পীরজাদা তাহসিন মোজাদ্দেদী, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, অধ্যক্ষ খাজা মোবারক আলী, মুহাদ্দিস ইউনুচ তৈয়্যবী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, নঈম উল ইসলাম, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা এনাম রেজা, মাওলানা সাঈদ কাজেমী, মাওলানা সোহেল আনসারী, মাওলানা তারেকুল ইসলাম। শফিউল আলম শফি ও মাওলানা ইকবাল হোসাইন আলকাদেরীর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ, মাওলানা আশরাফ হোসাইন, আলমগীর ইসলাম বঈদী, জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী, জসিম উদ্দিন, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, যুবনেতা মুহাম্মদ ইসমাইল, হাবিবুল মোস্তফা ছিদ্দিকী, মুহাম্মদ এনামুল হক, ছাত্রনেতা জিএম শাহাদাত হোসেন মানিক, ছাত্রনেতা এইচ এম শহীদুল্লাহ, নুরুল্লাহ রায়হান খান, মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, শাহাদাত তানভিন, আবদুল কাদের রুবেল, রিয়াজ হোসাইন, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ, দিদারুল ইসলাম কাদেরী, মারুফ রেজা, মফিজুর রহমান, শায়ের মাছুমুর রশিদ কাদেরী, মুহাম্মদ ইদ্রিচ, এইচ এম এনামুল হক, মিজানুর রহমান প্রমুখ। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব থেকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।