মামুন মিয়া বাজারের হ-য-ব-র-ল সিলেকশন কমিটি!

0
83

ব্যবসা নেই তবুও তিনি বাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজারের নির্বাচিত কমিটির নেতাকর্মী থেকে জোর করে দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে তুলে দিয়েছিল পছন্দের মানুষকে। সিলেকশন কমিটির মেয়াদ দিয়েছিল ১বছর। এ কমিটিরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৭ বছর আগে। মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ায় কেউ তাদের মেনে নিচ্ছে না। অকার্যকর কমিটি আখ্যা দিয়ে যে যার মত করে চলছে। দীর্ঘ বছর নির্বাচন না দেয়ায় ফুঁসে উঠেছে ব্যবসায়ী মহল। গনস্বাক্ষর নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্বারকলিপি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে বাজার কমিটির নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা আগলে রাখায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছে ব্যবসায়ী সমাজ। শক্তিশালী কমিটি না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ হরেক রকম অপরাধ। হিসাব নিকাশ না দিয়ে ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ায় বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের প্রতি অনাস্তা জানিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে কমিটির অন্যন্যা সদস্যরা। ফলে বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে অজানা আতংক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের আরকান সড়ক ও ভারুয়াখালী সড়ক নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ছোট্ট কয়েকটি দোকানপাট থেকে মামুন মিয়ার বাজার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতি বছর বাজারটি ইজারা হয় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকায়। তবু উন্নয়ন, একতা, ঐক্য শক্তিশালী কমিটি করে দিতে পারছে না প্রশাসন।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বাজারের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১০ সালে। ব্যবসায়ীদের গোপন ব্যালেটে সভাপতি নির্বাচিত হয় মুবিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হন কামরুজ্জামান। ১ বছর ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছিল তারা। এরই মধ্যে কমিটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তৎকালীন চেয়ারম্যানের। তাড়াহুড়া করে চেয়ারম্যান আবদুল করিমের অনুসারী দুই ব্যক্তি শফিকুর রহমানকে সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল নামের অপর এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের একটি পকেট কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় তাদের মেয়াদ দিয়েছিল ১ বছর। ইতিমধ্যেই এ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে ৭ বছরে পর্দাপন করেছে। অযোগ্য, অর্থ আতœসাৎ, দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারনে অন্য ৫ জনও সরে গেছে।
সাবেক সভাপতি মুবিনুর রহমান জানান, একটি স্বনামধন্য বাজার নির্বাচিত কমিটি ছাড়া চলতে পারে না। একটি অযোগ্য পকেট কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও তারা নির্বাচন না দিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে বেইমানী করেছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই তবু সে পদ আগলে রেখে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ আদায় করে যাচ্ছে।
ছুরুত আলম নামের অপর এক ব্যবসায়ী জানায়, দুই শতাধিক এর অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে নৈশ্য প্রহরীর নামে হাতিয়ে নিচ্ছে। দুইজন প্রহরীর মাসিক বেতন ১২ হাজার টাকা। উত্তোলন করা হয় মাসে আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা। বাদবাকি টাকা গুলো কোথায় যায় হিসাব নেই। কোনদিন মিটিং এর আয়োজনও করে না। ভ্ুঁয়া রেজুলেশন করে কয়েকটি মিটিং এর দিন দেখা হয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক অন্য এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারের শৃঙ্খলা না থাকায় নিরহ ব্যবসায়ীদের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন করা হচ্ছে। বর্তমান রশিদ নগর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার ছেনুয়ারা বেগম তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীদের গায়ে হাত তুলে। একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়ছে সেখানকার ২ শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিবাদ করলে নেমে আসে করুণ নির্যাতন, সহ্য করে ব্যবসা চালিয়ে আসছে ব্যবসায়ীরা।
মোহাম্মদ হোছাইন নামের এক দোকানদার বলেন, পুরাতন পেশা হিসাবে ছাড়তে পারছি না। না হয় ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতাম। বাজার কমিটির অযোগ্য নেতাদের এমন আচরণ আর সহ্য হচ্ছে না। স্থানীয় দেড়শ ব্যবসায়ী এক যোগে সাক্ষর করে নির্বাচনের দাবী তুলে একটি স্বারকলিপি প্রস্তুত করেছে।
সচেতন ব্যবসায়ীরা নিবার্চন দাবী করে বলেন, যতদিন নির্বাচন হবে না ততদিন হ-য-ব-র-ল অবস্থায় থাকবে। জানতে চাইলে বাজার কমিটির বর্তমান সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, একটি পক্ষ আমাদের অগ্রযাত্রা মেনে নিতে পারছে না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। নিজের মান সম্মানের দিকে চেয়ে জনস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। অভিযোগ গুলো সত্য নয় বলে তিনি দাবী করেন।
রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমান কমিটির স্বচ্ছটা রয়েছে, কোন ধরনের অন্যায় দেখছি না। কিছু ব্যবসায়ী তাদের কর্মকান্ড দেখে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচন দিবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বলেন পুর্বের কমিটির নেতারা সমস্ত হিসাব নিকাশ জমা দিলে অবশ্যই নির্বাচন দেয়া হবে।