মিরসরাইয়ে লোকালয় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পাখি

0
348

এক সময় পাখির কলকাকলীতে গ্রাম বাংলার মানুষের ঘুম ভাংলেও গ্রাম বাংলায় এখন আর আগের মত পাখির ডাক শোনা যায় পাখিনা। কালের আবর্তে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ধংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করা কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, ফ্যসকে, কুকিল, ডাউক, ক্যাসকেচি, বাবুই, মাছরাঙ্গা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাঁচাসহ আরো অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির মধুর ডাক। আগে রাতের ঘুম ভাঙ্গত পাখির কলতানে অথচ এখন যান্ত্রিক যুগে জাগতে হয় যানবাহন ও মাইকের শব্দে। রাতের প্রতিটি প্রহরে ডাকত পাখি কিন্তু এখন প্রহর জানার আর কোন উপায় নাই। বর্তমান প্রজন্ম চিনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনি কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস। এমনকি আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল সেটিও আজ বই অথবা ছবিতে দেখে পরিচিত হয় শিশু কিশোররা। কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উড়ন্ত এ পাখি। শোনেনি এ পাখির ডাক। মিরসরাইয়ে উত্তর ধূম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে ছাত্রী মিথী, সানজিদা, সুচি, রোমানাসহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞাস করা হলে তারা বলে দোয়েল পাখি কখনো উড়তে বা তার ডাক শোনেনি। তারা বইয়ের পাতায় অংকিত ছবি দেখে জাতীয় পাখি দোয়েল চিনেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাতপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীট পতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরা এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে দিনের পর দিন। এ কারণে দেশীয় পাখি কালের অবর্তমানে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালি গ্রামের ৭০ বছর বয়সের কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমরা আগে জমিতে ঔষধ দেই নাই। তখন দিনভর ফসলের মাঠে নাচানাচি করত হরেক রকমের পাখি। পাখির যন্ত্রনায় দিনভর মাঠে ফসল পহরা দিতে হত আবার আধাপাকা অবস্থায় ফসল ঘরে তুলতে হত। আজ সেসব পাখি আর দেখা যায় না। তাদের ডাকও শুনতে পাওয়া যায় না। পাখি শিকারের বিষয়ে একটি আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অনেকে অবলীলায় পাখি শিকার করছে। প্রকৃতি থেকে পাখি হারিয়ে যাওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।