মুকুটবিহীন সম্রাট কেজরিওয়াল

0
76

ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতিকে ঝাটা দিয়ে সাফ করার কাজে তিনি যে আদর্শকে সামনে রেখে লড়াই করছেন তাতে যুবসমাজ যে প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়েছে তা কিছুদিন আগেই স্পষ্ট হয়েছিল। কলকাতার বিখ্যাত ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ছাত্রদের অনেকে ছুটি নিয়ে দিল্লিতে নির্বাচনের প্রচারে আমআদমির পক্ষে নাম লিখিয়ে ছিলেন। আবার ঠিক তেমনি অক্সফোর্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান তরুণ ভারতীয়রা ছুটে এসেছিলেন দুর্নীতিমুক্ত ও সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শকে সমর্থন জানাতে। অনেকে আবার বিদেশে বড় অঙ্কের চাকরির আয়াস ছেড়ে চলে এসেছিলেন। সবাই রাজনীতিতে নবাগত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ওপর ভরসা রেখেছেন। যুবসমাজ উদ্বুদ্ধ হওয়াতেই দিল্লির বুকে রাজনীতিতে এক নতুন ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি করেছে আমআদমি পার্টি। প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটারের মন জয় করে অরবিন্দ দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষ এখন পরিবর্তনের জন্য উদগ্রীব। দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও তিনি যে চমক দেখিয়েছেন তা নিয়েই দেশে বিদেশে আলোচনা চলছে। দিল্লির বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮, অন্যান্য ২, আম আদমি ২৮, বিজেপি ৩২ আসন পেয়েছে। বিজেপি জিতলেও একটি নতুন পার্টি হিসেবে ২৮টি আসন পেয়ে আম আমদি চমক দেখিয়েছে। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, আমরা আমআদমি পার্টির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তারা যেভাবে আনকোড়া লোককে প্রার্থী করেছে, ভবিষ্যতে আমরাও তা-ই করতে চাই। আর অরবিন্দ বলেছেন, যারা তার দলের হয়ে জিতেছেন তারা সবাই আমআদমি। তার কথায়, সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে এসেছেন। কর্মীরা কেউ চাকরিতে ছুটি নিয়ে এসে কাজ করেছেন। কেউ চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন। একটা ইমানদার রাজনীতির সূচনা তিনি করেছেন বলে দাবি করেছেন অরবিন্দ। কথাটা তো আদ্যে মামুলি বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কিন্তু কে এই অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যিনি গভীর আত্মবিশ্বাসে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজধানীর রাজনীতিকে ঝুটি ধরে নাড়া দিয়েছেন? ১৯৮৯ সালের আইআইটি খড়গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হয়ে যোগ দিয়েছিলেন টাটাদের সংস্থায়। কিন্তু তিন বছরেই তিনি সেখানে হাঁফিয়ে ওঠন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দিয়ে ১৯৯৫ সালে যোগ দেন রেভিনিউ সার্ভিসে। কিন্তু পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তিনি। আর তাই ১৯৯৯ সালে পরিবর্তন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী মুকুটবিহীন সম্রাট কেজরিওয়ালসংগঠন তৈরি করে দিল্লিতে রেশনকার্ড, বিদ্যু প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের কাজ শুরু করেছিলেন। এক সময় তথ্যের অধিকার আন্দোলন কর্মী হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৬ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কারও পেয়ে যান তিনি। ওই বছরেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নেমে পড়েন সামাজিক আন্দোলনে। প্রবীণ গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারে যখন জনলোকপাল বিলের দাবিতে অনশন-আন্দোলন শুরু করেছিলেন তখন কেজরিওয়াল ওই ‘ইন্ডিয়া এগেন্সট করাপশন’ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন। জনলোকপাল নিয়ে তুমুল আলোড়ন বেশ কিছু দিন চলার পর এক সময়ে স্তিমিত হয়ে আসার পর এক দিন দেখা যায় আন্নার আপত্তি সত্ত্বেও কেজরিওয়াল স্থির করেছেন ভোটে লড়তেই হবে। তৈরি হলো আমআদমি পার্টি। মোটামুটি সেই সময় থেকেই নিয়মিত খবরে আসতে লাগলেন কেজরিওয়াল।
এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনশন আন্দোলন করছেন, তো এই নারীদের সুরক্ষার দাবিতে সুর চড়াচ্ছেন। আর এরপরই আমআদমি হয়ে ওঠার লক্ষ্য ঘোষণা করেন, বিজেপি, কংগ্রেস ও মুষ্টিমেয় কিছু দলের হাতে আমাদের দেশের রাজনীতি জাত, ধর্ম, ভ্রষ্টাচার, অপরাধ, ধনবল, বাহুবলের গোলাম হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাই জনতা সিদ্ধান্ত নেয় তাকেই এবার ভোটে লড়তে হবে। যা ভাবা সেই কাজ। সাফল্যটা পেয়েছেন তিনি হাতে নাতে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে পড়া শিক্ষিত যুব সমাজের মধ্যে আদর্শের যে উন্মাদনা কেজরিওয়াল তৈরি করেছেন, তা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন ট্রেন্ড। তবে দিল্লির শহুরে ভোটারদের বাইরে যে বিশাল ভোট, সেখানে কেজরিওয়াল কতটা দাগ কাটতে পারবেন সেটা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। তবে বাস্তবে কেজরিওয়ালের সামনে এখন অনেক বাধা আসবে। তাকে যেমন নানাভাবে আইনের জালে জড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে তার দলের অন্যদেরও তা করা হতে পারে।