মুক্তিযোদ্ধা সনদে নাম ও জম্ম তারিখ জালিয়াতির অভিযোগ

0
93

হাটহাজারীতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার জন্য এক ব্যক্তির আবেদন
বিপ্লব দে,হাটহাজারী সংবাদদাতা
হাটহাজারীতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার জন্য এক ব্যক্তি অভিনব কৌশল অবলম্বনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা তদন্ত করে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা মঞ্জুন না করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছে আটজন মুক্তিযোদ্ধা। আবেদনের অনুলিপি জেলা প্রশাসক,উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে প্রদান করা হয়েছে।
আবেদনের বিবরনে জানা যায় , ছিপাতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা ওলালী আহম্মদ পিতা-মৃত মো.মখলেসুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে। কথিত ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড ও পৈত্রিক সম্পত্তির খতিয়ানে তার নাম যথাক্রমে অলি আহম্মদ ও আলী আহম্মদ রয়েছে। ভোটার তালিকা অনুসারে তার জম্ম তারিখ ১৩/০৫/১৯৬৭ইং । তার ভোটার আইডিকার্ড নম্বর ১৫১৩১৯০২৯৬৩৭। তিনি অলি আহম্মদ নাম দিয়ে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ৬নং ছিপাতলী ইউনিয়ন পারিষদের নির্বাচনে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ৪নং ওর্য়াড থেকে ইউপি সদস্যও নির্বাচিত হন। তিনি গত ৩১/০৭/২০১১ইং তারিখে ছিপাতলী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জম্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহন করেন। এ সনদে তার ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বর ১৯৫৫১৫৪৩৭১১০০৭৭৯৯। জম্মনিবন্ধন সনদপত্রে তার জম্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯/০৬/১৯৫৫ইং। উক্ত জম্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র অনুসারে তিনি ২০১০ সালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক /উপজেলা ভাতা বিতরন সংক্রান্ত কমিটির বরাবরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির জন্য একটি আবেদন করেন। আবেদনের বিষয়টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কর্মকর্তারা অবহিত হয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ফরিদ আহমদকে জানান। তিনি বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে ২৪/১১/২০১০ইং তারিখে ভাতা প্রাপ্তির আবেদনটি স্থগিত করেন। এ যাবত আবেদনটি স্থগিত রয়েছৈ। সম্প্রতি উক্ত ব্যক্তি মুক্তিযোেদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির জন্য পুনরায় আবেদন করেন। আবেদনের বিষয় আবারাও অবহিত হয়ে তদন্তপূর্বক ভাতা প্রদান স্থগিত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিভাতা বিতরন কমিটির বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনকারীরা হলেন সর্বমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব তোফায়েল আহমদ তালুকদার,সামসুল আলম,সাহাবউদ্দিন,মাহবুব আলম,শাহ আলম,যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবদুর সাত্তার,আনোয়ারুল হক,নুরুল আমিন ও আবদুল গফুর।
সাবেক এমটি হাবিলদার মেজর ও এলাকার যুদ্দকালীন কমান্ডার আলহাজ্ব তোফায়েল আহমদ তালুকদার জানান,তিনি ৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। সে সময় গুমানমর্দ্দন,ছিপাতলী,নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সে সময় ওয়ালী আহম্মদ নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখিত ইউনিয়নে ছিল না। হঠাৎ করে এ নামের মুক্তিযোদ্ধা দেখে তারা হতবাক।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবদুর সাত্তার জানান,ভোটার তালিকা ও আইডি কার্ডে যে জম্মতারিখ লেখা রয়েছে সে হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স সাড়ে চারবছর হওয়ার কথা। হঠাৎ করে এ নামের মুক্তিযোদ্ধা দেখে তারা হতবাক হয়ে গেছে। এতে করে প্রকুত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি হতে পারে ও প্রকৃতমুক্তিযোদ্ধারা ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাছাড়া ছিপাতলী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এ ইউনিয়নে ১৯৯১ সালের বীরমুক্তিযোদ্ধাদের যে নাম ফলক ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিঞ্জু রায় চৌধুরী উম্মোচন করেছেন সেখানেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কথিত ব্যক্তির নাম নেই। এতে করে বুঝা যায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। আর যদি মুক্তিযোদ্ধা সনদ থেকেও থাকে তা হবে ভূয়া।
ভাতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী ওয়ালী আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন। তার ভোটার আইডি কার্ডে জম্মতারিখ ভুল উঠেছে। এটি সংশোধনের জন্য তিনি প্রক্রিয়া করছেন।
জম্মনিবন্ধন সনদ প্রদানকারী ৬নং ছিপাতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান,তার নাম ভুল হওয়ায় জম্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। এটাই তার প্রকৃত নাম ও জম্ম তারিখ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান পান্না জানান,মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যাদের নাম থাকবে বিধি মোতাবেক তারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলে তাকে ভাতা প্রদানের বিধান রয়েছে।