মেলায় অনিক শুভ’র পাঠক প্রিয় বই “বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজ”

0
167

তরুণ শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে এক জনপ্রিয় নাম হলো “অনিক শুভ”। সায়েন্স ফিকশন ও গল্প লিখতে বেশি পছন্দ করেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে উনার অষ্টম বই “আঙুর লতা ও হরিণ।“ তবে অমর একুশে বই মেলায় পাঠকপ্রিয়’র শীর্ষে রয়েছে “ভয়ংকর গিরগিটি ডাইনোসর” এবং বিজ্ঞানগল্প সমগ্র “বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজ”।

ভয়ংকর গিরগিটি ডাইনোসরঃ

ডাইনোসর হলো আদিকালের সরিসৃপজাতীয় প্রানি। সৃষ্টির বিবর্তন ধারায় ডাইনোসরদের আগমন ঘটেছিল ট্রায়াসিক কল্পের শেষ দিকে, আজ থেকে ২২.৫০ কোটি বছর আগে । ডাইনোসরদের অস্তিত্ব আজ আর নেই। তবুও আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা এখনও ভূ-পৃষ্ঠের বিশাল অংশ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিজ্ঞানীরা আজও বলেন, ডাইনোসররা চলে গেলেও এখনও এদের কোন না কোন বংশধর এদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।বিস্তারিত জানতে হলে পড়তে হবে অনিক শুভ’র “ভয়ংকর গিরগিটি ডাইনোসর ”। বইটির প্রচ্ছদ ও গ্রাফিক্স করেছেন আইমান রহমান। প্রকাশ করেছে শব্দশিল্প প্রকাশন।

বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজঃ
বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজ বইটিতে রয়েছে মোট আটটি বিজ্ঞান গল্প। যথাক্রমে, “আকাশের লাল-নীল”, “বোবায়”, “তিন বন্ধুর ছাগল এক্সপেরিমেন্ট”, “খুদার গল্প”, “দোয়েলের পরীক্ষা ভীতি”, “বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজ”, “লাশচুরি” এবং “ইপিলেপ্সি”।

১) আকাশের লাল-নীলঃ সারাদিনের ক্লাস শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরছে দুই ভাই-বোন। বাসাটা স্কুলের ঠিক পশ্চিম দিকে। তাই দু’জনে পশ্চিমের ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। কিন্তু আকাশে আর নেই সকালের সেই নীলাভ ছোঁয়া। তার স্থলাভিষ্কত হয়েছে অস্তমিত সূর্যের রক্তিম আভা। অথচ আকাশ সকালের মতই পরিষ্কার। সকালে হৃদয়গ্রাহী নীল আর সন্ধ্যায় কিছুটা যেন বিরক্তিকর লাল।

২) বোবায়ঃ মাঝরাতে হঠাৎ পাড়ার লোকের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। ছোট বোন টুনি এসে বলল, ‘ভাইয়া, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো?’ সবাইতো রহিম চাচার বাড়ির দিকে ছুটে ছুটে যাচ্ছে।
কেন? কী হয়েছে?
শুনেছি উনার ছেলে মিশুকে নাকি “বোবায়” ধরেছে।
কী বলিস! তাড়াতাড়ি চল।

৩) তিন বন্ধুর ছাগল এক্সপেরিমেন্টঃ শফিক আর পলাশ চুপ করে আছে একদম। হঠাত শফিক কিছু না বলেই মাঠের পাশে পরে থাকা একটা শক্ত কাগজ নিয়ে এসে বলল, “ এখন দেখব ছাগলে এই শক্ত কাগজ কেমনে খায়” । তিন বন্ধুর ছাগল এক্সপেরিমেন্টের আলাপ আলোচনাগুলো প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষণ করছিলেন এলাকার বড় ভাই রিফাত জাকির। শফিককে কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখে এবং সেই কাগজ ছাগলকে খেতে দিতে দেখে তিনি আর চুপ করে বসে রইলেন না। সোজা হাঁটা শুরু করলেন ওদের দিকে।
৪) টুনি। ক্লাস ফোরে পড়ে। অনেক মেধাবী। সব সময় অজানাকে জানার প্রতি আগ্রহ বেশী তার। কয়েকদিন ধরে ওর মাথার মধ্যে কিছু প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। এই যেমন- আমাদের খিদে লাগে কেন? খিদে পেলে আমরা কিভাবে বলতে পারি? আবার খাবার খেলে খিদে চলে যায় কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজে নিজে অনেক ভাবল কিন্তু উত্তর মিলাতে পারল না। এমন সময় বাবা ওর রুমে প্রবেশ করলো।

৫) দোয়েলের পরীক্ষা ভীতিঃ বোনপাখি দোয়েল ইদানিং খুব বেশি দুষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকমত পড়াশুনা করেনা। সারাদিন খেলাধুলা করে আর টিভিতে নিনজা হাতুড়ি দেখে। এই নিয়ে মায়ের বকুনিও কম খায়না। বার্ষিক পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। হঠাৎ পরীক্ষার আগের রাতে দোয়েলের বুক ব্যাথা, বুক ধড়ফড় ও খিঁচুনি শুরু হল।

৬) বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজঃ শুধু টিকটিকি নয়, এই রকম আরো কিছু প্রাণীর লেজের অংশে ‘প্যারেনকাইয়া’ নামে এক জাতীয় কোষের অস্তিত্ব থাকে। এ কোষ গুলো সুষংঘবদ্ধ ভাবে থাকে না। এরা পরস্পরের সাথে আলতোভাবে লেগে থাকে। এছাড়া ও থাকে এক পুনর্ঘটন কোষ। এরা প্যারেনকাইয়া’র ফাঁক দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করে। আর তাই টিকটিকির লেজ খসে গেলে ওই পুনর্ঘটন কোষ থাকায় আবার নতুন অঙ্গ গজিয়ে ওঠে। রুদ্র ভাবছে অন্যভাবে। লেজের ওপর শত্রুর আঘাত লাগলে লেজ খসে পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু টিকটিকি কেন লেজ নিজে নিজে খসায়? এ নিয়ে শুরু হল রুদ্রের এক্সপেরিমেন্ট। যখনই আশে পাশে টিকটিকি দেখে, তখনই সেটাকে ধরতে চায়। কিন্তু প্রতিবারই টিকটিকি চোখ ফাঁকি দিয়ে লেজ খসিয়ে পালিয়ে যায়। মাঝে মাঝে স্কুল ও বাসায় প্রায় লেজ ছাড়া অনেক টিকটিকিই দেখা যায়। যার একমাত্র কারণ হল রুদ্রের এক্সপেরিমেন্ট।

৭) লাশচুরিঃ আমাদের মনে হয় প্রেত সাধনার জন্য বজ্রপড়া কঙ্কাল লাগবে। হয়তো সে জন্য এখনো অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। এক অদৃশ্য কণ্ঠস্বর উত্তরে বলে “ঠিক বলেছিস। বজ্রপড়া মানুষের শরীরে যে প্রাকৃতিক ম্যাগনেট সৃষ্টি হয়, সেই ম্যাগনেট বডি দিয়ে প্রেত সাধনা চালিয়ে যাব। আমাদের লক্ষে পৌঁছে যাব। হয়ে যাব পৃথিবীর শক্তিশালী এক কর্ণধর।

৮) ইপিলেপ্সিঃ একদিন ম্যাডাম বিজ্ঞান পড়াচ্ছিলেন ক্লাসে। আমি আর দিপু সব সময়ের মত আজও পাশাপাশি বসেছি। ম্যাডাম খেয়াল করলেন দিপু অন্যমনস্ক হয়ে আছে। পড়ায় মন নেই। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখের পাতা নড়ছেই না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। ফিসফিস করে ওকে বললাম, ‘দিপু, তোর কাব্যিক ভাব এইবার বন্ধ কর। ম্যাডাম তোর দিকে আসছে।’বলেই যাচ্ছি … কিন্তু ওর কাব্যিক দৃষ্টি একটুর জন্যও দৃষ্টি ভ্রম হল না। ম্যাডাম কাছে এসে যেই টেবিলে জোরে আঘাত করে বললেন, ‘দিপু তোর মনোযোগ কোন দিকে রে?’ সাথে সাথে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল দিপু।

বিজ্ঞানী রুদ্র ও টিকটিকির লেজ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সোহাগ পারভেজ। অলংকরণ করেছেন ফারজানা পায়েল। প্রকাশ করেছেন বলাকা প্রকাশন।